টানা দ্বিতীয় দিনে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, জনজীবন হাঁসফাঁস

চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। পরপর দুই দিন জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় সাধারণ মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ তেমন ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। ধান, আম, লিচু ও সবজির ফলন এবং হাঁস–মুরগি ও গরু-ছাগল নিয়ে কৃষকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জ প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার আজ বুধবার বেলা তিনটায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, সন্ধ্যা ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি মৌসুমে সারা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জামিনুর আরও বলেন, ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা হলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমে এ নিয়ে তিন দিন জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে। সামনের দিনে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।

আজ বিকেল চারটায় শহরের কেদারগঞ্জ মালোপাড়া এলাকায় ভ্যানে ফেরি করে বিস্কুট বিক্রি করছিলেন পৌর এলাকার সাতগাড়ির বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক। ঘেমে একাকার আবদুর রাজ্জাক (৫৫) বলেন, ‘গরমে বেশি দূর বাইরি যাওয়া যাচ্চে না, বেচাকিনাও সেরাম হচ্চে না। অ্যাকন ইনকাম খুপই কোম। দিনি ৩০০ ট্যাকার বেশি হচ্চে না। গরমের আগে ৬০০–৭০০ ট্যাকা ইনকাম হইত।’

আবদুস সামাদ নামের এক নির্মাণশ্রমিক বলেন, ‘আমরা কি আর শক কইরে রোদি পুড়তি আইচি। বাড়ি বইসে থাকলি তো প্যাট চলে না ভাই।’

এদিকে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ফল ও ফসল রক্ষায় কৃষকেরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। ধান ও সবজিখেত এবং আম ও লিচুর পরিচর্যায় বাড়তি পরিশ্রমসহ অতিরিক্ত খরচ জোগাতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা তাঁদের। সদর উপজেলার টেংরামারী-খেজুরতলা গ্রামের কৃষক কাসেদ আলী জানান, ধানের খেতে বাড়তি সেচ দিয়েও পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। এই গরমে ঘর থেকে বের হতে মন চায় না। কিন্তু বের না হলে তো ধান পুড়ে যাবে।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সবুজপাড়ার বাসিন্দা জেলা আম-ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল কুদ্দুস মহলদার জানান, তাঁর ১০০ বিঘার বাগানে অধিকাংশ গাছেই কোনো আম ধরেনি। কিছু গাছে অল্প কিছু ধরলেও ১৫ দিন ধরে তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় ব্যাপকভাবে আমের গুটি ঝরে পড়ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান, ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আম এবং ৬ হাজার হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ করা হয়েছে। ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা হলে ধানের পরাগায়ন ঝুঁকিতে পড়ে, আম ও লিচু ঝরে পড়ে এবং সবজি পুড়ে ক্ষতি হয়। এ জন্য ধানখেতে ৫–৭ সেন্টিমিটার পানি রাখা এবং আম, লিচু ও সবজিখেতে পানি স্প্রে করতে হবে।

মুরগির খামারি মাসুদ সরদার জানান, তীব্র তাপপ্রবাহে খামারের বেশির ভাগ মুরগি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। মাঝেমধ্যে কিছু কিছু মারাও যাচ্ছে। আলমডাঙ্গা উপজেলার কালীদাসপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের খামারি হীরা খাতুনের খামারে মঙ্গলবার পর্যন্ত ২৮টি গরু ছিল। গতকাল ৫টি গরু ১৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। হীরা বলেন, তাপপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় গরুর গায়ে জ্বর আসছে। গরু খাওয়া ছেড়ে দিচ্ছে। এতে গরু টিকিয়ে রাখাই দায় হয়ে পড়েছে। চিকিৎসা করেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তাপপ্রবাহ চলাকালে গরুকে গোয়াল থেকে বাইরে বের করতে কৃষকদের বারণ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত খাবার দেওয়া বন্ধ ও ভিটামিন সি খাওয়াতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক কিসিঞ্জার চাকমা জানান, চলমান তাপপ্রবাহে করণীয় বিষয়ে জেলার সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে করণীয় বিষয়ে স্বাস্থ্যবার্তা ছাপিয়ে বিলি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার স্যালাইন দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।




কাল কিছু জায়গায় তাপ কমতে পারে

প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ মানুষ। চাওয়া এখন একপশলা বৃষ্টি। কিন্তু আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, বৃষ্টির সম্ভাবনা খুব কম।

আজ মঙ্গলবার আবহাওয়া অধিদপ্তর সকালের পূর্বাভাসে আগামী পাঁচ দিনের পূর্বাভাস দিয়েছে।

অধিদপ্তর বলেছে, দেশের আট বিভাগের ওপর দিয়েই তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে আগামীকাল বুধবার কিছু জায়গায় তাপপ্রবাহ প্রশমিত হতে পারে। এ সময় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

বৃষ্টির সম্ভাবনা নিয়ে জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, যেসব জায়গার কথা বলা হয়েছে, সেখানেও বৃষ্টির সম্ভাবনা খুব কম। এ ছাড়া আগামী ১০ থেকে ১২ দিনেও আবহাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে কোনো সুখবর নেই।

চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা ছিল গতকাল, যা পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় রেকর্ড করা হয়েছে।

খেপুপাড়ায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২১ দশমিক ৫ ডিগ্রি ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল পাবনার ঈশ্বরদীতে সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া দেশের আর কোথাও বৃষ্টি হয়নি।

 




চিড়িয়াখানা না দেখে গ্রামে ঈদ করতে যাবে না ঠিক করেছিল ওরা

এক খাঁচায় বাঘ দেখে আরেক খাঁচার দিকে হইহই করে ছুটে যাচ্ছিল একদল কিশোর-কিশোরী। তারা জানায়, ঢাকার উত্তর বাড্ডা থেকে তারা ঘুরতে এসেছে।

আকাশ নামে এক কিশোর জানায়, তারা কয়েক মাস আগে ঈদে চিড়িয়াখানায় আসার পরিকল্পনা করেছিল। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা ছাড়া গ্রামে ঈদ করতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আজ সেটা তারা বাস্তবায়ন করল।

ঈদের দিনে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। আজ দুপুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

প্রতিবছরের মতো এবারও ঢাকায় বহু মানুষ ঈদ করছেন। ঢাকায় অনেকেই পরিবার নিয়ে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ঘুরতে যান। রাজধানীতে বিনোদনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম জাতীয় চিড়িয়াখানা। ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দারাও সুযোগ পেলে ঘুরে আসেন চিড়িয়াখানায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, চিড়িয়াখানায় আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে বড় অংশ শিশু-কিশোর। তারা মা-বাবার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে পশুপাখি দেখছে। তরুণ-তরুণী ও মধ্যবয়সী নারী-পুরুষের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।

এই জাতীয় চিড়িয়াখানায় বাঘ, সিংহ, হাতি, ময়ূর, জিরাফ, জেব্রা, হায়েনা, বানর, উটপাখি, পেলিক্যানসহ ১৩৭ প্রজাতির ৩ হাজার ২৯৫টি প্রাণী ও পশুপাখি রয়েছে। এসব পশুপাখি দেখতে প্রতিটি খাঁচার সামনে ভিড় দেখা গেছে।

রাজধানীর উত্তরা থেকে স্ত্রী, তিন ছেলেমেয়ে ও এক ভাইকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছেন আব্বাস উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এবার ঈদে চাঁদপুরের গ্রামের বাড়ি যাইনি। বাড়িতে না যাওয়ায় বাচ্চারা ঘুরতে আসতে চাচ্ছিল, তাই ওদের নিয়ে এসেছি।’

আব্বাস উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁর মেয়ে আফরিন সিদ্দিক কানিবকসহ বিভিন্ন পাখি দেখায় ব্যস্ত। আফরিন জানায়, ‘পাখি দেখতে পেরে সে খুশি।’

চিড়িয়াখানার পরিচালক রফিকুল ইসলাম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, আজ ঈদের দিন সকাল থেকে দর্শনার্থীরা এসেছেন। তাঁর ধারণা, আজ দর্শনার্থী এক লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।




একসঙ্গে ১২১ কাতারে নামাজ আদায় করবেন ৩৫ হাজার মুসল্লি

জাতীয় ঈদগাহ মাঠে ৭০০টি সিলিং ফ্যান ও ১০০টি স্ট্যান্ড ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আলোর স্বল্পতা এড়াতে ৭০০ টিউবলাইট লাগানো হয়েছে। প্যান্ডেল তৈরি করতে ৪৩ হাজার বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। ১৫ টনের বেশি রশির প্রয়োজন হয়েছে। বৃষ্টি থেকে মুসল্লিদের রক্ষা করতে ১ হাজার ৯০০টি ত্রিপল টাঙানো হয়েছে।

রাজধানীতে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ৩৫ হাজার মুসল্লির জন্য ঈদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য ৬টিসহ মোট ১২১টি কাতারে নামাজ আদায় করবেন মুসল্লিরা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটায় এই ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বলছেন, রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নানা বয়সী মানুষ এ মাঠে নামাজ আদায় করেন। সে কারণে নিরাপত্তাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মাঠ প্রস্তুত করা হয়েছে।




‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’স সেভেনথ মার্চ স্পিস: এপিক অব পলিটিক্স’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ২৬ বাক্যের বিশ্লেষণ নিয়ে প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ: রাজনীতির মহাকাব্য’ গ্রন্থের ইংরেজিতে অনুদিত গ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’স সেভেনথ মার্চ স্পিস: এপিক অব পলিটিক্স (Bangabandhu Sheikh Mujib’s 7th March Speech: Epic of Politics)’ গ্রন্থের মোড়ক উম্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার (২৮ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কেবিনেট কক্ষে মন্ত্রিসভার বৈঠকে মূল আলোচনা শুরুর আগে তিনি গ্রন্থটির মোড়ক উম্মোচনের পাশাপাশি এর মোবাইল অ্যাপ ও ই-বুকেরও উদ্বোধন করেন।


তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের পরিকল্পনা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে গ্রন্থটি প্রকাশ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।


গ্রন্থটির বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ করেন সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান এবং সম্পাদনায় যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ফখরুল আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম এবং সিনিয়র সাংবাদিক অজিত কুমার সরকার।
 
আরও পড়ুন:  দেশের উন্নয়নে সবাইকে একযোগে কাজের আহ্বান রাষ্ট্রপতির

এছাড়াও গ্রন্থটির পান্ডুলিপি পর্যালোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের সাবেক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯ মিনিটে ১০৮টি বাক্যে ভাষণ শেষ করেন। এ ভাষণ থেকে ২৬টি বাক্যের বিশ্লেষণ করেন ডা. এস এ মালেক, আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী, অধ্যাপক আনিসুজ্জামানসহ দেশের ২৬ জন খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবী, লেখক ও সাংবাদিকরা। ভাষণে শব্দ ও বাক্য প্রয়োগে উঠে এসেছে একটি জাতির ইতিহাস ও তার আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের সংগ্রাম, শোষণ-বঞ্চনা এবং তার বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াবার কথা। কোন কৌশলে যুদ্ধ ও জনযুদ্ধ পরিচালিত হবে এসেছে সে কথাও। এসবই বিশ্লেষিত হয়েছে লেখকদের বিশ্লেষণে।
 




যশোরে তরুণীকে প্রকাশ্যে জুতাপেটা কিসের ইঙ্গিত দেয়?

বিশ্বের সুখী দেশের র‌্যাঙ্কিংয়ে সাত ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। এ বছর জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্টে ১৪৬টি দেশের তালিকায় ৯৪ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ। গত বছরের প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০১। [UN-sponsored World Happiness Report 2022 released on Friday (March 18, 2022

প্রশ্ন হলো, আমরা কি আসলেই সুখী? পারিপার্শ্বিক পরিবেশ কি তাই বলে? গণমাধ্যমের এক সংবাদ মনকে শুধু যে বিষণ্ন করেছে তা নয়, স্তম্ভিত করে তুলেছে। শত শত লোকের সামনে তরুণীকে জুতাপেটা ইউপি সদস্যের, ছড়িয়েছে ভিডিও (প্রথম আলো,১৯ মার্চ ২০২২)।

ঘটনা আসলে কী? ১৫ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে যশোর সদর উপজেলার চূড়ামনকাটি ইউনিয়নের আবদুলপুর গ্রামে শত শত লোকের সামনে প্রকাশ্যে এক তরুণীকে জুতাপেটা করেছেন ইউপি সদস্য আনিসুর রহমান। কারণ কী? মামলার এজাহার বলছে, ওই তরুণী স্থানীয় এক লোকের বাইসাইকেলে চড়ে পাশের গ্রামের ওয়াজ মাহফিল থেকে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছিলেন। আবদুলপুর গ্রামের মোড়ে পৌঁছালে অনৈতিক কাজের অভিযোগ তুলে ইউপি সদস্য আনিসুর রহমানসহ কয়েকজন তাদের আটকে রেখে শত শত মানুষের সামনে জুতা ও লাঠি দিয়ে পেটান। খবর পেয়ে ওই তরুণীর মা–বাবা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।

সেই তরুণীকে প্রকাশ্যে নির্যাতনের দুটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যায়, শতাধিক মানুষের সামনে তরুণীকে জুতা দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাচ্ছেন ইউপি সদস্য আনিসুর রহমান। ওই তরুণী মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ইউপি সদস্যের পাশে থাকা কয়েক যুবক লাথি মারেন। অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে তরুণীর সঙ্গে থাকা যুবককেও এলোপাতাড়ি মারধর করেন ইউপি সদস্য ও তার সঙ্গে থাকা কয়েক যুবক।

আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, ওই তরুণীর হাত ও পা ধরে রেখেছেন কয়েক যুবক। ইউপি সদস্যের অনুসারী আইয়ুব, ভুট্ট, আবদুল আলীমসহ তিন–চারজন লাঠি দিয়ে তরুণীকে হাত-পায়ের গোড়ালিতে বেধড়ক মারধর করছেন। ওই তরুণীর সঙ্গে থাকা যুবককেও নির্যাতন করতে দেখা যায়। (প্রথম আলো, ১৯ মার্চ ২০২২)

এইখানে কয়েকটি প্রশ্ন স্পষ্ট। প্রথমত, বাইকে করে ওয়াজ মাহফিল থেকে তরুণ আর তরুণী ফিরছিলেন। এত রাতে তারা যে অনৈতিক কাজ করছিল তা কি স্পষ্ট? একদমই না। ইউপি সদস্য আনিসুর রহমান ও দলবল এতরাতে সেখানে কী করছিলেন? ধরে নিচ্ছি, তারা অনৈতিক কাজ করছে (যদিও তার প্রমাণ নেই) তাহলে তাদের এইভাবে জুতা পেটা করার সাহস পেলেন কী করে?

আমি ভিডিও দেখেছি। এইখানে আনিসুর রহমানের প্রকাশ্যে নির্যাতনের বিষয়টি পূর্বের কোনো শত্রুতা বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা গ্রামে প্রায়শই ঘটে। পূর্বে শত্রুতার জেরে নিরপরাধ মানুষকে বলি দেওয়া হয়। না হয় এইভাবে এত রাতে, এত লোকের সামনে কোনোভাবেই কাউকে নির্যাতন করা যায় না। এইটা অনৈতিক।

আরও পড়ুন: সমাজ তোমায় চপেটঘাত

বিচারহীনতা দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ছাত্রলীগ কর্মীরা ধর্ষণ করেছিল তার কি বিচার হয়েছিল? হয়নি। তাহলে কেন ইউপি সদস্য আনিসুর রহমানের বিচার হবে? গণমাধ্যম বলছে, অভিযুক্তরা এখন জামিনে মুক্ত। যেখানে অসংখ্য মানুষ যে ভিডিও দেখেছে সেই জায়গায় আনিসুর রহমান ও তার দলবল যদি জামিনে মুক্তি পায় তাহলে কি এই দেশে বিচার আশা করা যায়?

নারীর রাতে ফেরা সবসময় একশ্রেণির মানুষের কাছে আপত্তির কারণ। তাই তারা সবসময় নারীকে বিভিন্ন সংজ্ঞায় ফেলতে চায়। এই সংজ্ঞা তাদের নিজেদের তৈরি। কখনো পোশাক ভালো না, কখনো চরিত্র খারাপ, কখনো নারী নিজে ভালো না। এইসব ব্যাখ্যা চলতেই থাকে।

কয়েকদিন আগে বাসে টি-শার্ট পরা এক তরুণীকে বোরকা পরা নারী অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। পরে গণমাধ্যমে জানা গেল, বোরকা পরা সেই নারী নিজের খদ্দের হারিয়ে উগ্র হয়ে গিয়েছিল।

আরও আগে ফিরি। করোনার সময় রোগতত্ত্ববিদ এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা প্রতিদিন মিডিয়াতে এসে প্রেসব্রিফিং করতেন। তখন তার শাড়ি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবাই গণহারে সমালোচনা করেছেন। সমালোচনার বিষয় ছিল, তিনি প্রতিদিন এত শাড়ি কেন পরেন? আমি সত্যি বুঝি না, এইটা কেন সমালোচনার বিষয় হবে।

২০১৭ সালে সিলেটের জকিগঞ্জের কলাছড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘুমন্ত শিক্ষিকার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন জকিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ। অসুস্থ শিক্ষিকাকে সামাজিকভাবে হেনস্থা করার পর চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ বলেছিলেন, ঘুমন্ত শিক্ষিকার ছবি তুলে ‘ভুল করেননি’।

হুট করে একজন নারীকে সামাজিকভাবে অপদস্থ করা যে অপরাধ, এই সাধারণ জ্ঞান বা বোধ চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদের যেমন নেই তেমনি নেই ইউপি সদস্য আনিসুর রহমানের।

মূল সমস্যা হলো, আমাদের দেশে নারী শ্লীলতাহানি বা নারী নির্যাতন বা নারী ধর্ষণে জড়িত কারো কঠোর শাস্তি হয় না। ফলে বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে যে যখনই পারে নারীকে ভোগের বলি বানায় অথবা জনসম্মুখে অপমানে মেতে ওঠে। স্পষ্ট উচ্চারণে বললে বলতে হয়, ওয়াজে যেভাবে নারীকে নিয়ে বিষোদগার করা হয় তাদের কি কখনো শাস্তি হয়েছে? শহর থেকে প্রান্তিক সব জায়গায় মানুষের মোবাইলে ওয়াজ চলতে থাকে। ওয়াজ দেখে তারা অনুপ্রাণিত হয়। প্রভাবিত হয়। তখন তাদের মন নারীদের প্রতি ঘৃণা জন্মাতে বাধ্য করে। এই সরল বিষয়টা কেউ বুঝতে চাই না।

‘বাংলাদেশে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ: সামাজিক-আইনি দৃষ্টিকোণ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে জানা যায়, ৮৪ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়। (ইউএনবি, ৩০ এপ্রিল ২০২১)

এই ৮৪ শতাংশ নারী কারা? এই ৮৪ শতাংশ নারী তারাই, যারা ঘর থেকে বাইরে বের হয়ে অর্থনীতিতে অবদান রাখে। একদিকে নারী স্বাধীনতার কথা বলে আমরা আত্মসন্তুষ্টিতে ভুগছি অপরদিকে নারীদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের কর্মকাণ্ড উল্লেখ করার মতো নয়। এই দ্বিচারিতা নারীদের শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ, নির্যাতনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ২০০৯ সালে নগরীর তেজগাঁও থানা চত্বরে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে। ২০১১ সালে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের অধীনে উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ চালু করে ডিএমপি। প্রতিদিন ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের হটলাইনে অন্তত ২০০ জন যোগাযোগ করেন। এছাড়া ১০ থেকে ১৫ জন সশরীরের অভিযোগ জানান। এই সেন্টার থেকে গত ১০ বছরে নারী ও শিশুদের করা মোট ৪ হাজার ৩৮০ মামলার মধ্যে ২ হাজার ৪০৫ মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। ১ হাজার ২৩৭ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। বাকি ৭৩৮ মামলা তদন্তাধীন। (প্রথম আলো, ১৮ মার্চ ২০২২)

এই তথ্য থেকে প্রমাণিত হয় নারীদের নিরাপত্তায় যা করা উচিত ছিল তা করা হয়নি।

যশোরের এই ভিডিও দেখে যদি ইউপি সদস্য আনিসুর রহমানের কঠোর শাস্তি দেওয়া হত তবে এই ধরনের কাজ ভবিষ্যতে হত না। এইধরনের অপরাধ যারা করে তারা ভাবে তারা সঠিক কাজ করেছে। ফলে ভুক্তভোগী পড়েন বিপদে। ইউপি সদস্য আনিসুর রহমান জামিনে মুক্তি পাওয়ায় এখন যশোরের সেই নারীর পরিবার নিঃসন্দেহে বিপদে আছে। এইটা বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রশাসন কখনোই ভুক্তভোগীর পক্ষে থাকে না। যেমনটা অনিরাপদ বোধ করছেন যশোরের সেই নারীর পরিবার। এইরকম অনিরাপদ বোধ করেছেন দেখে আশামনি নামের স্কুল পড়ুয়া সেই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।

সমাজ কোনদিকে যাবে তা প্রশাসন বা সরকারের কর্মকাণ্ড বলে দেয় বা ইঙ্গিত দেয়। নারীর প্রতি ঘৃণা বা শ্লীলতাহানি বা নির্যাতন বা ধর্ষণ যে প্রতিনিয়ত বাড়বে তা চোখ বন্ধ করেই বলে দেওয়া যায়। কারণ এই দেশে সঠিক বিচার হয় না। এতকিছুর পর কি বলা যায় আমরা সুখী




হাফিজ-সাকিবের খবরে তোলপাড়

‌‘‘হাফিজের বাসায় গিয়ে ‘কিংস পার্টি’তে যোগ দিয়েছিলেন সাকিব’ শীর্ষক সচিত্র সংবাদ সোমবার সমকালে প্রকাশিত হওয়ার পর দেশজুড়ে রাজনৈতিক ও ক্রীড়াঙ্গণে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। বিশেষ করে খবরটির চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। আলোচনা-সমালোচনা চলছে দলের ভেতর-বাইরে। বিশেষ করে মেজর হাফিজের সঙ্গে বৈঠক ও যোগাযোগকারী বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা কিছুটা আতঙ্কে রয়েছেন। তাদের বৈঠকের ছবি ও তথ্যপ্রমাণ প্রকাশিত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন তারাও। এমনকি বিএনপি’র যুগপৎ আন্দোলনের সমমনা দলগুলোর মধ্যেও খবরটি নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে। ক্রীড়াঙ্গনপাড়ায়ও খবরটি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে নানা নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন অনেকে। অন্যদিকে মেজর হাফিজের নির্বাচনী এলাকা ভোলা-৩ এবং সাকিব আল হাসানের নির্বাচনী এলাকা মাগুরা-১ আসনের মানুষদের মাঝেও আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

‘কিংস পার্টি’ খ্যাত বিএনএমে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ না দিলেও নতুন এই দল গঠনে নেপথ্যের কারিগর ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম। প্রতিবেদনের এই অংশের সঙ্গে নেতাকর্মীরা কমবেশি অবগত থাকলেও এই দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন ফরম তিনি সংগ্রহ করিয়েছিলেন এমন তথ্য আগে কেউ জানতেন না। এমনকি নতুন এ দলে যোগ দিতে মেজর হাফিজের হাতেই আবেদন ফরম তুলে দিয়েছিলেন সাবেক বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এমন সচিত্র প্রতিবেদনে অনেকে বিস্মিত হয়েছেন। সাকিবের এই ডিগবাজির ঘটনায় অনেকে তার অতীত কর্মকাণ্ড স্মরণ করছেন।

বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, পুরো প্রতিবেদনে অনেক অজানা তথ্য তারা জানতে পেরেছেন। আর এটা নিয়েই চলছে তাদের মধ্যে নানামুখী আলোচনা। এতে দলের হাইকমান্ডও হাফিজের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে। কেউ কেউ মেজর হাফিজের বিগত দিনের রাজনৈতিক ভুলগুলোকে সামনে নিয়ে আসছেন। এর মধ্যে অনেকে বলছেন, হাফিজউদ্দিন আহমেদ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে জেড ফোর্সের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ করলেও ’৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর তিনি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। তখন তাকে বন্দিও করা হয়েছিলো। ওয়ান-ইলেভেনের আগে বিএনপি সরকার তাকে দু’টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলো। অথচ ওয়ান-ইলেভেনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি বিএনপির সংস্কারপন্থি অংশের মহাসচিব হয়ে দল ভাঙ্গার ষড়যন্ত্রে ছিলেন। এমনকি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং হাওয়া ভবন নিয়ে নানা সমালোচনা করেছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি বলে মনে করছেন তারা।
এবার দল ভাঙার প্রক্রিয়ায় বিএনপির আর কোন কোন নেতা জড়িত ছিলেন– তা নিয়েও শুরু হয়েছে কানাঘুষো। বিশেষত, মুক্তিযোদ্ধা দলের শীর্ষ নেতা নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধনের ফরম সংগ্রহ করেছিলেন– এমন বিষয়ে নেতারা ওই নেতাকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন। দলের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী হিসেবে যারা মেজর হাফিজের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তাদেরকে চিহ্নিত করারও চেষ্টা করছেন নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে, যেসব নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজের সঙ্গে বৈঠক বা যোগাযোগ করেছেন তারাও কিছুটা আতঙ্কে রয়েছেন। কোনোভাবে বৈঠকের ছবি বা যোগাযোগের তথ্যপ্রমাণ বিএনপির হাইকমান্ড জানতে পারলে দলের ভেতর বেকায়দায় পড়ার আশঙ্কা করছেন তারাও।

আবার বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর মতে, মেজর (অব.) হাফিজকে দিয়ে এবারও বিএনপিকে ভাঙার মিশন শুরু করেছিল আওয়ামী লীগ। সেই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়। তবে দলের শীর্ষ নেতাদের সময়োপযোগী তৎপরতায় সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এখানে বিএনপির রাজনৈতিক বিজয়কে সামনে আনতে চাইছেন তারা।

এদিকে সমকালে প্রকাশিত খবরটি নিয়ে সোমবার বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। প্রকাশ্যে কোনো নেতা স্পর্শকাতকর বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে এ ধরনের সাহসী প্রতিবেদনের অকপটে প্রশংসা করেছেন সকলেই। সমমনা অন্যান্য দলের নেতারাও বলেছেন অভিন্ন কথা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার একটি প্রকল্প নিয়েছিল, সে প্রকল্প ব্যর্থ হলে আরও ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্প নেয় সরকার। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিনকে আহমেদকে নিয়ে গণমাধ্যমে যে প্রতিবেদন এসেছে, সেটি সরকারে ব্যর্থ প্রকল্পের বহি:প্রকাশ।

দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল খবরটির বিষয়ে বলেন, সমকালের নিজস্ব ‘অসংকোচ প্রকাশের দূরন্ত সাহস’ স্লোগানকে যথার্থ প্রমাণ রাখছে বিভিন্ন সাহসী প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে। এজন্য সমকালকে তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

১২ দলীয় জোটের শরীক জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, সমকালের এই প্রতিবেদনটি ছিলো ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। এখানে শুধু মেজর হাফিজ নয়– পুরো দেশটাকে যারা ধ্বংস করছে, রাজনীতিকে যারা ধ্বংস করছে তাদের বিষয়ে তথ্য উঠে এসেছে।

ক্রীড়াঙ্গনে বিস্ময়: এদিকে নির্বাচনের আগে সাকিব আল হাসানের কিংস পার্টিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে সমকালের সচিত্র প্রতিবেদনে ক্রীড়াঙ্গনেও তোলপাড় ফেলে। ক্রিকেটপাড়ায় সাংবাদিক, সংগঠক এবং খেলোয়াড়দের মধ্যেও এ নিয়ে কথা হয়। তবে বেশিরভাগ ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব সাকিবের নতুন দলে যোগ দেওয়া এবং আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় বিস্মিত হয়েছেন।

নাম গোপন রাখার শর্তে জাতীয় দলের সাবেক এক অধিনায়ক বলেন, ‘মানুষ এখন রাজনীতিবিদদের পছন্দ করে না। সাকিব নির্বাচন করায় সমর্থকরা দু’পক্ষে ভাগ হয়ে গেছে। গ্যালারি থেকে আমরা ভুয়া ভুয়া দুয়োধ্বনি শুনতে পাই তাকে নিয়ে। কিংস পার্টিতে যোগ দেওয়ার তথ্যপ্রমাণ প্রকাশের পর মানুষ হয়তো আরও আক্রমণ করবে।’




হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির জন্মদিন আজ

বাংলা, বাঙালি, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ– এক ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। শেখ মুজিব মানেই বাংলাদেশ। মুক্তিকামী মানুষের স্লোগানের নাম শেখ মুজিব। বাঙালি জাতির চেতনার ধমনিতে প্রবাহিত শুদ্ধতম নাম শেখ মুজিব। তিনি চিরন্তন-চিরঞ্জীব; বাঙালির প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাঝে অবিনাশী চেতনার নাম শেখ মুজিব। তিনি বাঙালির অসীম সাহসিকতার প্রতীক– সমগ্র বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর।

আজ ১৭ মার্চ। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৫তম জন্মদিন। ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে তাঁর জন্ম। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এই বাঙালির জন্মদিনটি জাতি একই সঙ্গে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবেও উদযাপন করবে।

গোটা জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধা আর অবনত মস্তকে স্মরণ করবে সেই মহামানবকে, যাঁর হাত ধরেই এই ভূখণ্ডে রচিত হয়েছিল এক অমর কীর্তিগাথা। হাজার বছরের পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে যিনি বাঙালিকে এনে দিয়েছিলেন একটি জাতিসত্তার পরিচয়। দিনটি উদযাপিত হবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। থাকবে সরকারি ছুটিও।
জাতির পিতার জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার শপথ নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্কুলজীবনেই জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। কৈশোরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে প্রথমবারের মতো কারাবরণ করেন তিনি। ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। মেট্রিক পাসের পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) অধ্যয়নকালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরেবাংলা একে ফজলুল হকসহ তৎকালীন প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ওই সময় থেকে নিজেকে ছাত্র-যুব নেতা হিসেবে রাজনীতির অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেন।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পরপরই ঢাকায় ফিরে নতুন রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা নিয়ে অগ্রসর হন তিনি। সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ গঠন করেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তৎকালীন ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠিত হলে তরুণ নেতা শেখ মুজিব দলটির যুগ্ম সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নামকরণ করা হয় ‘আওয়ামী লীগ’।
বঙ্গবন্ধু বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, আটান্নর আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন ও বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনসহ পাকিস্তানি সামরিক শাসনবিরোধী সব আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাঙালির অধিকার আদায়ের এসব আন্দোলনের কারণে বারবার কারাগারেও যেতে হয় তাঁকে।

১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেমব্লির সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। একই বছর যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাঁকে। আওয়ামী লীগপ্রধান হিসেবে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন তথা বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানের স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুসহ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নামে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে তাদের কারাগারে পাঠান। ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাঙালি শেখ মুজিবকে কারামুক্ত করে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার পক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের ম্যান্ডেট লাভ করে আওয়ামী লীগ; কিন্তু পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির এ নির্বাচনী বিজয়কে মেনে নেয়নি। এরপর বঙ্গবন্ধু স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে প্রথমে স্বাধিকার আন্দোলন এবং চূড়ান্ত পর্বে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ দেন।

এ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় একাত্তরের মার্চে নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এ ভাষণে সেদিন স্বাধীনতার ডাক দিয়ে ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকনির্দেশনা দেন তিনি।

একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাসভবন থেকে ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরপর বঙ্গবন্ধুকে তাঁর বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে বীর বাঙালি একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু। সদ্য স্বাধীন দেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৭৫ সালে জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ১৫ আগস্টের কালরাতে নিজ বাসভবনে ক্ষমতালোভী ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নিহত হন। স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর জীবনাবসান ঘটে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে পাঁচজনের ফাঁসির রায় ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর করা হয়। এর মধ্য দিয়ে জাতির ইতিহাসের অন্ধকার যুগের অবসান ঘটে।

স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সাম্য ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবিস্মরণীয় ভূমিকার জন্য তিনি সারাবিশ্বে সমাদৃত। এসব ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ‘জুলিও কুরি’ পদকে ভূষিত হন তিনি। এ ছাড়া বিবিসির এক জরিপে বঙ্গবন্ধু সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন।

দিনের কর্মসূচি

রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকার পর ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেবেন তারা। তিন বাহিনীর সুসজ্জিত চৌকস একটি দল গার্ড অব অনার দেবে; বাজানো হবে বিউগল। পরে টুঙ্গিপাড়ায় শিশু-কিশোর সমাবেশে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদে কোরআনখানি, মোনাজাত, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা সভা হবে।

আওয়ামী লীগের দু’দিনব্যাপী কর্মসূচিতে রয়েছে, আজ সকাল সাড়ে ৬টায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতি ও সাড়ে ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং আগামীকাল সোমবার বেলা ১১টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে আলোচনা সভা। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখবেন।




আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু আর নেই

অনন্তের পথে পাড়ি দিলেন ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর (অ্যাটর্নি জেনারেল পদমর্যাদার) আইনজীবী গোলাম আরিফ টিপু। আজ শুক্রবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে অন্তিম নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। দীর্ঘদিন থেকেই তিনি বার্ধক্যজনিত শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তিনি আত্মীয়স্বজন ও অনেক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

গোলাম আরিফ ২০১০ থেকে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

গোলাম আরিফের ইন্তেকালের কথা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত চিফ প্রসিকিউটর আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী। তিনি জানান, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার গোলাম আরিফকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

গোলাম আরিফের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন সৈয়দ হায়দার আলী। পরিবারের সঙ্গে আলোচনার পর তাঁর দাফনের স্থান নির্ধারণ করা হবে বলেও তিনি জানান।




আন্তর্জাতিক কার্ড পরিষেবা চালু করল সিটিজেন্স ব্যাংক

সিটিজেন্স ব্যাংক পিএলসি গ্রাহকদের জন্য ভিসা ব্র্যান্ডের আন্তর্জাতিক কার্ড পরিষেবা (ডেবিট, ক্রেডিট এবং প্রিপেইড) চালু করেছে। গত বৃহস্পতিবার সিটিজেন্স ব্যাংক এবং ভিসা ইন্টারন্যাশনালের মধ্যে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

সিটিজেন্স ব্যাংক পিএলসির পক্ষে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুম এবং ভিসা ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়ার বিজনেস ডেভেলপমেন্ট পরিচালক আশীষ চক্রবর্তী চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। উভয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।