Education, moral education, and our Todo

image_pdfimage_print

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষের মাঝে দু’টি সত্তা বিরাজমান। একটি জীবসত্তা বা পশুত্ব অপরটি মানবসত্তা বা মনুষ্যত্ব। জীবসত্তার একমাত্র লক্ষ্য হলো ক্ষুৎপিপাসায় কাতর মানুষটিকে উদর পুর্তি ও জৈবিক চাহিদা নিবারণের মাধ্যমে তৃপ্ত রাখা।

অপরদিকে মানবসত্তার কাজ হলো নিজেকে জানা। কিসে মানব জন্মের স্বার্থকতা এ চিন্তায় ভাবিয়ে তোলা। এ ভাবিয়ে তোলার পিছনে যে প্রধান ভূমিকা পালন করে তা হলো শিক্ষা।  আর সুশিক্ষার মাধ্যমে জীবসত্তা মানবসত্তায় উন্নীত হতে সক্ষম হয়।

শিক্ষা শব্দটি ব্যুৎপত্তি বিশ্লেষণে জানা যায়, শিক্ষা শব্দটি ‘শাস’ ধাতু হতে নির্গত।  যার অর্থ শাসন করা বা উপদেশ দান করা। ‘শিক্ষা’ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Education. Education শব্দটি educare বা educatio থেকে গঠিত। যার অর্থ বের করে আনা। ব্যাপকার্থে ভিতরের সম্ভাবনাকে বাইরে বের করে নিয়ে আসা বা বিকশিত করা।অর্থাৎ ব্যক্তির সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের অব্যাহত অনুশীলনই শিক্ষা।  যুগে যুগে দার্শনিকগণ শিক্ষাকে সজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে-

★ গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিসের ভাষায়, “শিক্ষা হলো মিথ্যার অপনোদন ও সত্যের বিকাশ।”

★ এরিষ্টটলের মতে, “সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরি করাই হলো শিক্ষা।”

★ কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, “মানুষের অন্তর্নিহিত বিকাশই হলো শিক্ষা।

★ স্বামী বিবেকানন্দ বলেন, ” উঠো; জাগো, নিজে জেগে অপরকে জাগাও।”

 সত্যিই শিক্ষা মানুষের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তোলে এবং কিসে মানব জীবনের স্বার্থকতা, সে গান শোনায়।

শিক্ষার বিকাশ কাল নিয়ে জানা যায়, নিয়ম মাফিক শিক্ষা তথা স্বাক্ষরীকরণ গত দেড়শো-দ’শো বছরের সমাজে পরিবাহিত হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন। শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার, যা ১৯৬৬ সালে সার্বজনীন অধিকার হিসেবে জাতিসংঘ স্বীকৃতি প্রদান করে। এবার নৈতিক শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করা যাক।

নৈতিক শিক্ষা (Moral Education)

নৈতিক শব্দটি প্রত্যয় নিষ্পন্ন শব্দ। ‘নীতি’ প্রকৃতির সাথে ‘ইক’ প্রত্যয় যোগে ‘নৈতিক’ শব্দটির সৃষ্টি। এর অর্থ নীতি সম্বন্ধীয় বা নীতি সংক্রান্ত। নৈতিক শিক্ষা বলতে বোঝায় জীবনের ভালো ও সঠিক নীতি অনুসরণের নীতিগত অধ্যয়ন বা পাঠ গ্রহণ করা।  আরো সহজ করে বলা যায়, যে শিক্ষা আমাদের মনে নীতিবোধ জাগ্রত করে তা-ই নৈতিক শিক্ষা।

নৈতিক শিক্ষা মূলত কিছু মানবিক মূলনীতি নিয়ে গঠিত। নৈতিক শিক্ষা একজন মানুষকে মানবিক গুণাবলীতে সমৃদ্ধ করে স্বার্থক মানুষের মর্যাদায় আসীন করে। এ শিক্ষায় সমৃদ্ধ মানুষ নিজেদের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি অপরের অধিকার ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি যত্নবান হন। তাই শৈশব থেকেই শিশুকে নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে বিকশিত করতে অভিভাবকদের সচেষ্ট হওয়া উচিৎ।

নৈতিক শিক্ষা ইসলামি বিষয়াবলির অন্তর্গত। ইসলামি দর্শনের আদি শিক্ষক হলেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। তার স্বাক্ষ্য হিসেবে ফেরেশতারা বলেছিলেন “হে আল্লাহ, আপনি পবিত্র। আপনি যা শিখিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের কোনই জ্ঞান নেই। নিশ্চয়ই আপনি মহাজ্ঞানী ও কোশলি। (আল-কোরআন)

মানব জাতির পথ প্রদর্শক মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সঃ) এর প্রতি মহান আল্লাহ তায়ালার প্রথম নির্দেশ ছিল, ” পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। (আল-কোরআন) নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি নিজেকে জানার চেষ্টা করে। কিসে মানব জন্মের স্বার্থকতা,  তা বাতলিয়ে দেয়।

আলোচনার প্রান্তিক পর্যায়ে এসে জিজ্ঞাস্য আমরা যে গতানুগতিক শিক্ষা লাভ করছি তার সাথে নৈতিক শিক্ষার সম্পর্ক কতটুকু? এ সিলেবাস ভিত্তিক শিক্ষা কি আমাদের পরমত, পরধর্ম সহিষ্ণু করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে? যদি করেই থাকে, তাহলে মানবিক মুল্যবোধ এত লোপ পেয়েছে কেন? কেন জীবসত্তা তথা পশুত্বের এমন জয়জয়কার? মানবসত্তা বা মনুষ্যত্ব কেন অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে? সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী ব্যক্তিটি কেন লুটেরা হচ্ছে? আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি এ নৈতিক অবক্ষয়ের জন্য সিলেবাস প্রণেতারা কিয়দংশ দায়ী। কোমলমতি শিশুদের পাঠ্য নির্বাচনে উনারা আরো সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়। এক সময়ের পাঠ্য ওস্তাদের কদর, জীবন বিনিময়  সৎসঙ্গ কবিতা পাঠ শিক্ষার্থীর মন-প্রাণ আন্দোলিত হতো। বর্তমান পাঠ্য সাহিত্য পাঠে কি আমাদের মন সেভাবে প্রভাবিত হয়? পাঠ্য নির্বাচকরা এমন বিষয়াবলি সংযোজন করা উচিৎ, যা পাঠে শৈশব থেকেই শিশুরা নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মানবিক গুণাবলিতে বলিয়ান স্বার্থক মানুষে পরিণত হয়ে দেশ, জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করার সুযোগ পায়।

মোঃ ইয়াছিন

প্রভাষক বাংলা

হাজিরহাট হামিদিয়া ফাযিল ডিগ্রি মাদরাসা

Related Posts

en_USEnglish