হলদিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, কর্মচারীরা অফিস করেন নিজেদের ইচ্ছামতো

image_pdfimage_print

মইনুল আবেদীন খান, বরগুনা প্রতিনিধিঃ
বরগুনার আমতলীর উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে চলছে অনিয়মের রাজত্ব। সেখানে মানা হচ্ছে না সরকারি কোনো নীতিমালা, অফিস সময়ে টানানো হয় না জাতীয় পতাকা।কর্মচারীরা অফিস করছেন নিজেদের ইচ্ছামতো।

স্থানীয়দের অভিযোগ, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে সরকার ঘোষিত নীতিমালা ও নিয়মকানুন কোনোটাই মানা হয় না। কর্মরতরা নিজেদের ইচ্ছায় অফিসে আসা-যাওয়া করেন। বেলা একটার পর আর কাউকে পাওয়া যায় না। রোগী কে এলো, কে গেলো এসব বিষয়ে তাদের কোনো গুরুত্ব নেই। রোগী এলে অনেক সময় বসিয়ে রেখে কাউকে ওষুধ দেওয়া হয় আবার কাউকে ওষুধ না থাকার অজুহাত দেখিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অফিস সময় নির্ধারণ করলেও সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) ও ফ্যামিলি কল্যাণ পরিদর্শক (এফডব্লিউভি) অফিসে আসেন ও বাসায় যান নিজেদের ইচ্ছে মত। ওই কেন্দ্রেই তাদের বাস করার কথা থাকলেও তারা থাকেন অন্যত্র।

রবিবার বেলা ১২টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অফিস তালা বন্ধ ও অফিস প্রাঙ্গণে ওড়ানো হয়নি জাতীয় পতাকা। কর্মকর্তাদের বাস ভবনে পরিবার নিয়ে থাকছেন করছেন ইউসুফ নামের এক দিনমজুর। তিনি এখানে কিভাবে থাকছেন জানতে চাইলে বলেন, অনুজ বাবু আমাকে এখানে থাকতে দিয়েছেন। আর নৈশ প্রহরী আসেন না তাই রাতেও দেখাশুনা করতে বলেছেন। কর্মকর্তারা কোথায় জানতে চাইলে ইউসুফ বলেন, স্যাকমো অনুজ স্যারে আজ আয় নায় আর বৃস্টি ম্যাডামে বাসায় চইলা গেছে। আর নৈশ প্রহরী মাঝে মাঝে অফিসে আয়।

স্যাকমো আনুজ রায়কে ফোন দিলে তিনি বলেন, আমি ছুটিতে, মাকে ডাক্তার দেখানোর জন্যে পটুয়াখালী এসেছি।

ফ্যামিলি কল্যাণ পরিদর্শক (এফডব্লিউভি) বৃস্টিকে ফোন করলে বলেন, আমি এক প্রসূতি রোগীকে দেখতে তার বাড়ি এসেছিলাম এখন ক্লিনিকে আসছি। ফোন দেবার আধা ঘন্টা পরে ফ্যামিলি কল্যাণ পরিদর্শক (এফডব্লিউভি) বৃষ্টি ক্লিনিকে এসে ইউসুফের কাছ থেকে ক্লিনিকের চাবি নিয়ে তালা খোলেন। তার কাছে তার অফিস বন্ধ করে যাবার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি উল্টো ভবন ভাঙ্গা সেবা দেয়ার মত না এসব কথা বলে কথা এরিয়ে যান। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের সেবার রেজিস্ট্রার খাতা দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন।

সুমন নামের এক স্কুল ছাত্র জানায়, ১১টার দিকে অফিসে আসেন আবার কিছুক্ষণ পরে চলে যান। আমরা অনেক সময় স্কুলে যেতে পথে এ কেন্দ্রে ঢুকে ওষুধ চাইলে লোক না থাকায় আয়া আমাদের দিতে পারেন না।

এ বিষয়টি জানাতে আমতলী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো: আলমগীর হোসাাইন বলেন, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) ও ফ্যামিলি কল্যাণ পরিদর্শক (এফডব্লিউভি) স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থেকে সেবা দেয়ার কথা। চাকমুর ছুটিতে আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, তাদের ছুটি দেবার দায়িত্ব মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচ-এফপি) এর।

মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচ-এফপি) বুলবুল আহমেদ ফোনে জানান, স্যাকমো অনুজ রায় তার কাছে থেকে লিখিত কোন ছুটির আবেদন করেন নি। তবে শুনেছি আমার অফিস সহকারীর কাছে মৌখিকভাবে জানিয়ে গিয়েছেন যেটা আসলে ঠিক করেন নি। আমি তাকে কারন দর্শানোর নোটিশ দিবো।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাহমুদুল হক আজাদ জানান, হলদিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের অভিযোগের বিষয়ে আমতলী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কে এ বিষয়ে স্যাকমোর বিরুদ্ধে ব্যবস্তা গ্রহন করতে বলেছি। আশা করছি এলাকাবাসী এরপর থেকে সঠিক স্বাস্থ্য সেবা পাবেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

bn_BDবাংলা