পুরুষদের আমি ঘৃণা করি: মধুমিতা

আগামী ২০ জানুয়ারি মুক্তি পেতে যাচ্ছে মধুমিতা সরকার অভিনীত ছবি ‘দিলখুশ’। রাহুল মুখোপাধ্যায় পরিচালনায় এতে তিনি অভিনয় করেছেন সোহম মজুমদারের সঙ্গে। এই সিনেমা মুক্তির আগে কলকাতার গণমাধ্যম আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি হয়েছিলেন মধুমিতা।

সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি প্রচুর কাজ করতে চেয়েছিলাম। নিজেকে সারাক্ষণ ব্যস্ত রাখতে চেয়েছিলাম। তেমনটাই হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে কাজ করছি। তবে মুড়িমুড়কির মতো সবই এক ধরনের কাজ করছি না। বিভিন্ন ধরনের কাজ করছি, সেটাই ভালো লাগছে।’

মধুমিতার নিজের লক্ষ্য কতটা পূরণ হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে অভিনেত্রী বলেন, ‘এখনও কিছুই হয়নি। আমি শুধু এগিয়ে চলেছি। কিন্তু গতি এখনও লক্ষ করছি না। ঠিক যতটা গতিতে এগোনো দরকার, ঠিক ততটা হচ্ছে না। শুধু তো বাংলায় নয়, আমি বাংলার বাইরেও কাজ করতে চাই। অন্য ভাষায়, অন্য ইন্ডাস্ট্রিতে।’

তেলুগু ছবিতে অভিনয়ের বিষয়ে মধুমিতা সরকার বলেন, ‘সেটা এক অন্য জগৎ। আমায় মার্শাল আর্টস শিখতে হয়েছে। তাই জন্য আমায় অনেকটা ওজন বাড়াতেও হয়েছিল। আমার এই বিষয়টা শিখতে দারুণ লেগেছে। ওরা সময় নিয়ে কাজ করে। আমায় এক মাস দিয়েছিল মার্শাল আর্টস শেখার জন্য। তার জন্য রক্তারক্তি, কালশিটে কী হয়নি আমার সঙ্গে। আমিও আবার অনেক সময় কারও বুকে লাথি মেরে দিয়েছি।’

এখনো সিঙ্গেল কিনা এমন প্রশ্নে মধুমিতার উত্তরটা ছিল অপ্রত্যাশিতই। অভিনেত্রী বললেন, ‘আমি কাজের সঙ্গে কমিটেড। আর বিশ্বাস করুন, আই হেট ম্যান (আমি পুরুষদের ঘৃণা করি)।

‘বোঝে না সে বোঝে না’ নামে টেলিভিশনের সিরিয়ালে ‘পাখি’ চরিত্রের মাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া মধুমিতার বড় পর্দায় অভিষেক হয় ২০১৭ সালে ‘পরিবর্তন’ নামের একটি সিনেমায়। তবে তিনি পুরোদমে সিনেমায় আসেন ২০২০ সালের ‘লাভ আজ কাল পরশু’ দিয়ে। এরপর তাকে চিনি, টেংরা ব্লুজ প্রভৃতি সিনেমায় দেখা গেছে।




বাধা যখন দুর্নীতি

‘প্রবৃদ্ধি-উন্নয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ’ শীর্ষক সমকালে ৭ জানুয়ারি প্রকাশিত ড. আতিউর রহমানের নিবন্ধটি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর সরকারের কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের দেশ ডিজিটাল থেকে স্মার্ট হিসেবে গড়ে উঠবে। এটি নিঃসন্দেহে সাম্প্রতিক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত।
স্মার্ট সরকার ব্যবস্থায় সরকারের সব সেবা স্মার্ট পদ্ধতিতে হতে হবে, যেখানে কোনো ভোগান্তি ও হয়রানি থাকবে না। কিন্তু ডিজিটাল হওয়ার পরও আমরা কতটা সুষ্ঠুভাবে সেবা পাচ্ছি? শিক্ষাব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ স্মার্ট করে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা এখন চরম বিপর্যয়ের মধ্যে। দেশে মেধার চর্চা নেই বললেই চলে, রয়েছে শুধু নম্বর চর্চা।
এ ছাড়া যে বিষয়ে পড়াশোনা, সে বিষয় সংক্রান্ত চাকরির সুযোগ হাতেগোনা কয়েক জায়গায়। এই যে এক বিষয়ে পড়াশোনা করে অন্য বিষয়ে চাকরি করছি, এতে আমার অর্জিত বিশেষায়িত জ্ঞানের কোনো মূল্যায়ন হবে না। অসুস্থতায় যেন ঘরে বসেই অফলাইন ক্লাসের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের সাইবার নিরাপত্তার জায়গা আগের চেয়ে কিছুটা উন্নত হয়েছে। আমাদের বাধ্যতামূলক আইসিটি শিক্ষার প্রচলন করতে হবে। কেননা, জাতি প্রযুক্তিতে দক্ষ না হলে কোনো কিছুতেই দক্ষ হবে না। স্কুল পর্যায়ে সরকার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করে দিলেও বিদ্যালয়ের কোনো কোনো শিক্ষক সেখানে অবৈধভাবে বাণিজ্যিক কোর্স করিয়ে থাকেন! এ ক্ষেত্রে আইটি কোর্স হওয়া উচিত বিনামূল্যে। সরকারি প্রকল্প ও নিয়োগের কথাও আলোচনায় আসতে পারে। বেশিরভাগ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ে। যার অর্থ একদিকে কাজে গাফিলতি, অন্যদিকে টাকা আত্মসাৎ। এ ছাড়া চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া হতে হবে অল্প সময়ে; কোনো ভোগান্তি ছাড়াই। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যেমন স্মার্ট কর্মকর্তা খোঁজা হয়, সরকারি নিয়োগেও চাই মেধার সঙ্গে স্মার্টনেসের সমন্বয়।
জাজিরা, শরীয়তপুর




নতুন মুদ্রানীতি কী করতে পারবে?

বাংলাদেশের মতো অনেক বিকাশমান অর্থনীতিতেই কভিড-পরবর্তীকালে, বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মূল্যস্ম্ফীতি অনেকটা প্রধান সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে নীতিভ্রম, আর্থিক খাতে তারল্য সংকট, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা, এমনকি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতায় সুশাসনের অভাব সাধারণ মানুষের জীবনমানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। নিম্ন সুদহার যেমন ক্ষুদ্র আমানতকারীদের নিরুৎসাহিত করছে, সেই সঙ্গে নিম্ন সুদে ভুল খাতে টাকা গিয়ে ঋণখেলাপি সংস্কৃতিকে চরমভাবে উৎসাহিত করছে।

আগেই যেমনটি বলেছি, শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রায় সারাবিশ্বে এক নম্বর সমস্যা এখন মূল্যস্ম্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। বাংলাদেশে আবার ডলারের সংকটও এক বিরাট সমস্যা। সমস্যার সমাধানে মূল্যস্ম্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জিনিসপত্র অতিরিক্ত ক্রয় নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যাতে মানুষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য না কেনে। অন্যদিকে পণ্যের জোগান বাড়িয়ে ফেলা যায়।

এ দুটি ব্যবস্থা দিয়ে সাধারণত যে কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বাজারে যে পরিমাণ অতিরিক্ত তারল্য থাকে, সেটি ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। সারাবিশ্বে তা-ই ঘটছে। এখন মানুষের চাহিদা বেড়ে গেছে। এই অতিরিক্ত চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এটি করতে হলে অন্য অনেক দেশের মতো নীতি সুদহার বাড়াতে হবে।

এটিও আবার মনে রাখতে হবে- এ সময়ের মূল্যস্ম্ফীতি হলো অনেকটা আমদানি করা মূল্যস্ম্ফীতি। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ব্যবস্থাপনাও খুব জরুরি। আমাদের দেশে একাধিক বিনিময় হার আছে। সেটিকে একটি বিনিময় হারে আনা যায় কিনা ভাবতে হবে।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা করছে বলে কিছুদিন ধরে শোনা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এখনও দেখা যায়নি। আমাদের আমদানি অর্থবছরের গেল ছয় মাসে প্রায় ২২ শতাংশ কমেছে। রপ্তানিও বেড়েছে। তবে ডলারের সংকট কাটেনি। ঋণপত্র খোলা, এমনকি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য এখনও বিদেশে টাকা পাঠানো দুরূহ।

অনেকে মনে করেন, আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল্যস্ম্ফীতি নিয়ন্ত্রণই একমাত্র লক্ষ্য হতে পারে না। বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতিতে এটি হবে একটি উন্নয়নমুখী কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বহু লক্ষ্য থাকতে হবে। এটি যেমন উৎপাদনশীল খাতের বিকাশে সাহায্য করবে, তেমনি জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবুজ অর্থায়নও জোরদার করবে।

বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের ক্ষেত্রেও আরও দক্ষতা দেখাতে হবে। সাম্প্রতিককালে মুদ্রানীতি নিয়ে আলোচনায় ক্যানভাস অনেক বড় হয়ে গেলেও, অনেকেই সব মিলিয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ মুদ্রানীতি চেয়েছেন। অনেকেই এটিকে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি বলতে নারাজ। বলছেন, উন্নয়ন সমর্থক একটি ভারসাম্যপূর্ণ মুদ্রানীতি। যেখানে মূল্যস্ম্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা এবং উন্নয়নকে সমর্থন করা হবে।

জানা কথা, আমাদের অর্থনীতির সামনে মূল্যস্ম্ফীতি আর ডলারের সংকট বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে উন্নত বিশ্বের এই মন্দার ধাক্কা উন্নয়নশীল বিশ্বেও পড়ছে এবং আরও পড়বে। যেসব অর্থনীতির দেশ রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল, তারা আরও বেশি মন্দার কবলে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যেমনটি বলেছি, আমরা ডলারের সংকট মোকাবিলার জন্য এ পর্যন্ত আমদানিকে চেপে রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু এটিও জানা, আমদানিকে এভাবে চেপে রাখলে নিকট ভবিষ্যতে উৎপাদন ব্যাহত হবে। এমনকি রপ্তানি খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই একে বেশিদিন জোর করে চেপে রাখা যাবে না। এ নীতি থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বের হতেই হবে।

বর্তমানে একটি মুদ্রানীতি চলমান। এখন দেখার বিষয় অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে যা ঘটেছে, বিশেষ করে মূল্যস্ম্ফীতির ক্ষেত্রে, তার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাকি ছয় মাসের জন্য নীতিতে কী কী পরিবর্তন আনে। তাদের ভাবতে হবে করণীয় যতটুকুই হোক না, তাতে তারা কী করবে। এটিও সত্য, মূল্যস্ম্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কোথাও শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করে না।

পত্রিকান্তরে জানা গেছে, সরকারের ঋণগুলো পুরোপুরি অর্থায়ন হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এবং এর পরিমাণ ইদানীংকালে বিরাট অঙ্কে বেড়েছে। যা টাকা ছাপিয়ে করা হয়েছে। ফলে রিজার্ভ মানির পরিমাণ বেড়ে যায়, যদিও এর প্রভাব এখনও মূল্যস্ম্ফীতির ওপর বিরাটভাবে পড়েনি। একটি কারণ হয়তো একদিকে যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে টাকা দিয়েছে, অন্যদিকে বড় অঙ্কের ডলার বিক্রি করেছে। বিপরীতে প্রচুর টাকা ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে এসেছে। মোট মুদ্রা সরবরাহের ওপরে তেমন প্রভাব পড়েনি। কিন্তু ডলার বিক্রি বাংলাদেশ ব্যাংক আর বেশি দিন করতে পারবে না। রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। সরকারের ঋণও ব্যাপকভাবে বাড়ছে। তাই বাজেট ঘাটতিতে যে অর্থায়ন করা হচ্ছে, তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক আমলে না নিলেও আমরা কয়েকজন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকার বারবার বলছি- মুদ্রানীতিকে মূল্যস্ম্ফীতির কাজে ব্যবহার করতে হলে সুদহারের ওপরে যে ক্যাপ বা সীমা আছে, তা তুলে দিতে হবে। সুদহারের সীমা যদি বাজার বা মূল্যস্ম্ফীতির হারের অনেক নিচে থাকে, তাহলে মুদ্রানীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ম্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে কীভাবে? মুদ্রানীতি মূল্যস্ম্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজে আসে তখন, যখন সুদহার ওঠানামা করার সুযোগ থাকে।

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো রেট দুই দফা বাড়িয়েছে। এটি বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই, যদি ঋণের সুদহার অপরিবর্তিত থাকে। ব্যক্তিঋণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক পরোক্ষভাবে কিছুটা ছাড় দিয়েছে। যদিও এটির কোনো ঘোষণা বা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। সব ব্যাংক তো একভাবে মৌখিক নীতি অনুসরণ করতে পারে না। এ ধরনের মৌখিক নীতি অনেকটাই অস্বচ্ছ, এমনকি ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই এটির ওপর ভরসা করতে পারছে না অনেক ব্যাংক।

বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের ক্ষেত্রে যে বিভিন্ন হার চলছে, সেটিও চলতে পারে না। এটি ডলারের তারল্যে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বারবার বলছে, তারা ভাসমান নীতিতে চলে আসবে। কিন্তু আসছে না। ভাসমান নীতি গত বছরের মার্চের আগেও কার্যকর ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক হয়তো বলতে পারে- এটি তো আমরা করিনি, করেছে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)। তবে প্রায় সবাই মনে করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের আশীর্বাদেই বিভিন্ন বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয়েছে। এটিও তেমনি আরেকটি অঘোষিত নীতি।

নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে এত লুকোচুরি রেখে আর দু-একজনের মেধার ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশ ব্যাংক কীভাবে মুদ্রানীতি কার্যকর করবে- সেটিই হবে দেখার বিষয়।

মামুন রশীদ: ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্নেষক




সাবেকদের আড্ডায় অতীত ফিরল বর্তমানে

‘পুরানো সেই দিনের কথা, ভুলবি কিরে হায়…আয়রে সখা প্রাণের মাঝে আয়/ মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়’। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত গানের আবেদনে আজ শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ চত্বরে বিভাগের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সম্মিলন ঘটে। আড্ডায়, গল্পে তারা মেতে ওঠেন স্মৃতিচারণে, অতীত রোমন্থনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদ বিজ্ঞান অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (ডুবা) এ আয়োজন করে।

শীতের সকালে কুয়াশা কাটতে না কাটতে সকাল আটটা থেকে বিভাগ চত্বর মুখর হয়ে ওঠে প্রাক্তন গ্র্যাজুয়েটদের পদচারণায়। ১০টায় শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন সংসদ সদস্য ও বিভাগের সাবেক ছাত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, বিশেষ অতিথি ছিলেন হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান শিক্ষা ও গবেষণার গুণগতমান বৃদ্ধিতে বিভাগে মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণা পরিচালনার লক্ষ্যে একটি করে গবেষণা ফান্ড প্রতিষ্ঠার জন্য অ্যালামনাইদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় যেমন সমৃদ্ধ হবে তেমনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পাবে।

হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, আজ থেকে একশ বছর আগে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী মফস্বল থেকে আসত। পাট, ধান বিক্রি করে বাবারা খরচ জোগাতেন। আজকেও পরিসংখ্যান তেমন বদলায়নি। মফস্বল থেকে শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষে যখন ভর্তি হয়, তারা কিছুই জানে না। তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব।

তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমরা পাঁচ ভাই, চার বোন। যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হতো তাহলে আমার বাবা কিন্তু আমাদের পড়াতে পারতেন না। আমার বাবার সেই সক্ষমতা ছিল না। তাহলে আমারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া হতো না। অনেকে এখান থেকে অনার্স, মাস্টার্স পাস করে বিদেশে যাচ্ছে, প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। আমি বিভাগের চেয়ারম্যান-শিক্ষকদের আহ্বান করব, তাদের একটি ডাটাবেজ থাকবে, তাদের সঙ্গে যেন যোগাযোগ রাখা হয়। শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিং করতে হবে। তাদের বুঝাতে হবে সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি দিয়েছে, সেই দায়িত্ববোধ থেকে সাবেকরা যদি পাশে এসে দাঁড়ায় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হবে।

এ সময় তিনি বিভাগের চেয়ারম্যানকে সাবেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা এবং বিভাগের কাজে তাদের যুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে ১০ লাখ টাকা প্রদান করেন।

মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, উন্নত বিশ্বে সাবেকদের অবদানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আমাদেরও এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গবেষণা ও উদ্ভাবনে ভূমিকা রাখতে হবে।

বিভাগ থেকে ১৯৯৫ সালে পাস করেছিলেন গোলাম ফারুক। বর্তমানে তিনি দিনাজপুর জেলার শিক্ষা অফিসার পদে রয়েছেন। অনুভূতি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে অনেক স্মৃতি। বন্ধুবান্ধবসহ একবার সুন্দরবন গিয়েছিলাম। এখনও মনে আছে। এখন সবাই ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় আছি। তাদের সবার সঙ্গে দেখা হলো, আড্ডা দিলাম। এ জন্যই এতদূর থেকে এলাম।

অনুষ্ঠানে বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এ জেড এম নওশের আলী খান ও অধ্যাপক সৈয়দ হাদীউজ্জামান, ঢাকা আইডিয়াল কলেজের সাবেক অধ্যাপক এম এ বারী, দুর্নীতি দমক কমিশনের সচিব মো. মাহবুব হোসেনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

এ ছাড়া বিভাগের ২০১৯ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করায় শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসীকে ড. মো. আতহার উদ্দিন স্বর্ণপদক এবং বিভাগের ৪৩ জন শিক্ষার্থীকে এককালীন বৃত্তি প্রদান করা হয়।

উদ্ভিদবিজ্ঞান অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আতহার উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা এবং সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আসফাক আহমদ।

এ ছাড়া শনিবার মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এবং আরবী বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভা ও পুনর্মিলনী পৃথক পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত হয়।




মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায়, টানা শৈত্যপ্রবাহে জবুথবু জনজীবন

পঞ্চগড়ে বইছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। এর মধ্যে আজ শনিবার সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ মৌসুমে সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার মৌসুমের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায়।

আজ সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ। এর আগে ৫ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত পঞ্চগড়ে টানা চার দিন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। ৯ জানুয়ারি তাপমাত্রা আরও কমে শুরু হয় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। এর পর থেকে আজ শনিবার পর্যন্ত তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি থেকে ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করেছে। তবে প্রায় প্রতিদিনই সকাল সকাল রোদের দেখা মিলেছে।

আজ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার দিনে সকালে সূর্য উঁকি দিয়েছে। তবে সঙ্গে ছিল উত্তরের হাড়কাঁপানো হিমেল হাওয়া। শীত উপেক্ষা করেই গরু নিয়ে হালচাষে নেমেছেন পঞ্চগড় সদর উপজেলার ডুডুমারী এলাকার কৃষক কবির হোসেন (৫৮)। আজ সকাল ৯টার দিকে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। শীতের প্রসঙ্গ তুলতেই কবির হোসেন বলেন, ‘রাতিত যে ঠান্ডা ছিল, ওইখান ঠান্ডা এলা (এখন) থাকিলে কাজ করা কঠিন হয়ে গেল হয় বাপু। ভাগ্য ভাল সকালে রোদ উঠিচে, কাজ-কাম করা যাছে, কিন্তু মাটির ঠান্ডায় পাওলা (পা) পটপট করেছে। কষ্ট হলে কী করিবেন! হামরা কৃষক মানসি (মানুষ), কাজ তো করিবায় নাগিবে।’

তীব্র এই শীতে কবির হোসেনের মতো নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। উত্তরের হিমেল বাতাসের সঙ্গে কুয়াশার দাপটে জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। সকাল পৌনে ১০টার দিকে রিকশাচালক মো. নুরনবী বলেন, ‘প্রত্যেক দিন বিকাল হইলে যে একখান ঠান্ডা বাতাস আচ্চে, ওই বাতাসে খুব ঠান্ডা হচ্চে। বেশি রাইত পর্যন্ত রিকশা চালা যায় না। এইতানে (এ জন্য) সকালে রোদ দেখে বাইর হইচু। বিকাল হইতে হইতে বাড়ি যাবা নাগিবে (লাগবে)।’

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ প্রথম আলোকে বলেন, তেঁতুলিয়ায় বর্তমানে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাত পর্যন্ত শীত কিছুটা কম অনুভূত হয়েছিল। তবে আজ ভোর থেকেই হঠাৎ তাপমাত্রা কমতে থাকে। তবে সকাল সকাল রোদ ওঠায় মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। আকাশ মেঘ ও কুয়াশামুক্ত থাকায় সূর্যের তাপ ভূপৃষ্ঠে ছড়াতে পারছে। এতে শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও শীত তুলনামূলক কম অনুভূত হচ্ছে।




ব্রহ্মপুত্র নদের পানি দূষণ রোধে মানববন্ধন

দখল-দূষণে দেশের বেশিরভাগ নদী স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে অনেক আগেই। বর্তমানে নদী দখলের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, অনেক নদী মরা খালে পরিণত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার ব্রামন্দী ইউনিয়নের উৎরাপুর গ্রামের পাশে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদের পানিরও একই দশা। এই নদের পানি ও পরিবেশ দূষণ রোধে মানববন্ধন হয়েছে।

শনিবার ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে যৌথ উদ্যোগে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), রিভারাইন পিপল, সুবর্ণগ্রাম ফাউন্ডেশন, উৎরাপুর আদর্শ সমাজকল্যাণ সংঘ এবং পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ রক্ষা আন্দোলন।

মানববন্ধনে বক্তারা দাবি জানান, শিল্পকারখানার রাসায়নিক পদার্থের সামান্য অংশও যাতে খাদ্যচক্রে প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এ অবস্থায় ব্রহ্মপুত্র নদ দূষণ রোধে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সারাদেশের শিল্পকারখানায় এসব ক্ষেত্রে বিদ্যমান অনিয়মগুলো খুঁজে বের করতে দেরি হলে দেশের বিভিন্ন নদীর বিস্তীর্ণ এলাকায় দূষণ ছড়িয়ে পড়বে। ব্রহ্মপুত্রসহ দেশের সব নদীর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ফিরিয়ে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

উৎরাপুর আদর্শ সমাজকল্যাণ সংঘের সভাপতি মো. নাদিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. হামিদুল্লাহ সরকার। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং পবার নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক কবি ও মানবাধিকার কর্মী শাহেদ কায়েস, রিভারাইন পিপল-এর সোনারগাঁ শাখার কার্যনির্বাহী সদস্য লেখক শংকর প্রকাশ, গোলাম রাব্বানী শিমুল, উৎরাপুর আদর্শ সমাজকল্যাণ সংঘের সহসভাপতি মো. আলী আশরাফ, মো. ওমর ফারুক লিটন, মোহাম্মদ জোনায়েদ, নাহিদ সরকার, সজিব মিয়া, হাজী মো. সিরাজুল ইসলাম খোকন, মমতাজউদ্দিন মিয়া, মাহবুবুর রহমান শোয়েব প্রমুখ।




শাহরুখের ছবির অগ্রিম টিকিট কেটে নিচ্ছেন ৫০ হাজার ভক্ত!

তিন বছর পর বড় পর্দায় আসছেন শাহরুখ খান। তার আগেই যেনো গা জ্বালা ধরিয়েছেন সমালোচকদের। ‘পাঠান’ ছবির ‘বেশরম রং’ গানটি মুক্তির পর তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে। এর মাঝে সিনেমাটির ট্রেলার মুক্তির ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর আসে ট্রেলার। । আগামী ২৫ জানুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি। দিনটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন শাহরুখ ভক্তরা।

এদিকে জানা গেছে, ২৫ জানুয়ারি ‘পাঠান’ মুক্তির প্রথম দিন শাহরুখের ফ্যান ক্লাব ‘এসআরকে ইউনিভার্স’ বিশেষ আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। শাহরুখের সিনেমা মুক্তি পাওয়ার দিনটা ভক্তদের কাছে উৎসবের মতো। তাই ‘এসআরকে ইউনিভার্স’ ভারতে জুড়ে ৫০ হাজার ভক্তদের জন্য ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো-র আয়োজন করবে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম পিংকভিলাকে ফ্যানক্লাব এসআরকে ইউনিভার্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা যশ পারিয়ানি নিশ্চিত করেছেন যে, তারা ভারতের ২০০টিরও বেশি শহরে পাঠানের শো-র আয়োজন করবে। শুধুমাত্র এই শো থেকেই ন্যূনতম ১ কোটি টাকার বুকিং আশা করা হচ্ছে। যেখানে মুম্বাইতে প্রথমদিনে ৭ থেকে ৮টি ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো-র আয়োজন করা হয়েছে, দিল্লিতে হবে ৬টি। একইভাবে, অন্যান্য শহরেও একাধিক শো’র আয়োজন করা হচ্ছে।

তবে এই উদযাপন শুধুমাত্র প্রথম দিনেই হবে না, চলবে প্রজাতন্ত্র দিবস পর্যন্ত। যশ পারিয়ানি আরও জানান, ‘আমরা পাঠানের জন্য বিশেষ সামগ্রীও বিতরণ করব। বিশেষ কাট আউট আর ঢোল। আমার ধারণা, শাহরুখের সিনেমাগুলোকে উৎসবের মতো উদযাপন করা হয়। পাঠানের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না।




রাহুলের যাত্রায় মোদি-উত্তর ভারতের ইঙ্গিত দিচ্ছে

ভারতের স্বাধীনতার নায়ক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর সুস্পষ্ট অনুকরণে দেশটির প্রধান বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী বর্তমানে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চলমান পদচারণার শেষ পর্যায়ে আছেন। সমালোচক ও সংশয়বাদীদের উপেক্ষা করে তাঁর কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারেরও বেশি হেঁটে অতিক্রমের এ যাত্রা স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকলেও রাজনৈতিক প্রতিবাদ ও জনসমাবেশের দিক থেকে সফল হয়েছে। তিন মাস ধরে ভারত জোড়ো যাত্রা বা ভারতের ঐক্যের জন্য এ পদযাত্রা সচেতন মানুষদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ সৃষ্টি করেছে।

পদযাত্রাটি মঙ্গলবার রাতে উত্তরের পাঞ্জাব রাজ্যে প্রবেশ করেছে। এ পথেই এটি তার সমাপ্তি টানতে ভারত শাসিত কাশ্মীরের উচ্চশিখরে পৌঁছবে। এত দীর্ঘ পথ চলতে গিয়ে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মুখ রাহুল বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রকে একটি নতুন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি উপহার দিচ্ছেন; প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) রাজনৈতিক হিন্দুত্ববাদ বা হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পথরেখাও তৈরি হচ্ছে এ পদযাত্রায়।

যাত্রা শব্দটি ভারতে সাধারণত হিন্দু তীর্থযাত্রা বোঝাতে ব্যবহূত হয়। তবে রাহুলের এ যাত্রার লক্ষ্য রাজনৈতিক মুক্তি। এটি কংগ্রেস দলকে পুনরুজ্জীবিত করেছে, যাঁকে ধারাবাহিক নির্বাচনী পরাজয় এক দশক ধরে প্রায় স্থবির করে রেখেছিল। বিজেপি যাঁকে বরাবর অপেশাদার রাজনীতিবিদ হিসেবে আখ্যায়িত শুধু নয়, নির্দয় উপহাসও করে আসছে; সেই রাহুল আজ গণআবেদনধারী একজন নেতা হিসেবে আবির্ভূত।

আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি এবং সবার জন্য সমৃদ্ধির একটি সহজ বার্তা নিয়ে চলমান এ মহাকাব্যিক পদযাত্রার মূল মনোযোগ হলো সাধারণ মানুষের সঙ্গে জঙ্গমক্রিয়ার ওপর। প্রতিদিন প্রতিটি যাত্রাবিরতিতে রাহুলের সহকারীরা তাঁদের নেতার সঙ্গে কৃষক ও শ্রমিক, যুবক ও বৃদ্ধ, পুরুষ ও নারী, এমনকি শিশুদের সঙ্গেও মোদি সরকারের অধীনে তাদের ছিন্নভিন্ন স্বপ্ন সম্পর্কে যে কথোপকথন হয়, তা নথিবদ্ধ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এগুলো ভারতীয় অর্থনীতির জীবন্ত বাস্তবতার খণ্ড খণ্ড চিত্র তুলে ধরে; যেখানে উচ্চ বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ম্ফীতির কথা উঠে আসে। যে সরকারের আমলে এটা ঘটছে, সে প্রতিশ্রুতিতে চ্যাম্পিয়ন হলেও তার বাস্তবায়নে খুবই দুর্বল।

রাহুল গান্ধীর বার্তা হলো- মোদির প্রবল হিন্দুত্ব ভারতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্ভাবনাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এসব বার্তার পাশাপাশি দাড়িওয়ালা বিরোধী নেতার সঙ্গে মানুষের আলিঙ্গন ও সেলফির জন্য হুড়াহুড়ি রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের পাশাপাশি মিডিয়াতেও নতুন এক ল্যান্ডস্কেপ তৈরি করেছে, যা এতদিন ছিল মোদির একচেটিয়া দখলে। আট বছর আগে ক্ষমতায় আরোহণের পর এই প্রথম মোদি এক ধরনের নীরবতা পালন করছেন। রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রা নিয়ে কিছুই বলছেন না তিনি।

রাজনৈতিক এ বার্তা প্রকৃতপক্ষে বহুসংস্কৃতি বা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি এবং হিন্দু আধিপত্যবাদী নীতির মধ্যে সংঘর্ষের কথা বলছে। কিন্তু এটি স্পষ্ট- এ পদযাত্রা সেই যুদ্ধের কাঠামো তৈরি করে দিয়েছে; যার এক প্রান্তে আছেন একজন, যিনি ভারতীয়দের চাঙ্গা করছেন এবং অপর প্রান্তে আছেন তিনি, যিনি তাঁদের বিভক্ত করছেন।

মোদি ও বিজেপি দীর্ঘকাল ধরে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে আসছে; যে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির কার্যত প্রতিনিধি গান্ধী পরিবার। ওদের বক্তব্য হলো, গান্ধী পরিবার ভারতকে দুর্নীতিগ্রস্ত ও ক্ষয়িষুষ্ণ করে দিয়েছে এবং এর মাধ্যমে দেশটিকে বিশ্বব্যবস্থায় তার যোগ্য স্থান থেকে বঞ্চিত করেছে। রাহুল গান্ধীর প্রমাতামহ জওহরলাল নেহরু, দাদি ইন্দিরা গান্ধী এবং বাবা রাজীব গান্ধী- সবাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এসব জপেই মোদি ২০১৪ ও ‘১৯ সালের নির্বাচনে বিশাল ম্যান্ডেট পেয়ে যান এবং বিদ্যমান ব্যবস্থার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি যুক্ত রাজনৈতিক অভিজাতদের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভকে ব্যবহার করে তাঁর সহিংস হিন্দুত্বকে আড়ালের সুযোগ তৈরি করেন। মোদি নিজেকে একজন শক্তিশালী কিন্তু জনতুষ্টিবাদী হিসেবে তুলে ধরেছেন, যিনি এই তথাকথিত প্রাচীন শাসনের বিরুদ্ধে উঠে এসেছেন। বর্তমানে আইন থেকে রাজনৈতিক বক্তৃতাবাজি- সবখানেই মোদি ভারতের জন্য একটি আগ্রাসী ‘হিন্দু প্রথম’ এজেন্ডা মূর্ত করে চলেছেন। নাগরিকত্বে ধর্মীয় বৈষম্য প্রবর্তনকারী প্রস্তাবিত আইন থেকে শুরু করে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নিয়মিত সহিংসতা- সবখানে মোদির এজেন্ডা হলো, ভারতকে ঢেলে সাজিয়ে একটি মাত্র সংস্কৃতির উন্নয়ন ঘটানো।

৫২ বছর বয়সী রাহুল গান্ধী দীর্ঘদিন ধরে একটি রাজবংশের চতুর্থ প্রজন্ম হিসেবে নিন্দিত হয়েছেন। তবুও বিশেষত তাঁর পারিবারিক ইতিহাসের কারণে ক্ষমতা ও সহিংসতা সম্পর্কে রাহুলেরই দীর্ঘ ও নিবিড় জ্ঞান রয়েছে। তাঁর দাদি ও বাবা দু’জনকেই হত্যা করা হয়। রাজনৈতিক পদ-পদবি ও ক্ষমতার ফাঁদ এড়িয়ে জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনে তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। তিনি বুঝতে পেরেছেন, মোদির শক্তিশালী কৌশলগুলো সফলভাবে মোকাবিলা তখনই করা যাবে যখন এসব অপকৌশলের ভুক্তভোগী মানুষ একসঙ্গে দাঁড়াবে এবং হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে সামান্যতম সমালোচকদেরও- যাঁরা এ হিন্দুত্বের কারণে জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে বলে মনে করেন; এক ছাতার নিচে আনা যাবে।

মোদি কর্তৃত্ব ও জনতুষ্টিবাদের মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রকাশ করে চলেছেন। অন্যদিকে রাহুল জনগণের সঙ্গে একটি সহানুভূতিশীল সংযোগ তৈরি করতে চাচ্ছেন। ভারতের বিভিন্ন অংশের মানুষের মধ্যে একটি আনুভূমিক মৈত্রীর সন্ধানরত এ যাত্রার বার্তা হলো- নির্ভীকতার রাজনীতিকে শক্তিশালীকরণ। এটি করার মাধ্যমে যাত্রা স্বাধীন ভারতের ভিত্তি বলে পরিচিত বৈচিত্র্য ও ন্যায্যতার নীতিগুলোকে পুনঃআবিস্কার করতে চায়। লক্ষণীয়, এ যাত্রা সহিংসতা এবং পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতির প্রভাবশালী আখ্যানকে ভোঁতা এবং মোকাবিলা করার জন্য প্রেম, মৈত্রী ও ত্যাগের মতো আবেগধর্ম এক সহজ রাজনৈতিক চিত্রনাট্যের ওপর জোর দিয়েছে।

প্রায় এক শতক আগে জাতির পিতা গান্ধীর বিখ্যাত লবণ যাত্রা (সল্ট মার্চ) ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এবং ভারতীয় রাজনৈতিক অভিজাতদের একইভাবে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। কারণ তিনি রাজনৈতিক পদ-পদবি ও ক্ষমতা পরিত্যাগ করেছিলেন, কিন্তু সাধারণ ভারতীয়দের সাহসী আশায় আলোকিত করেছিলেন। তিনি রাজনীতির রূপান্তর এবং রাজনৈতিক সম্পর্কের নতুন সংজ্ঞা খুঁজছিলেন। নিঃসন্দেহে তিনি তাতে সফল হয়েছিলেন।

দুই গান্ধীর মধ্যে তুলনা করা হলে তা নিশ্চয়ই হাস্যকর ও বোকামি হবে। আজকের প্রতিযোগিতা কোনো বিদেশি সাম্রাজ্যিক শক্তিকে উৎখাত করা নিয়ে নয়। এটি ভারতের ভবিষ্যৎ পরিচয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ ও নিবিড় পছন্দ-অপছন্দের বিষয়।

কিন্তু মোদি ও বিজেপির দেখানো পথের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি পথ দেখানোর মাধ্যমে ভারত জোড়ো যাত্রা ২০২৪ সালের নির্বাচনী যুদ্ধে লড়ার একটি মোক্ষম কৌশল পেতে সাহায্য করেছে। প্রায় এক দশক ধরে মোদি ও হিন্দুত্ব দ্বারা আচ্ছন্ন থাকার পর ভারতীয় গণতন্ত্র শেষ পর্যন্ত আদর্শ, আবেগ ও ব্যক্তিত্বকেন্দ্রিক একটি সত্যিকারের প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বলে মনে হয়।

স্রুতি কাপিলা: ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় ইতিহাস ও রাজনীতিবিষয়ক অধ্যাপক; আলজাজিরা ডটকম থেকে ভাষান্তর সাইফুর রহমান তপন




উন্মোচনের আগেই স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৩’র ছবি ফাঁস

স্যামসাংয়ের বহুল কাঙ্ক্ষিত স্মার্ট ডিভাইস ‘গ্যালাক্সি এস২৩’ উন্মোচন হতে পারে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি। নতুন ডিভাইনটি উন্মোচনের দিন ঘনিয়ে এলেও ডিভাইসটি দেখতে কেমন হবে বা এতে কী ধরনের ফিচার থাকছে, তার কিছুই অবশ্য এখনও প্রকাশ করেননি স্যামসাং।

তবে স্যামসাং না জানালেও ডিভাইসটির আসল ছবি ও ডিজাইন ফাঁস করার দাবি জানিয়েছে জার্মান প্রযুক্তি সাইট উইনফিউচার।

উইনফিউচারের বরাতে প্রযুক্তিনির্ভর সংবাদমাধ্যম ভার্জ জানিয়েছে, কালো, সাদা, সবুজ ও গোলাপি রঙে পাওয়া যাবে স্যামসাং ‘গ্যালাক্সি এস২৩’। ডিভাইসটিতে থাকতে পারে উজ্জ্বল ‘ওলেড’ ডিসপ্লে, কোয়ালকমের দ্বিতীয় প্রজন্মের ফ্ল্যাগশিপ প্রসেসর ‘স্ন্যাপড্রাগন ৮’। ডিভাইসটির পেছনে থাকবে তিন ক্যামেরার সেটআপ।

ভার্জের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘গ্যালাক্সি এস ২২’-এর তুলনায় ‘গ্যালাক্সি এস২৩’-এর ক্যামেরা সেটআপেও পরিবর্তন আসবে।

এর আগেও একাধিকবার স্যামসাং ডিভাইসের আগাম খবর ফাঁস করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল উইনফিউচার। ধারণা করা হচ্ছে, প্ল্যাটফর্মটির এবারের খবরও সঠিক হবে।




ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য মমতা: অমর্ত্য সেন

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি। খবর এনডিটিভির

২০২৪ সালে ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার নির্বাচন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জন্য একক ঘোড় দৌড় হবে বলে মনে করলে সেটা ‘ভুল হবে’। দেশটির আগামী নির্বাচনে কয়েকটি আঞ্চলিক দলের ভূমিকা ‘স্পষ্টভাবে গুরুত্বপূর্ণ’ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন তিনি।

অমর্ত্য সেন বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির বিরুদ্ধে জনগণের হতাশাকে কাজে লাগাতে সক্ষম হবেন কিনা তা এখনও প্রতিষ্ঠিত নয়।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি কয়েকটি আঞ্চলিক দল স্পষ্টভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমার মতে ডিএমকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দল, তৃণমূলও অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ এবং সমাজবাদী পার্টিরও কিছুটা অবস্থান আছে, তবে সেই অবস্থান বাড়ানো যাবে কিনা আমি জানি না।’

অমর্ত্য সেন বলেন, বিজেপির জায়গা নিতে পারে এমন অন্য কোনও দল নেই, এ ধরনের চিন্তাভাবনাকে আমি ভুল বলে মনে করি। কারণ বিজেপি একটি দল হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, যার একটি দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে এবং ভারতের অন্যান্যদের চেয়ে হিন্দুদের দিকে বেশি ঝুঁকছে দলটি।

ভারতের ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধীদল কংগ্রেসসহ জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) এবং জনতা দলের (ইউনাইটেড) মতো দেশটির কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা একটি নতুন জোট গড়ার ডাক দিয়েছেন। দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন বিজেপির পরাজয় নিশ্চিত করবে বলে এসব দলের নেতারা জোর দিয়েছেন।