শিশুদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান

শিশুদের মাঝে বেশি বেশি বঙ্গবন্ধুর চর্চার মাধ্যমে একটি সৃজনশীল জাতি পাবে বাংলাদেশ। তাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যেতে শিশু-কিশোরদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

শিশু কিশোর সাংস্কৃতিক ও নাট্য সংগঠন ‌‘শৈল্পিক স্বপ্ন’ আয়োজিত মুজিববর্ষ বিজয় দিবস-২০২০ এর বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

একুশে পদক পাওয়া নাট্যজন আরো বলেন, শৈল্পিক চর্চার মাধ্যমে একটি শিশু পরিণত হয় তার সৃজনশীল মেধার বিস্তৃত পরিসরে। তাই শিশুদের মেধার বিকাশে শুধু ক্লাসে বই পড়া নয়, সাংস্কৃতিক ও খেলার জগতেও সম্পৃক্ত করতে হবে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. অরুপ রতন চৌধুরী (একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজ সেবক) বলেন, ‘শিশুরা শুধু পড়াশোনা করলেই বড় হতে পারে না, প্রয়োজন মেধার সৃজনশীল সাহিত্য সাংস্কৃতিক বিকাশ।’ এ জন্য শিশুদের সাংস্কৃতিক চর্চায় বেশি বেশি যুক্ত রাখতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান ড. অরুপ রতন চৌধুরী। তিনি বলেন, সাহিত্য সাংস্কৃতিক বলয়ে যুক্ত থাকা শিশু কিশোররা কখনো মাদকাসক্ত হতে পারে না। এটা দেশ তথা সমাজের জন্য অনেক বড় পাওয়া।

অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলাবেতার কেন্দ্রের প্রথম নারী সংগীত শিল্পী নমিতা ঘোষ বলেন, শিশুরা বঙ্গবন্ধু আর মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করলেই বুদ্ধিদীপ্ত একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে।

অনুষ্ঠানে শৈল্পিক স্বপ্ন’র প্রতিষ্ঠাতা নাজনীন খানমের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সিনিয়র প্রশিক্ষক ও আবৃত্তি শিল্পী জনপ্রিয় উপস্থাপক রুপশ্রী চক্রবর্তী, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার ও শিশু সংগঠক বিতার্কিক আবৃত্তি শিল্পী ইফতেখারুল ইসলাম ও বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী ও মিউজিক কম্পোজার আলম মাহমুদ, জনপ্রিয় লেখক ও শিশু সাহিত্যিক এবং সিসিমপুরের মিডিয়া কনসালটেন্ট পলাশ মাহবুব এবং খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির আবৃত্তি বিভাগের প্রধান আশরাফিয়া আলী আহমদ নানতু।




চাকরির ২২ বছর পূর্তিতে জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন

১৮তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা মুজিববর্ষে তাদের সরকারি চাকরির ২২ বছর পূর্তিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। গত শুক্রবার টুঙ্গিপাড়ায় অবস্থিত সমাধিস্থলে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও বিশেষ মোনাজাত করেন। রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপিএত বলা হয়, এই কর্মসূচিতে ১৮তম বিসিএস প্রশাসন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. জাহিদুল ইসলাম ভূঞা এবং সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর একান্ত সচিব (যুগ্মসচিব) গৌতম চন্দ্র পালসহ ৭২ জন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। তারা সবসময় জনগণের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত রেখে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে একান্তভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।




অবশেষে মুক্তি মিলল মানবাধিকারকর্মী লুজাইনের

সৌদি আরবের প্রখ্যাত নারী মানবাধিকারকর্মী লুজাইন আল হাতলুল মুক্তি পেয়েছেন।এক হাজার এক দিন কারাগারে থাকার পর বুধবার বিকেলে ছাড়া পান তিনি।

রিয়াদের এক বিচারকের অনুমোদনের পর বুধবার বিকেলে মুক্তি দেওয়া হয় তাকে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়ার পক্ষে আন্দোলনকারীদের মধ্যে অন্যতম লুজাইন আল হাতলুল। গত বছরের ডিসেম্বরে তাকে বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে জনশৃঙ্খলা নষ্টের অপরাধে অভিযুক্ত করে পাঁচ বছর আট মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। তবে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই অধিকারকর্মীকে মুক্তি দিতে বার বার আহ্বান জানানো হয়।

অবশ্য সৌদি আরবের পক্ষ থেকে লুজাইনের আটক, বিচার ও মুক্তি নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

বেশ কিছু শর্তের অধীনে মুক্তি পান লুজাইন আল হাতলুল। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে কারাগারে তার সঙ্গে আচরণ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না এবং সৌদি আরব ছেড়ে যেতে পারবেন না। শর্ত ভঙ্গ করলে তার কারাদণ্ড পুনর্বহাল করা হতে পারে।

নিজের কারাদণ্ডের প্রতিবাদে আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন হাতলুল। এছাড়া, অন্য নারী বন্দিদের সঙ্গে তিনিও বিচারকের কাছে দাবি করেন জিজ্ঞাসাবাদের সময় মুখোশ পরিহিত পুরুষেরা তাদের ওপর নির্যাতন ও যৌন নিপীড়ন চালান। তবে গত মঙ্গলবার একটি আপিল আদালত নির্যাতনের অভিযোগ খারিজ করে দেয় বলে জানায় তার পরিবার। সূত্র: গার্ডিয়ান




পাঠ্যপুস্তকে ভুল থাকলে জানাতে বললেন শিক্ষামন্ত্রী

নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যপুস্তকে কোনো ভুল অথবা বইয়ের কোনো বিষয়ে কারো অস্বস্তি থাকলে কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

তিনি বলেন, প্রাথমিকে প্রথম শ্রেণি এবং মাধ্যমিকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে বইগুলোতে কোথাও ভুল থাকতে পারে, কোনো কোনো বিষয় নিয়ে কারো অস্বস্তি থাকতে পারে। আমাদেরকে জানাবেন, আমরা আগামী বছরের জন্য সেগুলো সংশোধন করব এবং বাকি ক্লাসের বইগুলো আমরা সেই আলোকে তৈরি করব। এই বছরের বইগুলো কিন্তু পরীক্ষামূলক সংস্করণ।

আজ শনিবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ভাস্কর্যের পাদদেশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শিক্ষা উপহার বিতরণ ও ‘একুশ শতকের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ছাত্রসমাজের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা যা শিখব তা করে করে শিখব। সেই লক্ষ্যেই নতুন শিক্ষাক্রম। ২০২৩-২৪ ও ২৫- এই তিন বছর মিলিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হবে। এ বছর আমরা ৩৩ হাজার মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন শিক্ষাক্রমের বই দিয়েছি। আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের কাছ থেকে ফিডব্যাক (প্রতিক্রিয়া) নেব এবং সারা বছর বইগুলোকে আমরা পরিমার্জন, পরিশীলন করব।

মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাধুলার চর্চার জন্য ক্লাবভিত্তিক কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি। পাঠাগারগুলোকে উন্নত করতে চাই। কারণ, শিক্ষার্থীরা যত বেশি বই পড়বে তত বেশি তাদের চিন্তার জগত প্রসারিত হবে। পাশাপাশি দাবার ক্লাব, বিতর্কের ক্লাব, উদ্যোক্তা তৈরি করার ক্লাব, স্কাউট অবশ্যই সব প্রতিষ্ঠানে থাকতে হবে। আমরা চাই আমাদের প্রতিটি শিক্ষার্থী স্মার্ট শিক্ষার্থী হবে।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন সভাপ্রধান ছিলেন। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।




জেমকন সাহিত্য পুরস্কার পেলেন তিন কবি-সাহিত্যিক

জেমকন সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ পেয়েছেন দুই কবি কামাল চৌধুরী ও সাকিব মাহমুদ এবং কথাসাহিত্যিক সাজিদুল ইসলাম।

আজ বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে পুরস্কারজয়ী এই তিন জনের হাতে চেক, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র তুলে দেওয়া হয়। সংসদ সদস্য ও জেমকন গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী নাবিল আহমেদ বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন।

‘স্তব্ধতা যারা শিখে গেছে’ কাব্যগ্রন্থের জন্য কবি কামাল চৌধুরী এবার জেমকন সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। সম্মাননার সঙ্গে তিনি পেয়েছেন পাঁচ লাখ টাকার চেক।

তরুণ শ্রেণিতে ‘ঘুমিয়ে থাকা বাড়ি’ পাণ্ডুলিপির জন্য সাকিব মাহমুদ জেমকন সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। অন্যদিকে ‘সোনার নাও পবনের বৈঠা’ উপন্যাসের জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন সাজিদুল ইসলাম। এই দুই সাহিত্যিক আলাদাভাবে সম্মাননার সঙ্গে পেয়েছেন এক লাখ টাকার চেক।




দেশের তিন এলাকায় যে কারণে শীত বেশি

দেশের তিনটি এলাকায় মূলত সবচেয়ে কম তাপমাত্রা থাকছে। ফলে ওই এলাকাগুলোর মানুষ শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে। এর মধ্যে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া এবং মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে শীত বেশি থাকে। কারণ, ওই দুই এলাকার কয়েক কিলোমিটার পেছনে হিমালয় পর্বতমালা ও মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকা। হিমালয়ে শীতকালে রীতিমতো বরফ পড়ে।

আর এক যুগ ধরে যশোর ও চুয়াডাঙ্গার প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তন হয়েছে। নদ–নদী শুকিয়ে পানি ও জলীয় বাষ্প কমে গেছে। ফলে শীতের বাতাস কিছুটা উষ্ণ জলীয় বাষ্পের বাধা পাচ্ছে না। এ কারণে তাপমাত্রা কম থাকছে।

দুই সপ্তাহ ধরে দেশের ভেতর দিয়ে যে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা ওই তিন এলাকায় বেশি দিন স্থায়ী হয়েছে। গতকাল শনিবারও দেশের সবচেয়ে শীতল এলাকা ছিল তেঁতুলিয়া। সেখানকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ মৌসুমে সর্বনিম্ন। শ্রীমঙ্গল, চুয়াডাঙ্গা, যশোরেও টানা শৈত্যপ্রবাহ চলছে।

গত ৩০ বছরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায়। ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়—২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবারও চলতি বছরে দেশের সবচেয়ে শীতল এলাকা ছিল ওই তেঁতুলিয়া—৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর শ্রীমঙ্গল ও চুয়াডাঙ্গাতেও গত সপ্তাহে একাধিকবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

উত্তর গোলার্ধ থেকে আসা শীত বাংলাদেশ বা এ অঞ্চলে সরাসরি ঢুকতে পারে না বলে মন্তব্য করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ। তিনি বলেন, হিমালয় থেকে আসা বায়ুর একটি অংশ কাশ্মীর, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের একাংশ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। গরমের দিনে দিল্লির তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে কমতে বাংলাদেশে আসতে থাকে। আবার শীতকালে দিল্লির অতি শীত ধীরে ধীরে কমতে কমতে বাংলাদেশে আসে। শীতের সময় এই উত্তুরে হাওয়া বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশ চুয়াডাঙ্গা দিয়ে ঢোকে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে দেওয়া আজ রোববারের জন্য পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের বেশির ভাগ এলাকায় সকাল থেকে ঘন কুয়াশা আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি থাকতে পারে। বাতাসে জলীয়বাষ্প বেড়ে যাওয়ায় আজ রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টাজুড়ে বরিশাল ছাড়া দেশের সব বিভাগে বৃষ্টি ও শীতল আবহাওয়া থাকবে। সোমবার থেকে সারা দেশে আবারও শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে।




শীতেও হতে পারে পানির ঘাটতি, দেখা দেয় যেসব লক্ষণ

শীতে পিপাসা কম পাওয়ার কারণে অনেকেই পানি কম খান। কিন্তু এতে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। শীতে শরীরে পানির অভাবে নানা রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ নিউ হ্যাম্পশায়ারের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শীতকালে পানিশূন্যতার সম্ভাবনা বেশি বাড়ে । যেহেতু এই মৌসুমি তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ পিপাসা অনুভব করে না, তাই পর্যাপ্ত পানি খেতেও ভুলে যায়। শীতকালে গরম পোশাক পরার কারণে শরীর আরও বেশি গরম হয়ে যায়। ঠান্ডা, শুষ্ক বাতাসে ঘাম আরও দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যায়, যার ফলে শরীরে পানিশূণ্যতা দেখা দেয়।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, শরীরের ৩০ শতাংশ তরল এবং বাকি ৭০ শতাংশ অস্থি ও মজ্জা নিয়ে গঠিত। এই কারণেই বিশেষজ্ঞরা পানিকে জীবনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। মানুষ খাবার ছাড়া কিছু সময় বাঁচতে পারে কিন্তু পানি ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব। অর্থাৎ পানি ছাড়া জীবন কল্পনা করা যায় না।

সাধারণত সবাই পানিশূন্যতার সমস্যা খুব হালকাভাবে নেয়। এর ফলে অনেকেই অসুস্থ হয়ে যান। শরীরে পানিশূন্যতা হলে কয়েকটি উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন-

১. শরীরে পানির অভাব হলে ঠোঁট খুব শুষ্ক হয়ে যায় এবং ত্বক ফাটতে শুরু করে। অনেক সময় ঠোঁট থেকেও রক্ত বেরোতে দেখা দেয়।

২. পানির অভাবে গলা ক্রমাগত শুষ্ক থাকে এবং বারবার তৃষ্ণা লাগে । তখন বারবার পানি খেলেও পিপাসা দূর হয় না।

৩. শরীরে পানির অভাবের ফলে বুকে হালকা জ্বালাপোড়া, অ্যাসিডিটি বা পেটে অস্বস্তি পর্যন্ত হতে পারে। এর সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্টে দুর্গন্ধ হয়। এমনকি ব্রাশ করার পরেও নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ অনুভব করতে পারেন।

এছাড়াও পানি কম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যাসিডিটির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। শীতে ত্বকে শুষ্কতা বাড়তে থাকে এবং ত্বকের সমস্যা বাড়তে থাকে। পানির অভাবে শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রা অনেক কমে যায়।




ত্বকে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রাখবেন যেভাবে

ত্বক সুন্দর রাখতে কে না চায়? কিন্তু ত্বক সুস্থ এবং সুন্দর রাখাটাও বেশ ঝামেলার কাজ। বিশেষ করে যাদের প্রতিদিন বাড়ির বাইরে যেতে হয় বাইরের ধুলা, ধোঁয়া, দূষণে নাজেহাল অবস্থা হয় তাদের ত্বকের। এই পরিস্থিতিতে ত্বক হয়ে ওঠে নিষ্প্রাণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে ত্বকে সঠিকভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে না। সেজন্য ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন,, ত্বকে যখনই কোনও সমস্যা দেখা দেবে, তখনই বুঝতে হবে, তাতে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়েছে। কোনও কারণে রোমকূপগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এজন্য ত্বকে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এর জন্য মেনে চলতে হবে বেশ কিছু সহজ উপায়। যেমন-

১. ত্বকে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রাখতে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। তাহলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে। ত্বকে যদি প্রতিদিন প্রচুর ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা হয় তাহলে সাময়িক হয়তো ত্বক হাইড্রেটেড লাগবে। কিন্তু ত্বক ভিতর থেকে জলীয়ভাব বজায় রাখতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে হবে।

২. ত্বকে যত কম মেকআপ ব্যবহার করা যায়, তত ভালো। কারণ, বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মেকআপ ব্যবহার করলে রোমকূপের মুখগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এতে ত্বকে অক্সিজেন চলাচল সঠিক থাকে না। আর যদিও মেকআপ করতে হয়, তাহলে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই মেকআপ তুলে ঘুমাতে যেতে হবে।

৩. ত্বক পরিস্কার পরিচ্ছ্বন্ন রাখতে হবে। নিয়মিত ক্লিনজিং, টোনিং, স্ক্রাবিং, ময়শ্চারাইজিং করতে হবে। হয়তো ব্যস্ত সময়ে বেশিক্ষণ পরিচর্যা করতে পারছেন না। কিন্তু অল্প সময় পেলেও ত্বক পরিস্কার রাখতে হবে।

৪. ত্বকে মরা কোষ জমে থেকে অক্সিজেন চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এজন্য ত্বক পরিস্কার রাখা দরকার। নিয়মিত স্ক্রাবার ব্যবহার করতে হবে। তাহলে ত্বকের উপর জমে থাকা মরা কোষগুলো দূর হয়ে যায়।




কোন ধরনের মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ?

প্রশ্ন: আমাদের দেশের জনগণ অনেক ধরনের মোজা পরিধান করে থাকেন। কেউ চামড়ার মোজা পরেন। কেউ সুতার পাতলা মোজা পরেন। কেউ নাইলনের মোজা বা তুলার মোজা পরিধান করেন। এখন আমার জানার বিষয় হলো- কোন ধরনের মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ?

উত্তর: আমাদের অনুসন্ধান অনুযায়ী মোজা তিন ধরনের হতে পারে।

১. চামড়ার মোজা। এ ধরনের মোজার উপর সর্বসম্মতভাবে মাসেহ করা জায়েজ। বুট জুতা এবং গামবুটের উপর মাসেহ করা জায়েজ আছে।

ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) বলেছেন, আমি ততক্ষণ পর্যন্ত মোজার উপর মাসাহের প্রবক্তা হইনি, যতক্ষণ পর্যন্ত না বিষয়টি আমার কাছে দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার হয়েছে। (আলবাহরুর রায়েক-১/২৮৮, জাকারিয়া)

হাসান বসরী (রহ.) বলেন, সত্তরজন বদরী সাহাবীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। তাদের প্রতিজনকেই চামড়ার মোজার উপর মাসেহ করতে দেখেছি। (বাদায়েউস সানায়ে-১/৭৭, জাকারিয়া আহকামুল কুরআন, ইমাম জাসসাসকৃত-২/৪২৫)

২. এমন পাতলা মোজা, যা চামড়ারও নয়, আবার চামড়ার মোজার কোন গুণাগুণও তাতে পাওয়া যায় না। যেমন আজকালকার সুতার মোজা, নাইলনের মোজা বা তুলার মোজা ইত্যাদি। এসব মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ হবে না।

আল্লামা কাসানী (রহ.) বলেন, মোজা যদি এতটা পাতলা হয় যে, তা ভেদ করে পানি ভেতরে প্রবেশ করে, তাহলে তার উপর সবার ঐকমত্যে মাসেহ করা জায়েজ নেই। (বাদায়েউস সানায়ে-১/৮৩, জাকারিয়া বুক ডিপো)

৩. এমন মোজা যা চামড়ার নয়; কিন্তু মোটা হবার কারণে চামড়ার মোজার গুণ পাওয়া যায়। এমন মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ আছে, যদি তিনটি শর্ত পাওয়া যায়।

ক. মোজাটি এতটুকু মোটা হতে হবে যে, এর মাঝে পানি পড়লে তা পায়ে পৌঁছে না।

খ. উক্ত মোজা এতটুকুই মোটা যে, মোজাকে কোন কিছু দিয়ে বাঁধা ছাড়াই শুধু মোজা পা দিয়ে দুই-আড়াই কিলোমিটারের মতো হাঁটা যাবে, কিন্তু মোজা ছিঁড়বে না।

গ. মোজা এতটুকু বড় হতে হবে যে, টাখনুসহ ঢাকা থাকতে হবে।

সুতরাং উপরের আলোচনায় স্পষ্ট হলো যে, আমাদের দেশের প্রচলিত কাপড়ের পাতলা মোজার উপর মাসেহ করা কোনোভাবেই জায়েজ নয়।

ইবনে নুজাইম (রহ.) বলেন, সুতা বা চুলের পাতলা মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ নেই সর্বসম্মত মতানুসারে। (আলবাহরুর রায়েক-১/৩১৮, জাকারিয়া)

উল্লেখ্য, ১. ওজু করার পর মোজা পরিধান করলে পরবর্তীতে ওজু নষ্ট হয়ে গেলে তার উপর মাসেহ করতে পারবে। মোজা পরিধান করার পর গোসল ফরজ হয়ে গেলে সেই মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ হবে না।

২.মুকিম হলে একদিন এক রাত, আর মুসাফির হলে তিন দিন তিন রাত মোজার উপর মাসেহ করতে পারবেন।

সূত্র: সহিহ বুখারি -২০২. সুনানে তিরমিজি-৯৩ হেদায়া-১/৬১.বাদায়েউস সানায়ে-১/৭৫-৮৫, ফাতাওয়া হিন্দিয়া-১/৮৫. মাজমাউল আনহুর-১/৭৪

উত্তর দিয়েছেন- মুফতি সাদেকুর রহমান, মুফতি ও মুহাদ্দিস, শেখ জনূরুদ্দীন (র.) দারুল কুরআন মাদ্রাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা।




দিপালীদের সংসারে জনম আঁধার

রোজগারের জন্য গ্রামে গ্রামে ঘোরেন তাঁরা। শিঙা লাগানো, দাঁতের পোকা বের করা, শিশুদের নানান রোগের ‘চিকিৎসা’সহ তাবিজ দেন। শরীরে বিষব্যথা থাকলে মহিষের কাটা শিঙের মোটা অংশ দিয়ে সারিয়ে তোলেন। এভাবে গ্রামের মানুষের চিকিৎসার নামে সামান্য আয় হয় তাঁদের। তবে দৈনিক ১০০ থেকে ২০০ টাকা আয়ে ঠিকমতো ঘোরে না সংসারের চাকা।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের খিলপাড়া এলাকায় বেদেপল্লিতে পাঁচ বছর আগে গড়ে ওঠে ১১ পরিবারের অস্থায়ী বেদেপল্লি। আদি বাড়ি শেরপুরের ঝিনাইগাতিতে। পেটের টানে এভাবে ঘুরে ঘুরে রোজগার করেন পল্লির সদস্যরা। সেখানে শিশু রয়েছে ২৫ জনের মতো। এর মধ্যে স্কুলে যাওয়ার উপযোগী অন্তত ১৫ জন থাকলেও চারজন যায় স্থানীয় ব্র্যাক স্কুলে। অন্যদের সারাদিন ঘুরেফিরে কিংবা খেলা ও পাতা কুড়িয়ে দিন কেটে যায়।

খিলপাড়া এলাকায় সৈয়দ মিয়া নামে এক ব্যক্তির পতিত জায়গায় বিনা ভাড়ায় ১১টি ছাপরা ঘর তুলে বসবাস করছে পরিবারগুলো। শনিবার সেখানে গিয়ে জানা যায়, অনেকে রোজগারের সন্ধানে গ্রামে গেছেন। নারীদের কেউ রান্না করছেন, কেউবা সন্তানকে গোসল করিয়ে দিচ্ছিলেন। কেউ কেউ রোদ পোহাচ্ছিলেন।
কথা হয় বেদেপল্লির সর্দার জসিম উদ্দিনের স্ত্রী দিপালীর সঙ্গে। তিনি জানান, পরিবারগুলো সর্বশেষ সিলেট থেকে এসেছে। একেকটি পরিবারে সদস্য ৫ থেকে ১০ জন। চার শিশু ব্র্যাকের স্কুলে গেলেও অন্যরা শিক্ষা ছাড়াই বেড়ে উঠছে। ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচি আপাতত বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা সমন্বয়ক মো. শফিকুল ইসলাম। অচিরেই চালু হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
দিপালী বলছিলেন, তাঁর স্বামী দুটি বিয়ে করেছেন। তিনি প্রথম স্ত্রী। আছে চার ছেলে। শিশুদের লেখাপড়া করানোর ক্ষমতা নেই। তারাও বড় হয়ে বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখবে। দ্বিতীয় স্ত্রী শেফালী জানান, তাঁর এক ছেলে ও তিন মেয়ে। সব মিলিয়ে সর্দার জসিমের পরিবারের সদস্য ১১ জন। তাঁরা জানান, তাঁরা সাপ খেলা দেখান না। তার পরও তাঁদের সবাই বেদে বলে ডাকেন।
পল্লির বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাঁদের কোনো সম্পদ নেই। এ কারণে ঘুরে ঘুরে জীবন ধারণ করতে হয়। সরকার নজর দিলে তাঁরা কষ্ট থেকে রক্ষা পেতেন। কয়েক দিন আগে কিশোরগঞ্জ-১ আসনের এমপি সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি প্রতিটি পরিবারকে একটি করে কম্বল দিয়ে গেছেন। ৩ হাজার টাকাও দিয়েছেন সবার জন্য।
পল্লির সর্দার জসিম উদ্দিন বলেন, তিনি একজন বাউলশিল্পী। মাসে এক বা দুটি অনুষ্ঠানে গান গাইতে পারেন। একটি অনুষ্ঠানে ১ থেকে ২ হাজার টাকা ভাগে থাকে। ভাসমান জীবনের কারণে তিনি কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় ভোটার হয়েছেন। আবার দু’জন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কাঁটাবাড়িয়া এলাকার ভোটার। কেউ কেউ নিজ এলাকা শেরপুরের ঝিনাইগাতির ভোটার হয়েছেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বণিক বলেন, ঝরে পড়া ও বেদেপল্লির মতো ভাসমান পরিবারের শিশুদের জন্য সরকার উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও শিশুকল্যাণ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে। এসব স্কুলে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বইসহ শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হচ্ছে। বেদেপল্লির শিশুরা এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা নিতে পারে।
সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মামুন আল মাসুদ খান বলেন, বেদেপল্লিতে বিভিন্ন সময় খাদ্য ও বস্ত্র দিয়ে সহায়তা করা হয়। ঈদের আগে ভিজিএফের চাল পায়। সেমাই, চিনি ও দুধ দেওয়া হয়। কম্বলও পাচ্ছেন তাঁরা।