মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা ও শেয়ারের দাম কমার ‘আতঙ্কে’ বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) পুঁজিবাজারে ছিল শেয়ার বিক্রির হিড়িক। এ চাপে দেশের উভয় দরপতন হয়েছে পুজিবাজারে। কমেছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম, সূচক ও লেনদেন। ফলে একদিনেই বিনিয়োগকারীদের পুঁজি উধাও হয়েছে ১ হাজার ৬১৫ কোটি ১৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবস শেয়ার বিক্রির চাপ এতটাই বেশি ছিল যে, দেড় শতাধিক কোম্পানির বিক্রেতা ছিল, কিন্তু ক্রেতা ছিল না।
৩৭১টি কোম্পানির মধ্যে দাম কমেছে ১৫৯টির শেয়ারের দাম। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক কমেছে ৪৫ পয়েন্ট। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১৩০ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি লেনদেন কমেছে হাজার কোটি টাকার বেশি।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, বুধবার ১৫৫টি কোম্পানির শেয়ারে ছিল ফ্লোর প্রাইস। ফলে শেয়ার বিক্রি করা যায়নি। তাতে লেনদেনও কমেছে।
বাজারে সার্বিক অবস্থা নিয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের ভয় ও আতঙ্ক রয়েছে। এ আতঙ্কে একটি গ্রুপ শেয়ার বিক্রি, আরেকটি গ্রুপ প্রফিট টেকিং করেছে। এ দুই কারণে আজ দরপতন হয়েছে।
তিনি বলেন, আজকের পতন নরমালি হয়েছে। তবে ভয়ের বিষয় হচ্ছে, বাজার কয়েকটি আইটেমের ওপর নির্ভর করে চলছে। এসব আইটেম বাড়লে ইনডেক্স ও টার্নওভার দুটোই বাড়ছে। আবার কমলে বাজারও নেগেটিভ হচ্ছে। ডিএসইর অনুযায়ী, বুধবার বাজারে ২৬ কোটি ৯৪ লাখ ৬৪ হাজার ৬৪টি শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যার মূল্য ১ হাজার ৮০৮ কোটি ১৯ লাখ ১২ হাজার টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কমেছে হাজার কোটি টাকার বেশি।
এদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৭১টি কোম্পানির শেয়ার। এর মধ্যে ৫৮টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ১৫৯ টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দাম। লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৫ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৫৫১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। প্রধান সূচকের পাশাপাশি ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ১২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪৩৬ পয়েন্টে এবং ডিএস-৩০ সূচক ২৬ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৩৭৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
এদিন বেক্সিমকো লিমিটেডকে টপকে লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস। দ্বিতীয় স্থানে নেমেছে বেক্সিমকো। লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। এ ছাড়াও যথাক্রমে লেনদেনের শীর্ষে ছিল- জেএমআই হসপিটাল, শাহজিবাজার পাওয়ার, লাফার্জহোলসিম, ওরিয়ন ইনফিউশন, একমি ল্যাবরেটরিজ, বসুন্ধরা পেপারস মিলস ও শাইনপুকর সিরামিক লিমিটেড।
দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৩০ পয়েন্ট কমে ১৯ হাজার ৩১৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ বাজারে ২৫৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ১০৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১০২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১২০ কোটি ৬৭ লাখ ৪৬ হাজার ১৭৭ টাকার শেয়ার। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৯ কোটি ৫০ লাখ ৫৬ হাজার ২৪৭ টাকার শেয়ার।