লক্ষ্মীপুর :
৪ বছর ধরে লক্ষ্মীপুর জেলা যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ জুয়েলের (৩৭) অপেক্ষায় রয়েছেন পরিবার। ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে তার খোঁজ নেই।
তিনি আদৌ জীবিত না মৃত নিশ্চিত নয় পরিবার। এমন বাস্তবতায় মৃত হলেও জুয়েলের মরদেহটি ফিরে পেতে চায় পরিবারের সদস্যরা। যেন তার শেষ চিহ্নটুকু স্মৃতি হিসেবে আগলে রাখতে পারে।
পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ চলাকালে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবুর পায়ে গুলি করে আটক করা হয়।
এর জের ধরে লক্ষ্মীপুরের চক বাজারে দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে র্যাব-১১ এর সদস্যরা। এ সময় যুবদল নেতা ইকবাল মাহমুদ জুয়েল গুলিবিদ্ধ হন।
পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে র্যাব সদস্যরা তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। ওই সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান (৪৫), শিবিরকর্মী শিহাব উদ্দিন (১৫) ও যুবদলকর্মী সুমন (৩৫) নিহত এবং কয়েকজন নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হন।
একপর্যায়ে জেলা পুলিশ লাইনস এলাকায় সড়কে র্যাব সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। তখন ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে গোলাবারুদ নিয়ে অতিরিক্ত র্যাব এসে অবরুদ্ধদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৪ বছর ধরে জুয়েলের পথ চেয়ে আছেন স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, তার কলেজপড়ুয়া মেয়ে তাছিয়া মাহমুদ নাহাদি, স্কুলপড়ুয়া তাছিয়া মাহমুদ তাহা ও ছেলে মোতাহের বিন মাহমুদ লাবিব। সন্তানদের বিশ্বাস, একদিন বাবা ফিরবেন। আর স্বামীর ফেরার পথ চেয়ে কাঁদছেন স্ত্রী।
এদিকে, ১২ ডিসেম্বর নিহত এবং আহত নেতা-কর্মীদের স্মরণে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সেখানে দলের কেন্দ্রীয়, জেলা ও সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।
জুয়েলের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, মানুষ মারা গেলে স্মৃতি হয়ে থাকে কবর। কিন্তু আমার স্বামীর সেই কবরও নেই। এ নিয়ে সন্তানদেরকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে লুকিয়ে কাঁদতে হয়। এমন অভাগা মা আমি সন্তানদের সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা আমার নেই।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবু বলেন, এটি একটি কালো অধ্যায়। অন্যায়ভাবে সেদিন আমার পায়ে গুলি করা হয়েছে। উল্টো এখন র্যাবের দায়ের করা মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। র্যাব জুয়েলকে হত্যার পর লাশ তুলে নিয়েছে। এখনও তার পরিবার পরিবার অপেক্ষায় আছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের সাবেক এমপি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ন্যাক্কারজনকভাবে আমাদের নেতা-কর্মীদের গুলি করে হত্যা ও পঙ্গু করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার এ ঘটনার তদন্ত এবং বিচারও করবে না। বিএনপি ক্ষমতা আসলে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করা হবে।