নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ওই অঞ্চলে ভোট নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা ৯ ঘণ্টা বুথে অপেক্ষা করেন। কিন্তু কোনো স্থানীয় মানুষ ভোট দিতে আসেননি।
এই পরিস্থিতিকে সংকটজনক বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন। কারণ, এই ঘটনা স্মরণকালের মধ্যে ঘটেনি। নির্বাচন কমিশনের সূত্র বলছে, এমন পরিস্থিতির জন্য তারা প্রস্তুতও ছিল না।
নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এমন কিছু একটা ঘটতে পারে, এ ধরনের কোনো তথ্য প্রশাসনিক সূত্রে আমাদের আগে জানানো হয়নি। তারা জানালে আমরা বিষয়টি নিয়ে অন্যভাবে ভাবতাম, প্রচার–প্রচারণা চালাতাম বা ব্যবস্থা নিতাম।’
মাওবাদী–অধ্যুষিত মধ্য ভারতের বস্তার ডিভিশনেও গতকাল প্রথম ধাপের নির্বাচন ছিল। সেখানে ৬৪ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। নাগাল্যান্ডে ভোট পড়েছে ৫৬ শতাংশ।
নাগাল্যান্ডে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের মুখ্য কর্মকর্তা আর ভায়াসান গতকালই একটি শোকজ নোটিশ পাঠিয়ে ইএনপিওর কাছে জানতে চেয়েছেন, ভারতীয় দণ্ডবিধির নির্দিষ্ট ধারায় নির্বাচন ব্যাহত করার জন্য কেন ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। এই নোটিশের উত্তরও ইএনপিও নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে আজ শনিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ এক বিবৃতিতে ইএনপিও জানিয়েছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য যে ধর্মঘটের ডাক তারা দিয়েছিল, তা তুলে নেওয়া হলো।
কেন ভোট দিলেন না চার লাখ ভোটার
নাগাল্যান্ডের বিধানসভায় যে সরকার রয়েছে, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সেই সরকারের প্রধান শরিক দল।
ইএনপিও এক দশকের বেশি সময় ধরে নাগাল্যান্ডের ছয় অনুন্নত পূর্বাঞ্চলীয় জেলা নিয়ে একটি ভিন্ন প্রশাসনিক অঞ্চল ‘ফ্রন্টিয়ার নাগাল্যান্ড টেরিটরি’ (এফএনটি) গঠনের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। কার্যত এর অর্থ একটি ভিন্ন রাজ্য। ইএনপিও ওই অঞ্চলের সাতটি আদিবাসী সংগঠনের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত একটি সার্বিক সংগঠন।
নাগাল্যান্ডের এই সাত আদিবাসী গোষ্ঠী হলো কনিয়াক, চাং, ইমখিয়াং, শ্যাংট্যম, ফোম, খিয়ামনিউনগান ও টিখির। এই ৬ জেলার সাত আদিবাসী গোষ্ঠী নাগাল্যান্ডের ৬০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ২০টিকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে।
ইএনপিও দীর্ঘ এক দশক ধরে অনুন্নত পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোর জন্য আলাদা প্রশাসন ও সম্ভবত রাজ্যের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। সম্প্রতি তাদের তৎপরতা আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। নাগাল্যান্ডের অন্য অঞ্চলের বিশেষত রাজধানী কোহিমাভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন এবং ছাত্রসংগঠনের নেতারা এই শক্তিবৃদ্ধির একটি ব্যাখ্যা প্রথম আলোকে অতীতে দিয়েছেন। এই ছাত্রসংগঠনের কিছু কিছু নেতা বর্তমানে নাগাল্যান্ডের বাইরে রয়েছেন। কারণ, তাঁদের বিরুদ্ধে নানা মামলা রাজ্যে চলছে।
এসব ছাত্রসংগঠনের এক নেতা সম্প্রতি মুম্বাই থেকে টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, নাগাল্যান্ড সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। কারণ, নাগাল্যান্ডের প্রধান বিচ্ছিন্নতাবাদী ও রাজনৈতিক শক্তি এনএসসিএনআইএম (ন্যাশনালিস্ট সোসালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড-আইজ্যাক মুইভা) ভারত সরকারের সঙ্গে ‘ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট’ সই করেছে। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে ভারত সরকার দেখতে পাচ্ছে, সেই সমস্যার সমাধান হয়নি। কারণ, এনএসসিএনের প্রধান দাবি তাদের পৃথক সংবিধান, পৃথক পতাকা ইত্যাদি থেকে সরে আসেনি।
এনএসসিএনআইএম এসব সমস্যার সমাধান তো দূরের কথা, গত ১০ বছরে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এটা বুঝতে পেরে ঘুমিয়ে থাকা ইএনপিওকে জাগিয়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত সরকার। ইএনপিওকে চাঙা করে এটা বোঝানোর চেষ্টা করে, নাগারা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজিত এবং এনএসপিএন যে দাবি তুলেছে, গোটা নাগাল্যান্ড সেই দাবিতে মোটেই সংঘবদ্ধ নয়। ফলে নাগাল্যান্ডের পৃথক পতাকা বা সংবিধান দেওয়া যাবে না। এখন ইএনপিও বুঝতে পেরেছে, তারা যথেষ্ট শক্তিশালী এবং মাথা তুলেছে।
ইএনপিওর এই শক্তি বৃদ্ধির কারণেই গতকাল নাগাল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলীয় ছয় জেলায় কেউই ভোট দিতে যাননি। বিপদ বুঝে ভারত সরকারেরই সংস্থা জাতীয় নির্বাচন কমিশন এখন ইএনপিওকে শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছে।