দেশের তিন এলাকায় যে কারণে শীত বেশি

দেশের তিনটি এলাকায় মূলত সবচেয়ে কম তাপমাত্রা থাকছে। ফলে ওই এলাকাগুলোর মানুষ শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে। এর মধ্যে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া এবং মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে শীত বেশি থাকে। কারণ, ওই দুই এলাকার কয়েক কিলোমিটার পেছনে হিমালয় পর্বতমালা ও মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকা। হিমালয়ে শীতকালে রীতিমতো বরফ পড়ে।

আর এক যুগ ধরে যশোর ও চুয়াডাঙ্গার প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তন হয়েছে। নদ–নদী শুকিয়ে পানি ও জলীয় বাষ্প কমে গেছে। ফলে শীতের বাতাস কিছুটা উষ্ণ জলীয় বাষ্পের বাধা পাচ্ছে না। এ কারণে তাপমাত্রা কম থাকছে।

দুই সপ্তাহ ধরে দেশের ভেতর দিয়ে যে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা ওই তিন এলাকায় বেশি দিন স্থায়ী হয়েছে। গতকাল শনিবারও দেশের সবচেয়ে শীতল এলাকা ছিল তেঁতুলিয়া। সেখানকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ মৌসুমে সর্বনিম্ন। শ্রীমঙ্গল, চুয়াডাঙ্গা, যশোরেও টানা শৈত্যপ্রবাহ চলছে।

গত ৩০ বছরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায়। ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়—২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবারও চলতি বছরে দেশের সবচেয়ে শীতল এলাকা ছিল ওই তেঁতুলিয়া—৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর শ্রীমঙ্গল ও চুয়াডাঙ্গাতেও গত সপ্তাহে একাধিকবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

উত্তর গোলার্ধ থেকে আসা শীত বাংলাদেশ বা এ অঞ্চলে সরাসরি ঢুকতে পারে না বলে মন্তব্য করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ। তিনি বলেন, হিমালয় থেকে আসা বায়ুর একটি অংশ কাশ্মীর, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের একাংশ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। গরমের দিনে দিল্লির তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে কমতে বাংলাদেশে আসতে থাকে। আবার শীতকালে দিল্লির অতি শীত ধীরে ধীরে কমতে কমতে বাংলাদেশে আসে। শীতের সময় এই উত্তুরে হাওয়া বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশ চুয়াডাঙ্গা দিয়ে ঢোকে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে দেওয়া আজ রোববারের জন্য পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের বেশির ভাগ এলাকায় সকাল থেকে ঘন কুয়াশা আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি থাকতে পারে। বাতাসে জলীয়বাষ্প বেড়ে যাওয়ায় আজ রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টাজুড়ে বরিশাল ছাড়া দেশের সব বিভাগে বৃষ্টি ও শীতল আবহাওয়া থাকবে। সোমবার থেকে সারা দেশে আবারও শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে।




শীতেও হতে পারে পানির ঘাটতি, দেখা দেয় যেসব লক্ষণ

শীতে পিপাসা কম পাওয়ার কারণে অনেকেই পানি কম খান। কিন্তু এতে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। শীতে শরীরে পানির অভাবে নানা রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ নিউ হ্যাম্পশায়ারের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শীতকালে পানিশূন্যতার সম্ভাবনা বেশি বাড়ে । যেহেতু এই মৌসুমি তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ পিপাসা অনুভব করে না, তাই পর্যাপ্ত পানি খেতেও ভুলে যায়। শীতকালে গরম পোশাক পরার কারণে শরীর আরও বেশি গরম হয়ে যায়। ঠান্ডা, শুষ্ক বাতাসে ঘাম আরও দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যায়, যার ফলে শরীরে পানিশূণ্যতা দেখা দেয়।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, শরীরের ৩০ শতাংশ তরল এবং বাকি ৭০ শতাংশ অস্থি ও মজ্জা নিয়ে গঠিত। এই কারণেই বিশেষজ্ঞরা পানিকে জীবনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। মানুষ খাবার ছাড়া কিছু সময় বাঁচতে পারে কিন্তু পানি ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব। অর্থাৎ পানি ছাড়া জীবন কল্পনা করা যায় না।

সাধারণত সবাই পানিশূন্যতার সমস্যা খুব হালকাভাবে নেয়। এর ফলে অনেকেই অসুস্থ হয়ে যান। শরীরে পানিশূন্যতা হলে কয়েকটি উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন-

১. শরীরে পানির অভাব হলে ঠোঁট খুব শুষ্ক হয়ে যায় এবং ত্বক ফাটতে শুরু করে। অনেক সময় ঠোঁট থেকেও রক্ত বেরোতে দেখা দেয়।

২. পানির অভাবে গলা ক্রমাগত শুষ্ক থাকে এবং বারবার তৃষ্ণা লাগে । তখন বারবার পানি খেলেও পিপাসা দূর হয় না।

৩. শরীরে পানির অভাবের ফলে বুকে হালকা জ্বালাপোড়া, অ্যাসিডিটি বা পেটে অস্বস্তি পর্যন্ত হতে পারে। এর সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্টে দুর্গন্ধ হয়। এমনকি ব্রাশ করার পরেও নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ অনুভব করতে পারেন।

এছাড়াও পানি কম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যাসিডিটির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। শীতে ত্বকে শুষ্কতা বাড়তে থাকে এবং ত্বকের সমস্যা বাড়তে থাকে। পানির অভাবে শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রা অনেক কমে যায়।




ত্বকে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রাখবেন যেভাবে

ত্বক সুন্দর রাখতে কে না চায়? কিন্তু ত্বক সুস্থ এবং সুন্দর রাখাটাও বেশ ঝামেলার কাজ। বিশেষ করে যাদের প্রতিদিন বাড়ির বাইরে যেতে হয় বাইরের ধুলা, ধোঁয়া, দূষণে নাজেহাল অবস্থা হয় তাদের ত্বকের। এই পরিস্থিতিতে ত্বক হয়ে ওঠে নিষ্প্রাণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে ত্বকে সঠিকভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে না। সেজন্য ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন,, ত্বকে যখনই কোনও সমস্যা দেখা দেবে, তখনই বুঝতে হবে, তাতে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়েছে। কোনও কারণে রোমকূপগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এজন্য ত্বকে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এর জন্য মেনে চলতে হবে বেশ কিছু সহজ উপায়। যেমন-

১. ত্বকে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রাখতে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। তাহলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে। ত্বকে যদি প্রতিদিন প্রচুর ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা হয় তাহলে সাময়িক হয়তো ত্বক হাইড্রেটেড লাগবে। কিন্তু ত্বক ভিতর থেকে জলীয়ভাব বজায় রাখতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে হবে।

২. ত্বকে যত কম মেকআপ ব্যবহার করা যায়, তত ভালো। কারণ, বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মেকআপ ব্যবহার করলে রোমকূপের মুখগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এতে ত্বকে অক্সিজেন চলাচল সঠিক থাকে না। আর যদিও মেকআপ করতে হয়, তাহলে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই মেকআপ তুলে ঘুমাতে যেতে হবে।

৩. ত্বক পরিস্কার পরিচ্ছ্বন্ন রাখতে হবে। নিয়মিত ক্লিনজিং, টোনিং, স্ক্রাবিং, ময়শ্চারাইজিং করতে হবে। হয়তো ব্যস্ত সময়ে বেশিক্ষণ পরিচর্যা করতে পারছেন না। কিন্তু অল্প সময় পেলেও ত্বক পরিস্কার রাখতে হবে।

৪. ত্বকে মরা কোষ জমে থেকে অক্সিজেন চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এজন্য ত্বক পরিস্কার রাখা দরকার। নিয়মিত স্ক্রাবার ব্যবহার করতে হবে। তাহলে ত্বকের উপর জমে থাকা মরা কোষগুলো দূর হয়ে যায়।




কোন ধরনের মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ?

প্রশ্ন: আমাদের দেশের জনগণ অনেক ধরনের মোজা পরিধান করে থাকেন। কেউ চামড়ার মোজা পরেন। কেউ সুতার পাতলা মোজা পরেন। কেউ নাইলনের মোজা বা তুলার মোজা পরিধান করেন। এখন আমার জানার বিষয় হলো- কোন ধরনের মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ?

উত্তর: আমাদের অনুসন্ধান অনুযায়ী মোজা তিন ধরনের হতে পারে।

১. চামড়ার মোজা। এ ধরনের মোজার উপর সর্বসম্মতভাবে মাসেহ করা জায়েজ। বুট জুতা এবং গামবুটের উপর মাসেহ করা জায়েজ আছে।

ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) বলেছেন, আমি ততক্ষণ পর্যন্ত মোজার উপর মাসাহের প্রবক্তা হইনি, যতক্ষণ পর্যন্ত না বিষয়টি আমার কাছে দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার হয়েছে। (আলবাহরুর রায়েক-১/২৮৮, জাকারিয়া)

হাসান বসরী (রহ.) বলেন, সত্তরজন বদরী সাহাবীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। তাদের প্রতিজনকেই চামড়ার মোজার উপর মাসেহ করতে দেখেছি। (বাদায়েউস সানায়ে-১/৭৭, জাকারিয়া আহকামুল কুরআন, ইমাম জাসসাসকৃত-২/৪২৫)

২. এমন পাতলা মোজা, যা চামড়ারও নয়, আবার চামড়ার মোজার কোন গুণাগুণও তাতে পাওয়া যায় না। যেমন আজকালকার সুতার মোজা, নাইলনের মোজা বা তুলার মোজা ইত্যাদি। এসব মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ হবে না।

আল্লামা কাসানী (রহ.) বলেন, মোজা যদি এতটা পাতলা হয় যে, তা ভেদ করে পানি ভেতরে প্রবেশ করে, তাহলে তার উপর সবার ঐকমত্যে মাসেহ করা জায়েজ নেই। (বাদায়েউস সানায়ে-১/৮৩, জাকারিয়া বুক ডিপো)

৩. এমন মোজা যা চামড়ার নয়; কিন্তু মোটা হবার কারণে চামড়ার মোজার গুণ পাওয়া যায়। এমন মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ আছে, যদি তিনটি শর্ত পাওয়া যায়।

ক. মোজাটি এতটুকু মোটা হতে হবে যে, এর মাঝে পানি পড়লে তা পায়ে পৌঁছে না।

খ. উক্ত মোজা এতটুকুই মোটা যে, মোজাকে কোন কিছু দিয়ে বাঁধা ছাড়াই শুধু মোজা পা দিয়ে দুই-আড়াই কিলোমিটারের মতো হাঁটা যাবে, কিন্তু মোজা ছিঁড়বে না।

গ. মোজা এতটুকু বড় হতে হবে যে, টাখনুসহ ঢাকা থাকতে হবে।

সুতরাং উপরের আলোচনায় স্পষ্ট হলো যে, আমাদের দেশের প্রচলিত কাপড়ের পাতলা মোজার উপর মাসেহ করা কোনোভাবেই জায়েজ নয়।

ইবনে নুজাইম (রহ.) বলেন, সুতা বা চুলের পাতলা মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ নেই সর্বসম্মত মতানুসারে। (আলবাহরুর রায়েক-১/৩১৮, জাকারিয়া)

উল্লেখ্য, ১. ওজু করার পর মোজা পরিধান করলে পরবর্তীতে ওজু নষ্ট হয়ে গেলে তার উপর মাসেহ করতে পারবে। মোজা পরিধান করার পর গোসল ফরজ হয়ে গেলে সেই মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ হবে না।

২.মুকিম হলে একদিন এক রাত, আর মুসাফির হলে তিন দিন তিন রাত মোজার উপর মাসেহ করতে পারবেন।

সূত্র: সহিহ বুখারি -২০২. সুনানে তিরমিজি-৯৩ হেদায়া-১/৬১.বাদায়েউস সানায়ে-১/৭৫-৮৫, ফাতাওয়া হিন্দিয়া-১/৮৫. মাজমাউল আনহুর-১/৭৪

উত্তর দিয়েছেন- মুফতি সাদেকুর রহমান, মুফতি ও মুহাদ্দিস, শেখ জনূরুদ্দীন (র.) দারুল কুরআন মাদ্রাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা।




দিপালীদের সংসারে জনম আঁধার

রোজগারের জন্য গ্রামে গ্রামে ঘোরেন তাঁরা। শিঙা লাগানো, দাঁতের পোকা বের করা, শিশুদের নানান রোগের ‘চিকিৎসা’সহ তাবিজ দেন। শরীরে বিষব্যথা থাকলে মহিষের কাটা শিঙের মোটা অংশ দিয়ে সারিয়ে তোলেন। এভাবে গ্রামের মানুষের চিকিৎসার নামে সামান্য আয় হয় তাঁদের। তবে দৈনিক ১০০ থেকে ২০০ টাকা আয়ে ঠিকমতো ঘোরে না সংসারের চাকা।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের খিলপাড়া এলাকায় বেদেপল্লিতে পাঁচ বছর আগে গড়ে ওঠে ১১ পরিবারের অস্থায়ী বেদেপল্লি। আদি বাড়ি শেরপুরের ঝিনাইগাতিতে। পেটের টানে এভাবে ঘুরে ঘুরে রোজগার করেন পল্লির সদস্যরা। সেখানে শিশু রয়েছে ২৫ জনের মতো। এর মধ্যে স্কুলে যাওয়ার উপযোগী অন্তত ১৫ জন থাকলেও চারজন যায় স্থানীয় ব্র্যাক স্কুলে। অন্যদের সারাদিন ঘুরেফিরে কিংবা খেলা ও পাতা কুড়িয়ে দিন কেটে যায়।

খিলপাড়া এলাকায় সৈয়দ মিয়া নামে এক ব্যক্তির পতিত জায়গায় বিনা ভাড়ায় ১১টি ছাপরা ঘর তুলে বসবাস করছে পরিবারগুলো। শনিবার সেখানে গিয়ে জানা যায়, অনেকে রোজগারের সন্ধানে গ্রামে গেছেন। নারীদের কেউ রান্না করছেন, কেউবা সন্তানকে গোসল করিয়ে দিচ্ছিলেন। কেউ কেউ রোদ পোহাচ্ছিলেন।
কথা হয় বেদেপল্লির সর্দার জসিম উদ্দিনের স্ত্রী দিপালীর সঙ্গে। তিনি জানান, পরিবারগুলো সর্বশেষ সিলেট থেকে এসেছে। একেকটি পরিবারে সদস্য ৫ থেকে ১০ জন। চার শিশু ব্র্যাকের স্কুলে গেলেও অন্যরা শিক্ষা ছাড়াই বেড়ে উঠছে। ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচি আপাতত বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা সমন্বয়ক মো. শফিকুল ইসলাম। অচিরেই চালু হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
দিপালী বলছিলেন, তাঁর স্বামী দুটি বিয়ে করেছেন। তিনি প্রথম স্ত্রী। আছে চার ছেলে। শিশুদের লেখাপড়া করানোর ক্ষমতা নেই। তারাও বড় হয়ে বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখবে। দ্বিতীয় স্ত্রী শেফালী জানান, তাঁর এক ছেলে ও তিন মেয়ে। সব মিলিয়ে সর্দার জসিমের পরিবারের সদস্য ১১ জন। তাঁরা জানান, তাঁরা সাপ খেলা দেখান না। তার পরও তাঁদের সবাই বেদে বলে ডাকেন।
পল্লির বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাঁদের কোনো সম্পদ নেই। এ কারণে ঘুরে ঘুরে জীবন ধারণ করতে হয়। সরকার নজর দিলে তাঁরা কষ্ট থেকে রক্ষা পেতেন। কয়েক দিন আগে কিশোরগঞ্জ-১ আসনের এমপি সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি প্রতিটি পরিবারকে একটি করে কম্বল দিয়ে গেছেন। ৩ হাজার টাকাও দিয়েছেন সবার জন্য।
পল্লির সর্দার জসিম উদ্দিন বলেন, তিনি একজন বাউলশিল্পী। মাসে এক বা দুটি অনুষ্ঠানে গান গাইতে পারেন। একটি অনুষ্ঠানে ১ থেকে ২ হাজার টাকা ভাগে থাকে। ভাসমান জীবনের কারণে তিনি কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় ভোটার হয়েছেন। আবার দু’জন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কাঁটাবাড়িয়া এলাকার ভোটার। কেউ কেউ নিজ এলাকা শেরপুরের ঝিনাইগাতির ভোটার হয়েছেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বণিক বলেন, ঝরে পড়া ও বেদেপল্লির মতো ভাসমান পরিবারের শিশুদের জন্য সরকার উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও শিশুকল্যাণ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে। এসব স্কুলে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বইসহ শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হচ্ছে। বেদেপল্লির শিশুরা এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা নিতে পারে।
সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মামুন আল মাসুদ খান বলেন, বেদেপল্লিতে বিভিন্ন সময় খাদ্য ও বস্ত্র দিয়ে সহায়তা করা হয়। ঈদের আগে ভিজিএফের চাল পায়। সেমাই, চিনি ও দুধ দেওয়া হয়। কম্বলও পাচ্ছেন তাঁরা।




‘হোম ডেলিভারি’ দিতে এসে ৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার যুবক

কক্সবাজার থেকে ভাঙ্গায় মাদকের ‘হোম ডেলিভারি’ দিতে এসে পাঁচ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন এক যুবক। শনিবার সন্ধ্যায় ফরিদপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক অভিযানে বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা টোল প্লাজা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার যুবকের নাম নুরুল হাকিম (৩১)। তিনি কক্সবাজারের উখিয়া থানার পাগলীর বিল গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ফরিদপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামীম হোসেন এর নেতৃত্বে এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজার সামনে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা কোটালি পাড়া স্টার এক্সপ্রেস নামের একটি বাসে যাত্রী বেশে আসা নুরুল হাকিম এর দেহ তল্লাশি করা হয়। পরে তার কাছে পাঁচ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।

এ সময় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুরুল হক জানায়, সে কক্সবাজার থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে প্যাক করা ইয়াবা গিলে তার পেটের মধ্যে বহন করে। পরে বিমানে ঢাকায় এসে মলত্যাগের মাধ্যমে সেই ইয়াবা বের করে। এরপর পরিষ্কার করে পুনরায় প্যাক করে এবং শরীরে বিশেষ কায়দায় স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে ভাঙ্গায় নিয়ে আসে।

ফরিদপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামিম হোসেন জানান, অভিনব কৌশলে এই মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডকেট মাদক পাচার করছিল। অবশেষে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জালে ধরা পড়ে এই মাদক ব্যবসায়ী।

তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা যতই কৌশল অবলম্বন করুক, তাদের আইনের আওতায় আনতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। আসামির বিরুদ্ধে ভাঙ্গা থানায় একটি নিয়মিত মামলা করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।




আখেরি মোনাজাতে শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব

দেশের কল্যাণ, দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের আয়োজনে ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। আখেরি মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দুই হাত তুলে মহান আল্লাহর দরবারে রহমত প্রার্থনা করা হয়। এ সময় ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে।

মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ জুবায়ের। ৯টা ৫৮ মি‌নি‌টে মোনাজাত শুরু ক‌রে ১০টা ২২ মি‌নি‌টে শেষ ক‌রেন। তিনি আরবি ও বাংলা ভাষায় মোনাজাত পরিচালনা করেন। ২২ মিনিটব্যাপী মোনাজাতে মাওলানা জুবায়ের প্রথম ৯ মিনিট মূলত পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো উচ্চারণ করেন। শেষ ১৩ মিনিট দোয়া করেন বাংলা ভাষায়।

মুঠোফোন ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাদে দেশ-বিদেশের আরও লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। আজ আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরাসহ চারপাশের এলাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, মার্কেট, বিপণিবিতান, অফিসসহ সবকিছু বন্ধ রাখা হয়।

সকাল ৯টার আগেই ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মুসল্লিরা মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলি-গলি, বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। ইজতেমাস্থলে পৌঁছাতে না পেরে কয়েক লাখ মানুষ কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে মোনাজাত শেষ করেন।

চারদিন বিরতি শেষে ২০ জানুয়ারি বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে। ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এ বছরের জন্য বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে।




নিউইয়র্কে স্কুলে নিষিদ্ধ হলো ‘চ্যাটজিপিটি’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি মেধা বিকাশে বিঘ্ন ঘটাতে পারে— এমন শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সরকারি স্কুলে নিষিদ্ধ হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর সফটওয়্যার ‘চ্যাটজিপিটি’।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ওপেনএআই’ গত ৩০ নভেম্বর উন্মোচন করে ‘চ্যাটজিপিটি’। এটি নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। এর জেরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের সরকারি স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য ‘চ্যাটজিপিটি’ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

‘চ্যাটজিপিটি শিক্ষার্থীদের শেখার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে’ উল্লেখ করে গত ৩ জানুয়ারি ‘নিউইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশন’ আনুষ্ঠানিকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

সংস্থাটির বক্তব্য হচ্ছে, ‘শিক্ষার্থীদের শিখনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটবটে ফলাফল হিসেবে দেখানো বিষয়বস্তুর নিরাপত্তা ও নির্ভুলতার বিষয়ে উদ্বেগের কারণে নিউইয়র্ক শহরের সরকারি স্কুলগুলোর নেটওয়ার্ক এবং ডিভাইসগুলোতে চ্যাটজিপিটি অ্যাক্সেস বাতিল করা হয়েছে। টুলটি প্রশ্নের দ্রুত এবং সহজ উত্তর দিতে সক্ষম হলেও এটি চিন্তা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তৈরি করে না। এসব দক্ষতা শিক্ষা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে আজীবন সাফল্যের জন্য অপরিহার্য।’

চ্যাটবটটির আগের সংস্করণগুলোকে ভুল প্রশ্ন করা হলেও মনগড়া উত্তর দিত। তবে নতুন এই সংস্করণ প্রশ্নের ভুল ধরতে সক্ষম। ইন্টারনেটে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহারের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাটিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে ওপেন এআই। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লেখকদের থেকে অনুমতি নেয়নি। এ নিয়ে সমালোচনার মুখেও পড়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।

সম্প্রতি নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন ‘বিং’-এর নতুন সংস্করণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) যুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট। নতুন সংস্করণে ব্যবহার করা হবে চ্যাটবট ‘চ্যাটজিপিটি’। আগামী মার্চের শেষ নাগাদ নতুন এই ফিচার চালু করতে পারে মাইক্রোসফট। ওপেন এআইয়ের চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি বিনামূল্যে ব্যবহার করা যাচ্ছে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান




ঠিকানাহীন দল আর জোট জোড়াতালি

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভোটের মাঠে পরস্পরের প্রবল প্রতিপক্ষ। প্রতিবারই সংসদের ভোট সামনে রেখে এই দুই রাজনৈতিক দল নতুনভাবে সাজায় জোটের মঞ্চ। এবারও জোটে একের পর এক দল ভিড়িয়ে শক্তির জানান দিতে চাইছে দু’দলই। তবে তারা জোটের পাল্লা ভারী করতে এমন নামসর্বস্ব দল বা সংগঠনকে টানছে, যা নিয়ে চলছে হাস্যরস, দেখা দিয়েছে নানামুখী প্রশ্ন। এমনও দল আছে যাদের শুধু এক নেতাই আছেন, আর কেউ নেই। দলীয় কার্যালয়, সাংগঠনিক কমিটি কিছুই নেই। ‘খুচরা’ এসব দল নিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী আর বিএনপি আন্দোলনমুখী।

গুনে গুনে সাড়ে চার ডজন, সংখ্যাটা ৫৪। সবাই সরকারবিরোধী। এর মধ্যে আছে ‘এক নেতার এক দল’! সংগঠনের শীর্ষ নেতা হিসেবে আছেন পল্টন মোড়ের মোজা বিক্রেতা, আছেন আদম কারবারিও। কর্মসূচিতে ব্যানার ধরার মতো কর্মী নেই এমন দলও আছে। এই ৫৪ দলে যেমন আছে রাজপথের প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপি; তেমনি রয়েছে ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দারের মতো সংগঠন। তাদের নেই দলীয় কার্যালয়, জোটেনি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন। তবু আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে এসব রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।

বিএনপির নেতারা বলছেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সংকট কাটাতে ডান, বামসহ সব দল, সংগঠন, সুশীল, বুদ্ধিজীবী ছাড়াও সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এখানে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী নয়, সবাইকে নিয়েই এগোতে চাইছে দলটি। তাই জোট, দল, সংগঠন কিংবা ব্যক্তির সংখ্যাতত্ত্ব দিয়ে বিএনপি তাদের চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে পরিমাপ করছে না; গুরুত্ব দিচ্ছে ঐক্যকে।

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এখন দেশে রাজনীতিতে অনেক রকম খেলা হয় এবং হচ্ছে। আসলে এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নীতি-আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে শুধু ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করছে। নীতি-আদর্শ থাকলে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা এমন হতো না। সুবিধা আদায়ের জন্য রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে এ রকম আরও অনেক দলের সৃষ্টি হচ্ছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, জনগণের ভোটাধিকার থেকে শুরু করে সব নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যার যে অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করতে হবে। সেখানে কে কত বড়, সেটা মুখ্য বিষয় নয়। মূলত এই সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে যারাই এগিয়ে আসবে, তাদেরই সাধুবাদ জানাব। সেটা সংগঠন হতে পারে, পেশাজীবী কিংবা ব্যক্তিও হতে পারেন।

জানা গেছে, বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে সাতদলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, ১২ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, চার দলের বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য, ১৫ সংগঠনের সমমনা গণতান্ত্রিক জোট ছাড়াও এলডিপি, গণফোরাম রয়েছে। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না থাকলেও একই দাবিতে ভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আন্দোলন করছে জামায়াত। এসব জোট ও দলের মধ্যে মাত্র সাতটি ইসি নিবন্ধিত। ১৩টি বিভিন্ন দলের খণ্ডিত অংশ। আবার সাম্যবাদী দল ও ইসলামী ঐক্যজোট রয়েছে দুই জোটেই। সমমনা গণতান্ত্রিক জোটের ১৫ সংগঠন কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তারা বিভিন্ন ইস্যুতে জাতীয় প্রেস ক্লাবকেন্দ্রিক আলোচনা সভা, মানববন্ধনের মতো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।

৫৪ ঘোড়ার ডিম!: সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৫৪ দল গণমিছিল ও গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও বিএনপিসহ কয়েকটি দল বাদে এসব জোটের নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। ১২ দলীয় দুই জোটের সর্বশেষ গণঅবস্থানে ১০০ নেতাকর্মীও ছিল না। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা যেমন ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছেন, তেমনি বিএনপির নেতাকর্মীরাও এসব জোটের অস্তিত্ব নিয়ে অসন্তোষ দেখিয়েছেন।

জোটের এই অবস্থা নিয়ে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও উষ্ফ্মা প্রকাশ করেন নেতারা। বিশেষ করে ১৫ সংগঠনের জোট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা। কার পরামর্শে, কার উদ্যোগে এই কাজ করা হয়েছে- তা নিয়েও নেতারা কথা বলেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি উপহাস করে বলেছেন, ৫৪ রাজনৈতিক দল আজকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাদের অবস্থানে কী হবে? ঘোড়ার ডিম পাড়বে। ৫৪টা ঘোড়ার ডিম পাড়বে ৫৪ বিরোধী দল। এর মধ্যে নয়াপল্টনে মোটামুটি অবস্থান ছিল, অন্যরা ভুয়া।

জোটে যারা, কেমন কারা: গণতন্ত্র মঞ্চের সাত দলের মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ইসিতে নিবন্ধিত। এর বাইরে নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন রয়েছে নিবন্ধনের বাইরে।

জোটের নেতা আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, কমরেড সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, ড. রেজা কিবরিয়া আর ভিপি নুরুল হক নুরের মতো হেভিওয়েট নেতা থাকলেও রাজপথে তাঁদের কর্মী নেই। শেষ গণমিছিল আর গণঅবস্থানের মতো বড় দুটি কর্মসূচিতে নেতাকর্মীর অবস্থানের প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি এ জোট। এ নিয়ে এরই মধ্যে জোটের ভেতর সন্দেহ-অবিশ্বাস আর দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।

জোটের শরিক পাঁচ রাজনৈতিক দল বেশ কয়েক বছর রাজপথে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও অন্য দুটি সংগঠন হিসেবেই কাজ করেছে বিগত দিনে। এর মধ্যে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কমিটি ভেঙে সম্প্রতি রাজনৈতিক আদল দেওয়া হয়েছে। ইসিতে নিবন্ধনের জন্য আবেদনও করা হয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনও একই অবস্থা। তবে এই দলটির ব্যাপ্তি মুষ্টিমেয় কয়েকজন নেতাকর্মীতেই সীমাবদ্ধ।

১২ দলীয় জোটের মধ্যে কল্যাণ পার্টি ও মুসলিম লীগ ইসি নিবন্ধিত। তবে মুসলিম লীগ দ্বিখণ্ডিত হয়ে উভয় জোটের মধ্যেই আছে। কোন পক্ষের হাতে নিবন্ধন রয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। দলটির সভাপতি এইচ এম কামরুজ্জামান খান মারা যাওয়ার পর এর জৌলুস আরও কমেছে। নেতাকর্মী নেই বললেই চলে। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে আসা নেতাদের নিয়ে জাপা (কাজী জাফর) অংশ রাজনীতিতে সক্রিয়। তবে হেভিওয়েট নেতা থাকলেও কর্মী নেই অবস্থা দলটির। নেই দলীয় কার্যালয়ও। প্রয়াত নেতা শফিউল আলম প্রধানের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাঁর গড়া জাতীয় গণতান্ত্রিক দলও (জাগপা) দুই টুকরা। বাতিল হয় ইসির নিবন্ধনও। এর একটি অংশে তাঁর মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্য অংশে রয়েছেন খন্দকার লুৎফর রহমান। পুরোনো হলেও এখন কর্মী সংকটে ভুগছে দলটি।

এ ছাড়া জোটের এনডিপির আবু তাহের আদম ব্যবসায়ী। গিয়েছিলেন কারাগারেও। নেই নিজস্ব কার্যালয়। ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক পার্টি দলগুলো মূল দলের খণ্ডিত অংশ। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে এসব দল বেরিয়ে যাওয়ার পর খণ্ডিত এসব দলকে জোটে রেখে জোটের কলেবর ঠিক রাখা হয় তখন। নেতাসর্বস্ব এসব দলের কর্মী নেই। সাম্যবাদী দলেরও একই হাল। কেউ চেনেন না এর নেতা কিংবা কর্মীকে। তবে সাম্যবাদী দলটি এখন এই জোটে নেই। লেবার পার্টি, জাতীয় দল, বাংলাদেশ এলডিপি নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণে কাজ করছে। কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে লেবার পার্টি তৎপর রয়েছে। সাবেক এমপি আবদুল করিম আব্বাসী ও সাবেক ছাত্রনেতা শাহাদাৎ হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে কর্নেল (অব.) অলি আহমদের এলডিপি থেকে বেরিয়ে নতুন বিএলডিপি দল গঠন করেন তাঁরা।

১২ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের অন্তর্ভুক্ত কোনো শরিক দলেরই নিবন্ধন নেই। কার্যালয় নেই বেশিরভাগ দলের। আবার বেশিরভাগ দলই মূল দল থেকে ছিটকে আসা খণ্ডিত অংশ। প্রয়াত শেখ শওকত হোসেন নীলুর এনপিপি থেকে বেরিয়ে আসা একটি অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। তিনি নীলুর নেতৃত্বাধীন দলের মহাসচিব ছিলেন। এখন তিনি এই জোটের সমন্বয়ক। জাগপার সাবেক মহাসচিব খন্দকার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বাধীন একটি অংশ এই জোটে রয়েছে। জাগপার বেশিরভাগ নেতাকর্মী এই অংশের সঙ্গে রয়েছে। তবে নেই নিজস্ব কার্যালয়। অনেক পুরোনো দল এবং নব্বই দশকের সাবেক ছাত্রনেতা সাইফুদ্দিন আহমেদ মনির নেতৃত্বাধীন ডেমোক্রেটিক লীগ এখন আর আলোচনায় নেই। ২০ দলীয় জোট থেকে ইসলামী ঐক্যজোট বেরিয়ে গেলে একটি খণ্ডিত অংশ জোটের সঙ্গে থেকে যায়। এই অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন দলটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রকিব। দলটির এমনই হাল- সংগঠনের ব্যানার পর্যন্ত সভাপতিকে টানতে হয়। আবার তাঁর দলটি ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট- দুটোতেই রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মাওলানা আবদুর রকিব বলেন, দুই জোটের উদ্দেশ্য একই হওয়ায় তিনি দুই জোটেই রয়েছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া ইসি নিবন্ধিত বাংলাদেশ ন্যাপের ঢাকা মহানগরের একজন সম্পাদক পর্যায়ের নেতা এম এন শাওন সাদেকীর নেতৃত্বে গঠিত একটি অংশ জোটে থেকে যায়। তাঁর যেমন রাজনৈতিক পরিচিতি নেই, তেমন নেই কোনো কার্যালয়। একাদশ নির্বাচনের আগে বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়া দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী এবং দলটির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদলের বিকল্পধারার নেই কোনো কার্যালয়। নেই গঠনতন্ত্র। নেতাকর্মীর উপস্থিতিও দেখা যায় না। নোটারি পাবলিক সংগঠনের নেতা আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ন্যাপ-ভাসানীর নেই কোনো দলীয় কার্যালয় ও নেতাকর্মী। জাতীয় পার্টির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন গণদল। ‘গণদল’ নাম রাখলেও সংগঠনটির নেই কোনো নেতা, নেই কর্মী।

১৫ সংগঠনের সমমনা গণতান্ত্রিক জোটে বেশিরভাগেরই অস্তিত্ব নেই। ওয়ান-ইলেভেনপরবর্তী বছরগুলোতে জাতীয় প্রেস ক্লাবভিত্তিক কোনো কর্মসূচিও ছিল না তাদের। এরপরও কী প্রক্রিয়ায় এসব সংগঠনকে নিয়ে জোট গঠন করা হয়েছে, তা নিয়ে খোদ বিএনপির মধ্যেই তুষের আগুন জ্বলছে। এমনকি প্রেস ক্লাবভিত্তিক জাতীয়তাবাদী আদর্শের অন্য সংগঠনের নেতাকর্মীও এ নিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছে অভিযোগ তুলেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে বিষয়টি উত্থাপন করেন তাঁরা।

জানা গেছে, এই জোটের সমন্বয়ক ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি সাইদুর রহমান। আগে কিছু সংগঠনের ইস্যুভিত্তিক তৎপরতা থাকলেও বেশিরভাগেরই পরিচিতি নেই। এমনকি তাঁদের কোনো কর্মকাণ্ডও ছিল না। যাদের পরিচয় নিশ্চিত করা গেছে, তাদের মধ্যে ‘ঘুরে দাঁড়াও বাংলাদেশ’ সংগঠনের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক। তিনি এ সংগঠনের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। ‘মুভমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি’ সংগঠনের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ মাগুরা কৃষক দলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক। ‘বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদ’ সংগঠনের সভাপতি ওমর ফারুক একসময় পল্টন মোড়ে মোজা বিক্রি করতেন। ‘জাতীয়তাবাদী চালক দলের সভাপতি হিসেবে মো. শাহজাহানের নাম উল্লেখ থাকলেও মূলত এই সংগঠনের সভাপতি বাবু রেজা। এসব সংগঠনের বাইরে গণতন্ত্র রক্ষা মঞ্চ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী নাগরিক দল বিভিন্ন সময় কর্মসূচির আয়োজন করে বলে জানা গেছে।

এই জোটের সমন্বয়ক সাইদুর রহমান জানান, তাঁর জোটের সবক’টি সংগঠনই সক্রিয়। বিগত দিনে তাঁরা অনেক কর্মসূচি পালন করেছে। যেটা বলা হচ্ছে, সেটা অপপ্রচার।




কক্সবাজারে আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠক

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায়ই ঘটছে গোলাগুলি ও হত্যাকাণ্ড। টেকনাফে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটছে একের পর এক। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে সংঘর্ষ, গোলাগুলির কারণে উখিয়া ও টেকনাফের বাসিন্দাদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। এ পরিস্থিতিতে আজ রোববার কক্সবাজারে বসছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক। এ বৈঠক নিয়মিত ঢাকায় হলেও বিশেষ কারণে এবার হচ্ছে কক্সবাজারে।

বৈঠকের আলোচ্য সূচিতে সীমান্ত এলাকায় মাদক চোরাচালান, সেন্টমার্টিন দ্বীপসহ সীমান্ত এলাকায় বিজিবি এবং কোস্ট গার্ডের কার্যক্রমের বিষয় থাকলেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে যোগ দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্যরা কক্সবাজারে পৌঁছেছেন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আমিন আল পারভেজ জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ২৬তম বৈঠক সকাল ১১টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।