মাঙ্গার আন্তর্জাতিক জগতে বাংলাদেশের প্রথম প্রবেশ

image_pdfimage_print

‘মাঙ্গা’ নামে পরিচিত জাপানি কমিক বইয়ের সংস্কৃতি এখন বিশ্বজুড়ে তরুণ সমাজের মন কেড়ে নিচ্ছে। জাপানে অবশ্য মাঙ্গার রয়েছে সমৃদ্ধ এক ইতিহাস। এর সূচনা চিহ্নিত করা হয় দ্বাদশ শতাব্দীর মাঝমাঝি সময়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এমাকি স্ক্রল পেইন্টিং বা গুটিয়ে রাখা কাগজ অথবা কাপড়ে আঁকা ছবিতে। চোজু গিগা নামে পরিচিত সেই সময়ের একটি ছবিতে কয়েকটি জন্তুর আনন্দ-ফুর্তিতে জড়িত থাকার ছবিকে জাপানি গবেষকেরা প্রথম মাঙ্গা হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। তবে সময়ের বিবর্তনে মাঙ্গা এর দীর্ঘ পথ পরিক্রমণে নানা পর্যায় পার হয়ে এখন সারা বিশ্বের তরুণদের মধ্যে আলোড়ন জাগানো এক গণসংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। মাঙ্গার হাত ধরে পরবর্তী সময়ে মঞ্চে আসা আনিমে কার্টুন, ছবি এবং মাঙ্গা কার্টুনের চরিত্রের আদলে পোশাক পরার সংস্কৃতি পূর্ব ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া ছাড়াও ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশেও তরুণদের টানছে।

মাঙ্গার এই আন্তর্জাতিক জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে জাপানি সংস্কৃতির এই দিকটিকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিতে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক মাঙ্গা প্রতিযোগিতার সূচনা করে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবছর যে ঘোষণা প্রচার করে আসছে, সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া দেশ ও প্রতিযোগী উভয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া সম্প্রতি লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। ২০২৩ সালের ১৭তম প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের নাম মন্ত্রণালয় ডিসেম্বরের শেষ দিকে ঘোষণা করে। বিশ্বের ৮২টি দেশ ও ভূখণ্ড থেকে জমা দেওয়া ৫৮৭টি কাজের মধ্য থেকে বিচারকেরা ১৩টি কাজকে পুরস্কারের জন্য বেছে নেন। এবারের প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছেন তাইওয়ানের শিল্পী চিওন জেসনের মাঙ্গা ‘উইন্ড চেসার আন্ডার দ্য ব্লু স্কাই’। হংকং, ভিয়েতনাম ও স্পেনের তিনটি মাঙ্গা মনোনীত হয়েছে রৌপ্য পদকের জন্য এবং ৯টি মাঙ্গাকে দেওয়া হয়েছে ব্রোঞ্জ পদক। ব্রোঞ্জ পদক বিজয়ীর তালিকায় এবার প্রথমবারের মতো স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর জীবনের ওপর আলোকপাত করা সেই মাঙ্গার রচয়িতা হচ্ছেন বাংলাদেশের এম ই চৌধুরী শামীম। তাঁর এই অর্জনের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ এখন মাঙ্গার আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে দেশের গর্বিত উপস্থিতির ঘোষণা দিল।

বিজয়ীদের মধ্যে থেকে স্বর্ণ ও রৌপ্যপদক জয়ী শিল্পী ও রচয়িতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে আজ জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিথি ভবন ইকুরা গেস্ট হাউসে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামিকাওয়া ইওকো। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন তিনি। জাপানের এই আয়োজনের ওপর রাখা সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া সবার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন যে আগামী দিনে এই প্রতিযোগিতা আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাপানে বাংলাদেশ দূতাবাসের উপমিশন প্রধান ও মিনিস্টার শাহ আসিফ রহমান। প্রথমবারের মতো এ রকম একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পাওয়া মাঙ্গার মধ্যে বাংলাদেশের উপস্থিতিতে তিনি গৌরব বোধ করেন। শাহ আসিফ রহমান বলেন যে ব্রোঞ্জপদক বিজয়ী হিসেবে বাংলাদেশি প্রতিযোগী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারলে দেশের জন্য সেটি হতে পারত আরও আনন্দের। তবে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন যে এম ই চৌধুরী শামীমের এই অনন্য অর্জনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আগামী দিনে বাংলাদেশের আরও বেশি মাঙ্গা শিল্পী প্রতিযোগিতায় অংশ নিলে আরও বড় সাফল্য অর্জন সম্ভব হবে। অনুষ্ঠান কক্ষে প্রদর্শিত পুরস্কার বিজয়ী ১৭টি মাঙ্গার মধ্যে বাংলাদেশের মাঙ্গার স্থান করে নেওয়া তাঁকে আনন্দ দিয়েছে।

 

Related Posts

en_USEnglish