লক্ষ্মীপুর:
বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার কয়েক হাজার পরিবারকে নিঃস্ব করেছে রাক্ষুসে এ নদী। গিলেছে বহু সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। অব্যাহত ভাঙনে উপজেলার তিন ভাগের একভাগ এখন নদী গর্ভে।
গত দেড় বছরে উপজেলার এক কিলোমিটার তীর রক্ষা বাঁধে ধস নেমেছে অন্তত আট বার। এ জনপদের মানুষ এখন নদী ভাঙন আতঙ্কে দিশেহারা। ভাঙন রোধে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই এখানে আরও আট কিলোমিটার বাঁধ জরুরি।
ভয়াবহ ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে কমলনগরের বাসিন্দারা মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ ও সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়েছেন। দাবির মুখে গত বছর এক কিলোমিটার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। মাত্র এক কিলোমিটার বাঁধ কমলনগরের যথেষ্ট নয়।
কমলনগরের নদী তীর রক্ষা বাঁধের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ হওয়ার কথা থাকলেও তা আজও আলোর মুখ দেখেনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হলে যেটুকু বাঁধ নির্মাণ হয়েছে তাও নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে মারাত্মক হুমকিতে পড়বে উপজেলা সদরসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন।
সরেজমিনে মাতাব্বরহাট তীর রক্ষা বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নির্ধারিত এক কিলোমিটার বাঁধ প্রায় বিধ্বস্ত। গত দেড় বছরে ওই বাঁধে অন্তত আট বার ধস নামে। আগামী বর্ষা মৌসুমে এ বাঁধটিকে নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার ও দুই পাশে আরও বাঁধ নির্মাণ করা না হলে কমলনগরে জন্য মহাবিপদ নেমে আসবে। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন জরুরি ভিত্তিতে আরও তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ।
স্থানীয়রা বলেছে, গত বর্ষায় এক কিলোমিটার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে মাতাব্বরহাট বাজারসহ আশপাশের বেশ কিছু এলাকা রক্ষা পেয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ না হওয়ায় হুমকির মুখেও বাঁধটি। আগামী বর্ষার আগে তীর রক্ষা বাঁধের সংস্কার ও আরও আট কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ জরুরি।ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজন বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মেঘনার ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন প্রার্থীরা। এখন নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের কাছে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চায় এলাকাবাসী।
কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত সাইফুদ্দিন আজম বলেন, মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে কমলনগরে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের দিক নির্দেশনা থাকলেও কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে এখনও কাজ শুরু হয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ না নেওয়া হলে নদী গর্বে বিলীন হয়ে যাবে কমলনগর।
একাদশ জাতীয় সংসদের মহাজোট থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরের দিন হাজিরহাট বাজারে নেতা কর্মীদের সাথে দেখা করে পথসভায় নদী ভাঙনের কাজ রোধ হবে বলে আশ্বাস দেন।
এর আগে ২০১৪ সালে মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের জন্য ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। বরাদ্দ টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটার, রামগতির আলেকজান্ডারে সাড়ে তিন কিলোমিটার ও রামগতিরহাট মাছঘাট এলাকায় এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ হওয়ার কথা। ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন আলেকজান্ডার এলাকায় ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে সাড়ে তিন কিলোমিটার সফলভাবে বাস্তবায়ন করে।
এদিকে ওই বরাদ্দের ৪৮ কোটি টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটারের কাজ পায় নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। অর্থ বরাদ্দের দুই বছর পর ২০১৬ সালের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংকে দিয়ে কাজ শুরু করে। ওই বছর নিম্নমানের বালু ও জিও ব্যাগ দিয়ে কাজ শুরু করায় স্থানীয়দের চাপের মুখে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অনিয়মের প্রতিবাদে ও যথাযথভাবে কাজ করার দাবিতে ওই সময় মানববন্ধন করে স্থানীয় এলাকাবাসী। পরবর্তীতে অনিয়মের মধ্য দিয়ে এক কিলোমিটার কাজ করা হলেও দেড় বছরে আট বার ধস নামে ওই বাঁধে।
২০১৭ সালের ১৪ মার্চ লক্ষ্মীপুরের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রামগতি-কমলগর নদীর তীররক্ষা বাঁধের উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের আশ্বাস দেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন রোধে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হবে এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।