হজমে সাহায্য করে লেবুর খোসা

image_pdfimage_print

লেবুর খোসায় এমন সব পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে, যা লেবুতেও নেই। একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, লেবুতে যে পরিমাণ ভিটামিন থাকে তার থেকে প্রায় ৫-১০ গুণ বেশি থাকে লেবুর খোসায়। সেই সঙ্গে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম, ভিটামিন সি এবং ফাইবার। এই সবকটি উপদানই নানা ভাবে শরীরে কাজে লেগে থাকে। সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক উপকারিতা। যেমন…

১. স্ট্রেস কমায়:
লেবুর খোসায় উপস্থিত সাইট্রাস বায়ো-ফ্লেভোনয়েড শরীরের ভেতরে প্রবেশ করার পর এমন কাজ শুরু করে যে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমতে শুরু করে। ফলে সার্বিকভাবে মন, মস্তিষ্ক এবং শরীর একেবারে চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তাই তো এবার থেকে যখনই দেখবেন শরীর আর চলছে না, তখন অল্প করে লেবুর খেসা নিয়ে চটজলদি খেয়ে ফেলবেন। দেখবেন উপকার মিলবে।

২. ওজন কমায়:
পেকটিন নামে একটি উপাদান প্রচুর মাত্রায় থাকায় লেবুর খোসা নিয়মিত খেলে ওজন কমার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। কারণ এই উপাদানটি শরীরে উপস্থিত অতিরিক্ত চর্বিকে ঝড়িয়ে ফেলতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে।

৩. ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখে:
লেবুর খোসায় উপস্থিত স্য়ালভেসস্ট্রল কিউ ৪০ এবং লিমোনেন্স নামে দুটি উপাদান ক্যান্সার সেলের ধ্বংসে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে নিয়মিত লেবুর খোসা খেলে শরীরের অন্দরে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়া কোনও সম্ভাবনাই থাকে না। এখানেই শেষ নয়, লেবুর খোসা খাওয়া মাত্র ব্যাকটেরিয়াল এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশেনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

৪. মুখ গহ্বরের রোগের প্রকোপ কমবে:
ভিটামিন সি-এর ঘাটতি হলে মুখ গহ্বর সংক্রান্ত একাধিক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। তাই তো নিয়মিত লেবুর খোসা খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এতে উপস্থিত ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক অ্যাসিড মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, জিঞ্জিভাইটিস সহ একাধিক রোগের প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৫. হাড় শক্তপোক্ত হয়:
প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম থাকার কারণে লেবুর খোসা খাওয়া শুরু করলে ধীরে ধীরে হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ইনফ্লেমেটরি পলিআর্থ্রাইটিস, অস্টিওপরোসিস এবং রিউমাটয়েড আথ্রাইটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

৬. হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়:
লেবুর খোসায় উপস্থিত পলিফেনল নামে একটি উপাদান শরীরে খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমায়। অন্যদিকে লেবুর পটাশিয়াম ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণা রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। তাই তো যাদের পরিবারে কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্টের রোগের ইতিহাস রয়েছে তারা প্রতিদিনের ডায়েটে লেবুর খোসাকে অন্তর্ভুক্ত করুন। দেখবেন উপকার পাবেন।

৭. ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়:
একাধিক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে লেবুর খোসার অন্দরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের নিচে জমে থাকা টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বকের বয়স কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে বলিরেখা যেমন কমে, তেমনি ত্বক টানটান হয়ে ওঠে। এই কারণেই তো বয়স ৩০-এর কোটা পরলেই প্রতিদিন লেবুর খোসা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

৮. হজমের উন্নতি ঘটায়:
ফাইবার সমৃদ্ধি যে কোন খাবার হজম ক্ষমতার উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই উপাদানটি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে লেবুর খেসায়। তাই তো বদ-হজন থেকে গ্যাস-অম্বল, যে কোনও ধরনের হজম সংক্রান্ত সমস্যায় এই প্রকৃতিক উপাদানটি দারুন উপকারে আসে।

লেবুর খোসায় উপস্থিত পুষ্টিকর উপাদান:
১০০ গ্রাম লেবুর খোসায় প্রায় ১৩৪ এমজি ক্যালসিয়াম, ১৬০ এমজি পটাশিয়াম , ১২৯ এমজি ভিটামিন সি এবং ১০.৬ গ্রাম ফাইবার থাকে। এই সবকটি উপাদানটি শরীরের গঠনে নানাভাবে কাজে লেগে থাকে। সেই কারণেই তো চিকিৎসকেরা লেবুর খোসা খাওয়ার পক্ষে মত দিয়ে থাকেন।

খাবেন কীভাবে লেবুর খোসা?
অনেকভাবে এই প্রাকৃতিক উপাদানটি খেতে পারেন। যেমন ধরুন- ১. কয়েক ঘণ্টা লেবুর খোসাটা ফ্রিজে রাখার পর গ্রেট করে নিন। তারপর অল্প পরিমাণ নিয়ে চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। ২. লেবুর খোসাটা শুকিয়ে নিয়ে। তারপর গ্রায়েন্ডারে লেবুর খোসা, অল্প পরিমাণ লবন এবং গোলমরিচ নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। তারপর মিশ্রনটি খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। ৩. লেবুর খোসাকে শুকিয়ে নিন। তারপর বেটে নিয়ে পাউডার বানিয়ে ফেলুন। সেই পাউডার এবার খাবারের সঙ্গে অথবা অন্য যে কোনওভাবে গ্রহণ করতে পারেন।

Related Posts

en_USEnglish