আজ আত্মবিশ্বাসী মেসি

কণ্ঠটাই শোনা যায় কেবল। চেহারা দেখা যায় না ঠিকঠাক।

তবুও ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে বেশ। কেন? ‘জানি না ফাইনালে কী হবে তবে এটুকু বলতে পারি আপনি সবাইকে আনন্দিত করতে পেরেছেন…প্রভাবও রেখেছেন জীবনে’ বা এমন কিছু লাইনের জন্য। এতক্ষণে টের পাওয়ার কথা নিশ্চয়ই- বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের পর লিওনেল মেসিকে কথাগুলো বলেছিলেন এক আর্জেন্টাইন সাংবাদিক।
দায়িত্ব ভুলে তিনি ক্ষণিকের জন্য হয়ে গিয়েছিলেন অনেকের প্রতিনিধি। দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে তার সেসব কথা। ব্রায়ান লারা তার ক্যারিয়ার সায়াহ্নে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আমি কি আপনাদের বিনোদন দিতে পেরেছি?’ লিওনেল মেসি লারা নন। নির্লিপ্ত, বিনয়ী, আলাভোলা। ‘ফুটবল না খেললে হয়তো হালচাষ করতেন…’ আড্ডার আনন্দে ডুবে তাকে নিয়ে বলা হয় এমন। তিনি তাই প্রশ্ন করবেন, ভাবা যায় না তেমন কিছু।

তবুও তাকে উত্তর জানিয়ে দেন কেউ, ‘পেরেছেন’ বলেন জানতে না চাইলেও। কোটি ভক্ত সেসব কথা শুনে বিস্ময়ে ডুবে থাকেন, ‘আরে, আমার মন কীভাবে পড়ে ফেললো…!’ ভদ্রমহিলা মহিলা বলেন, ‘আপনি কোটি আলবিসেলেস্তের হৃদয় ছুঁয়েছেন। ফেক হোক অথবা কল্পনায়; আপনার জার্সি আছে বেশির ভাগেরই…’

তিনি মিথ্যা বলেননি অবশ্যই। ইন্টারনেটের কল্যাণেই ক’দিন পরপর ভেসে উঠে সেসব। ছেঁড়া জামায়, ফুটপাতে দাঁড়ানো কোনো এক কিশোরের পেছনে ইটের কণায় লেখা হয় ‘মেছি’। বানান একদমই মূখ্য হয় না এখানে, বড় হয় বরং ভালোবাসা। দারিদ্রতাতে একটু সুখের খোঁজ এনে দেন ফুটবলের ‘দুঃখী রাজা’।

এসব তো দূর দেশের গল্প। হুলিয়ান আলভারেসের কথাই একবার ভাবুন। বছর এগারো আগের একটি ছবি এখন ভাইরাল বেশ। লিওনেল মেসির সঙ্গে কোথাও একটা দেখা হয়েছিল তার; কোনোরকমে একটি ছবিও তুলে রেখেছিলেন। পরে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্নের কথা।

কী? ‘দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলতে পারা…’। ফুটবলের আইডল? ‘লিওনেল মেসি…’।

আপনি নিশ্চয়ই খণ্ড খণ্ড ছবিগুলো মেলাতে শুরু করেছেন এতক্ষণে। অথবা আপনার কল্পনায় ভেসে উঠে এসেছে মেসির অমানবিক অ্যাসিস্টকে গোল বানিয়ে ফেলার পর তার সঙ্গে আলভারেসের ছবিটা।

বিশ্বকাপের সেরাদের একজন, বহু বড় ক্লাবের কাঙ্ক্ষিত ডিফেন্ডারকে স্রেফ বোকা বানিয়েছিলেন। পরে কেউ একজন লিখেছিলেন, ‘মেসি পাঁচজনকে ড্রিবল করে কাটিয়ে যাননি। তবে একজনকে পাঁচবার পরাস্ত করেছেন…’ ড্রিবলিংয়ের সেই সেকেন্ড বিশেকের অনেক অনেকগুলো, আলভারেসের শট, মেসিকে জড়িয়ে ধরা…

ওসব ছবি জোড়া লাগিয়ে ফ্রেম তৈরি করা যায় চাইলে। তবুও স্বীকৃতির জন্য দরকার হয় জয়। কেন? ২০১৪ বিশ্বকাপের পর লিওনেল মেসির গোল্ডেন বলের ট্রফি আনতে যাওয়া ছবি প্রমাণ তার। অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা শূন্যতা ব্যক্তিগত শিরোপায় মেটানো যায় না, অনুভব করা যায় তেমন।

সময় বয়ে চলে। ২০১৫ আসে, ‘১৬ও। তিন ফাইনাল হারের পর আলাভোলা ছেলেটি বলে ফেলেন, ‘আন্তর্জাতিক ফুটবলে আমার আর কিছুই বাকি নেই…’। হৃদয় ভেঙে যায়। পৃথিবীজুড়ে শত কণ্ঠ জেগে উঠে ফিরে আসার আবদারে। তিনি আসেন।

Related Posts

en_USEnglish