অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তনই জাতীয়করন রুখে দেওয়ার প্রধান হাতিয়ার

image_pdfimage_print

জাতীয়করন দেশের সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান আকুতি।এই আকাংখিত লালিত স্বপ্নকে বাস্তবায়নে প্রায় সকল শিক্ষক সংগঠনই একমত।কারন জাতীয়করন হলে একই মাধ্যমিক বিদ্যালয়,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ুয়া একই মানের দুজন শিক্ষকের(এমপিওভুক্ত ও সরকারি) বেতন -ভাতা, আর্থিক সুবিধা ও সামাজিক সন্মান একই সারিতে আসবে।সাথে সাথে প্রাইমারি স্কুলের পিয়নের থেকে ও যেসব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের বেতন কম হওয়াতে মাধ্যমিক শিক্ষক যে অপমান বোধ করত , তার ও সুরাহা হবে।(সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমান হারে) অবসর পরবর্তী আরামে কিছুদিন কাটানো কিংবা সারা জীবনে থাকার ঠাই করতে না পারা মানুষগুলো একটা আশ্রয় নির্মান করতে পারত।কিংবা এক সাথে হজ্জ্বের ইচ্ছা করা দুজন মানুষ হজ্জ্ব ও করতে পারত।কিন্তু তার কোনটাই বাস্তবে দেখা যায়না।কারন সরকারি শিক্ষক প্রতি মাসের ১ তারিখে সময় মত বেতন পান,উৎসবে ১০০% বোনাস পান,বাড়ি করার ঋন পান,অবসরে গেলে সামান্য কিংবা টাকা জমা না দিয়েও অবসরের প্রথম বছরেই চাকরি জীবনের শেষ মাসের বেসিকের সমান ১০০ মাসের অবসর ভাতা পান।অথচ একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক উপরিউক্ত সুবিধার ধারে কাছে ও থাকেন না।এমনকি সারা জীবন নিজের ৬% করে টাকা জমা দেওয়ার পরে ও কমপক্ষে অবসরের ৭/৮ বছর পর ও নিজের জমানো টাকা উঠাতে জালিমের পিছনে লাইন ধরতে বাধ্য হন।সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকের এই সমস্ত বৈষম্যর ফলেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা জাতীয়করন মুখী। তদুপরি সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষকের অল্প বেতন থেকে ৬% অর্থ কেটে নেওয়ার পর কত টাকা জমা হল তার হিসেব না দেওয়া,কত% হারে লাভ দিবে তার সঠিক তথ্য না পৌছনো,আমার জমাকৃত টাকা অবসরের সময় আমায় দেরি করে দেওয়া কিংবা আমার মৃত্যর আগে না দেওয়া প্রভৃতি কারনেই শিক্ষকরা জাতীয়করন মুখী। অন্যদিকে অবসর কল্যান ট্রাস্টের এক কপি হিসেব সংগ্রহ করে জানলাম ৬% জমা দেওয়া শিক্ষক যারা ২০১৮ তে অবসরে গিয়েছেন তারা ক• অধ্যক্ষ ৩০ বছরে অবসর+ কল্যানে জমা দিয়েছেন ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অবসরে গেলে পাবেন ৪৬লাখ টাকা।এবার যদি হিসেব দেখি বর্তমান বাজারে জনতা,অগ্রনী,সোনালী সহ সব ব্যাংক প্রতি লাখে কত লাভ দেন, দেখা যায় প্রতি লাখে প্রতি মাসে কমপক্ষে এক হাজার তাহলে ঐ ১০ লাখ ৮০ হাজারে পেতেন চক্রবৃদ্ধি ছাড়া ৫০ লাখ,চক্রবৃদ্ধি সহ ৫৫ লাখ।তাহলে অবসর – কল্যান ট্রাস্টে জমা দিলে লস ৯ লাখ।( এটি ৬% হারে) ।তাহলে ১০% কর্তনে এই হারে হিসেব করলে অধ্যক্ষ পদে পাওনা হবে ৮২ লাখ।এমতাবস্থায় অবসর কল্যান ট্রাস্ট ৬% এর মত সুবিধা বহাল রেখে বাড়তি সুবিধা ঘোষনা না করে ১০% কর্তন করে শিক্ষকদেরকে বেকুব বানানোর চিন্তা নিতান্তই পাগলামি বৈই আর কিছুই নয়। প্রভাষক পদে ৬% হারে জমা হবে ৪লাখ ৯৬ হাজার ৮০০।পাবেন ২০লাখ ৯২ হাজার ৮০০।ব্যাংকে থাকলে পেত চক্রবৃদ্ধি ছাড়া ২৩ লাখ।চক্রবৃদ্ধি সহ ২৫ লাখ।লস ৪ লাখ ৮ হাজার।১০% কর্তনে প্রভাষক পদে পাওয়ার কথা ব্যাংক থেকে ৩৮ লাখ।তাহলে সুবিধা ঘোষনা না করে ১০% কর্তন অযৌক্তিক।সহকারি শিক্ষক বেসিক ১৬০০০ হলে ৬% হারে জমা হবে প্রায় ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬০০।পাবেন ১৪ লাখ ৫৬ হাজার। ব্যাংকে রাখলে পাওয়া যেত চক্রবৃদ্ধি ছাড়া ১৬লাখ ১০ হাজার ,চক্রবৃদ্ধি সহ ১৮ লাখ।লস ৪ লাখ ৪৪ হাজার।সহকারি শিক্ষক পদে ১০% কর্তনে পাওয়ার কথা ২৪ লাখ।বাড়তি সুবিধা ঘোষনা করা ছাড়া ১০% কর্তন প্রকাশ্য জুলুম। একই ভাবে উপাধ্যক্ষ,প্রধান শিক্ষক,সহকারি অধ্যাপক,সিনিয়র প্রভাষক পদে ও একই দূর্গতি।এমতাবস্থায় ১০% কর্তন করে একদিকে শিক্ষকদের প্রতি জুলুম হচ্ছে অন্যদিকে জাতীয়করন আন্দোলন বাধা গ্রস্ত হবে।১০% কর্তন বাস্তবায়ন হলে সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন বৈষম্যে চরমে উঠবে।শিক্ষকরা যেখানে ১০০ ভাগ বেতন ই পাবেন না,বরং ১০ মাসে ১ মাসের বেতনই থাকবেনা সেখানে জাতীয়করন আন্দোলন বাধাগ্রস্ত হবে চরমভাবে। তাই ১০% কর্তন বাতিল করতে হবে, সরকারিদের ন্যায় অবসর – কল্যানে কোন অর্থ জমা না নিয়েই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবসরের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।তদুপরি ৬% কর্তনে যদি অবসর ভাতা, আগে চাকরি জীবনের শেষ মাসের বেতন হিসেবে ১০০ মাসের বেতন হয় তাহলে বাড়তি ৪% হিসেবে আর ও ৭৫ মাসের মোট ১০০+ ৭৫= ১৭৫ মাসের হওয়ার কথা।তাহলে ৭৫ মাসের বাড়তি অবসর ভাতা সুবিধা ঘোষনা না করে ১০% কর্তন নিতান্তই অযৌক্তিক।আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে,যারা ৬% জমা দিয়েছেন এবং ২০১৮ সালের মধ্যই অবসর নিয়েছেন তাদের অবসর ভাতা মিটাতে বর্তমানের শিক্ষকদের বাড়তি ৪% চাঁদা দেওয়া লাগে তাহলে ২০২৮ সালে যিনি অবসর নিবেন তার সমস্যা সমাধানে আরো ৪% তথা ১৪ % চাঁদা দেওয়া লাগবেনা?আর এভাবে চলতে থাকলে চাঁদার পরিমান ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে।এক সময় জাতীয়করন অান্দোলন সম্পুর্ন বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়বে।

ফিরোজ আলম প্রভাষক ও বিভাগীয় প্রধান,আয়েশা (রা:) মহিলা কামিল (অনার্স,এমএ) মাদ্রাসা,সদর,লক্ষীপুর। ও সাধারন সম্পাদক বিএমজিটিএ লক্ষীপুর জেলা শাখা।

Related Posts

en_USEnglish