রামগতি (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি :
লক্ষ্মীপুরের রামগতির চর বাদাম ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে চিহিৃত চোর চক্রের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী।
জানা যায়, ইউনিয়নের পঞ্চাত সমাজে সিদেল চুরি, টাকা চুরি, মোবাইল চুরি, রাতের অন্ধকারে হাড়ি পাতিল, রান্না করা মাংশ চুরি সহ গৃহবধূকে রাতের অন্ধকারে ধারালো টেটা বিদ্ধ করা ও তাদের সংঘঠিত বিভিন্ন অপরাধ এর কারণে এলাকাবাসী চরম এক আতংকে দিনাতিপাত করছে।
থানা পুলিশ, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, চৌকিদার সহ সকলেই জানে এই চোর চক্রের অপরাধ জগত সম্পর্কে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চুরি করে ধরা খাওয়ার পর অধরা থেকে যাচ্ছে এ সিন্ডিকেট।
স্থানীয়রা জানায়, চর বাদাম ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পঞ্চাত সমাজে বেশ কিছুদিন থেকে গড়ে উঠেছে আবুল বাশার বাসু মিয়ার ছেলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মাজেদ রাজুর সহোদর ভাই সুমন, শাহীন, নোমান, শান্তর একটি সংঘবদ্ধ চোর ও অপরাধচক্র। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আকবর হোসেন সুখীর বিরুদ্ধে উঠেছে এদের নিয়ে আড্ডা দেয়া, শোডাউন করা সহ পৃষ্ঠপোষতার অভিযোগ। চোর চক্র ধরা খাওয়ার পর গডফাদাররা ক্ষমতার প্রভাবে তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এদের কারণে সাধারণ মানুষের সমাজে বসবাস করা দূরুহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায়না। কেউ মুখ খুললেই তার উপর নেমে আসে চুরি চামারি ও হামলার মত ঘটনা। গত একমাসের মধ্যে প্রায় ১৫/২০টি বাড়ীতে চুরি, ধারালো কোচ দিয়ে গৃহবধূর উপর হামলা, মোবাইল চুরি, টাকা চুরি, গরু ছাগল চুরি, সিঁদ কেটে ঘরের মালামাল চুরি করে তারা। এই চক্রটি গত কয়েক দিন আগে রাতে মৃত আবুল খায়েরের ছেলে আবদুর রহিমের ঘরের দরজা কেটে ভিতরে ঢুকে ২০হাজার মূল্যের একটি মোবাইল ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে যায়। নুরুল ইসলামের ছেলে প্রবাসী মাকসুদের ঘরের দরজা কেটে পার্সপোট ভিসা, নগদ টাকা ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে যায়। আবুল কালামের ছেলে মোছলেহ উদ্দিনের পানির পাম্পের মোটর ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে যায়। চৌধুরী মিয়ার ছেলে নুরনবীর একটি গরু নিয়ে যাওয়ার সময় শোর চিৎকার করিলে গরু রেখে চলে যায়। নুরনবীর ঘরের সিঁদ কেটে একটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। যা জিডি করার পর রামগতি থানা পুলিশ উদ্ধার করে। গত ১৫/২০দিন আগে মিরন পন্ডিতের ছেলে আনোয়ারের ঘরের বেড়া কেটে একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল নিয়ে যায়।
হাফেজ মাহবুব উল্যাহ ঘরের সিদ কেটে দুটি টাচ মোবাইল নিয়ে যায়। গত এক বৎসর আগে একই ঘটনা ঘটে। আবদুল মতিন বেপারীর বাড়ীর ঘরের সিঁদ কেটে দুইটি টাচ মোবাইল ও স্বর্ণলংকার নিয়ে যায়। ইসমাইলের ছেলে রাশেদ ডাক্তারের ঘরের সিঁদ কেটে দুটি এন্ড্রয়েড সেট ও ডাক্তারী যন্ত্রপাতি নিয়ে যায়। ইউনুছ পঞ্চাতের ঘরে সিদ কেটে ঢুকে তার স্ত্রীর গলা থেকে স্বর্ণের চেইন নিয়ে যাওয়া সময় চিৎকার দিলে চেইন রেখে চলে যায়, তারপর সামাজিক ভাবে শালিশী বৈঠকে তারা চোর প্রমানিত হলে মাফ চায়। আবু জাকেরের ঘরের দরজা কেটে ঘরে ঢুকে মোবাইল, অন্যান্য মালামাল ও গরু নিয়ে যায়। পরপর দুইবারই তার ঘরে চুরি করে এ চোর চক্র। মো: রাসেলের ঘরে দুইবার পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে প্রাণনাশের চেষ্টা করে এসময় তার একটি রান্নাঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। রাসেলের মা নামায পড়তে উঠলে ওযু করা অবস্থায় কোচ মেরে তাকে হত্যা চেষ্টা করলে মহিলার চিৎকার করলে তারা পালিয়ে যায়। এ সময় তার বুকে কোচ বিদ্ধ হয়। ইতিপূর্বে রাসেলকে তারা বিভিন্ন কূ-পরামর্শ ও হুমকি ধমকি দেয়।
স্থানীয়রা আরো জানায়, এ চক্রটি বিভিন্ন সময়ে মানুষের ঘরের সিঁদ কাটা, হাঁস-মুরগী, মোবাইল, নগদ টাকা, নারিকের, সুপারী চুরি করে সমাজকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। এ চক্রটি নামায পড়ানোর সময় মসজিদের ঈমামের দুটি মোবাইল নিয়ে যায়। কয়েকদিন আগে তাজল ইসলামের ছেলে মো: ইউনুসের ঘরে ঢুকে নগদ আট হাজার টাকা নিয়ে যায় তা প্রমানিত হলে সামাজিক ভাবে শালিশী বৈঠকে দেড় মাসের মধ্যে কারামতিয়া বাজার কমিটির সেক্রেটারীর কাছে জরিমানার টাকা জমা দিবে মর্মে স্বীকার করে তাদের পিতা বাসু। এই চক্রটি দ্বীর্ঘদিন থেকে চুরি করে আসছে। রামগতি থানায় তাদের নামে কয়েকটি জিডি রয়েছে। এদের নির্মূল করা এখন সময়ের দাবী।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন জসিম জানান, চোর চক্রের কারণে আমাদের এলাকাবাসী অতিষ্ঠ।
এ বিষয়ে থানা অফিসার ইনচার্জ মো: আলমগীর হোসেন জানান, তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সচেতন এলাকাবাসী এ চোর চক্রটি দমনে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবী জানায়।