Amnesty report: Free speech under threat

image_pdfimage_print

মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা লাখো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আশ্রয় দিয়েছিল। এই জনগোষ্ঠীর সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ সদস্য এখনো এ দেশে আশ্রিত। অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার অনুধাবনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এখনো হুমকিতে রয়েছে। সব মিলিয়ে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল মিশ্র।

যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব মন্তব্য করেছে। এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ‘এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মানবাধিকার পরিস্থিতি: ২০১৯ সালের পর্যালোচনা’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দমনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, যাতে ভিন্নমতের কণ্ঠস্বরকে ভয়ভীতি দেখাতে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে, তার আওতায় ২০১৯ সালে অন্তত ২০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। প্রায় ৪০০ জনের বিরুদ্ধে এই আইনে অভিযোগ করা হয়েছে। আইনটি পুলিশকে গ্রেপ্তার ও আটক করার ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পাঁচ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তাঁদের মধ্যে একজনকে আটক করা হয়েছিল পুলিশের দুর্নীতির খবর প্রকাশের জন্য। পরে অবশ্য ওই সাংবাদিককে ছেড়ে দেওয়া হয়। এই আইনের কারণে সাংবাদিকেরা স্বনিয়ন্ত্রণে (সেলফ সেন্সর) বাধ্য হচ্ছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিরোধী রাজনীতিকদের সভা–সমাবেশ ও মিছিল করতে দেওয়া হয়নি, যা তাঁদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অধিকারের লঙ্ঘন। গত সেপ্টেম্বরে অন্তত ১৪টি জেলায় বিএনপিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। অক্টোবরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় আবরার ফাহাদ নামের বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক শিক্ষার্থীকে হলে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গত বছর ৩৮৮ জনের বেশি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিকে ঘটনার কয়েক মাস আগেই গুম করার অভিযোগ আছে। এ ছাড়া গত বছর অন্তত ১৩ জন গুম হয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ গত বছরও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। তবে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভয় রয়েছে যে তাদের জোরপূর্বক মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হতে পারে কিংবা ভাষানচরে স্থানান্তর করা হতে পারে। সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা শিবিরে মুঠোফোন সেবা বন্ধে মুঠোফোন কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ ছাড়া নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গা শিবিরে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ারও উদ্যোগ নিয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক গবেষক সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, কঠোর আইনের মাধ্যমে মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা সীমিত করা হয়েছে। এই আইন ভিন্নমতকে কার্যকরভাবে সংকুচিত করেছে। বাংলাদেশে মুখ খোলার জন্য মানুষের হয়রানি ও গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড বিষয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন ঘটনা প্রমাণ করেছে যে দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করা ব্যক্তিদের ব্যাপারে তাঁদের খুব সহজেই ধৈর্যচ্যুতি ঘটে।

সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া আরও বলেন, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধে, অপরাধীদের সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা এবং সরকারের প্রতিশ্রুতির ঘাটতি দায়মুক্তির সংস্কৃতি গড়ে তুলছে বাংলাদেশে।

Related Posts

en_USEnglish