স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি একটি খাদ্য ডিম। অনেকে অবশ্য ওজন বেড়ে যাওয়া কিংবা হৃদরোগের আশঙ্কায় রোজ ডিম খেতে ভয় পান। পুষ্টিবিদরা বলেন, প্রতিদিন সকালের নাশতায় একটি করে ডিম খেলে নানা শারীরিক সমস্যার সমাধান হতে পারে। তবে কীভাবে ডিম খাচ্ছেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ।
ক্যালোরির হিসাব করে অনেকে ডিমের কুসুম খান না। তবে পুষ্টিবিদরা জানাচ্ছেন, একজন সুস্থ ব্যক্তি দৈনিক দুটি ডিম কুসুমসহ খেতে পারেন। এর বেশি খেলে সাদা অংশ খেতে হবে।
ডিম যত ভাজা হয় তার পুষ্টি তত নষ্ট হয়ে যায়। সবচে ভালো হয় যদি সেদ্ধ করে ডিম খান। পোচ বা হাফ বয়েল খেতে পারেন। সপ্তাহে একদিন ডিমের অমলেট খেতে পারেন।
ডিমের নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এমন কিছু উপকারিতা সম্পর্কে চলুন জেনে নিই-
শক্তি মেলে
ডিম খেলে দ্রুত শক্তি পাওয়া যায়। এতে থাকা ভিটামিন বি থেকেই মূলত এই শক্তি মেলে। প্রতিদিন সকালে একটি সেদ্ধ ডিম খেলে সারাদিন ক্লান্তিহীন থাকবেন।
ক্যানসারের সম্ভাবনা কমায়
ডিমে থাকা ভিটামিন ই কোষ ও ত্বকে থাকা ফ্রি র্যাডিকেল ধ্বংস করে। তাই ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। পাশাপাশি নতুন কোষ তৈরিতেও সাহায্য করে। নিয়মিত ডিম খেলে ব্রেস্ট ক্যানসারের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
পেশী মজবুত করে
অনেকেই পেশী ব্যথায় ভোগেন। ডিমে থাকা ভিটামিন ডি পেশী মজবুত করে। নিয়মিত যারা ব্যায়াম করেন তাদেরকে বিশেষজ্ঞরা ডিম খেতে বলেন।
দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়
ডিমে রয়েছে ভিটামিন এ। এটি দৃষ্টিশক্তিকে উন্নত করে। এছাড়া ডিমের কেরোটিনয়েড আর ল্যুটেন বয়স্ক ব্যক্তিদের ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হওয়ার আশঙ্কা কমায়।
স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়
সমীক্ষা অনুযায়ী, ডিম খেলে হার্টে রক্ত জমাট বাঁধে না। তাই হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। পাশাপাশি এটি সারা শরীরেই রক্ত চলাচল সচল রাখতে সাহায্য করে
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে
অনেকের মধ্যেই ভ্রান্ত ধারণা আছে, ডিম কোলেস্টেরল বাড়ায়। এটি একদমই ভুল। বরং ডিম কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ডিমে থাকা ওমেগা ৩ এই কাজটি করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, ডিম এইচডিএল বা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা প্রায় ১০ শতাংশ বাড়ায়।
লিভার ও স্নায়ু সুরক্ষিত রাখে
দেহের সার্বিক সুস্থতায় কোলাইন খুবই প্রয়োজন। কোলাইনের ঘাটতি হলে লিভারের নানা সমস্যা বা নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার হয়। একটি ডিমে প্রায় ৩০০-৩৫০ মাইক্রোগ্রাম কোলাইন থাকে। তাই ডিম খেলে লিভার ও স্নায়ু ভালো থাকে।
প্রোটিনের ঘাটতি মেটায়
প্রোটিনের মূল উৎস হলো অ্যামিনো অ্যাসিড। প্রোটিন তৈরিতে প্রায় ২১ ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড লাগে। এর ৯টি শরীরে তৈরি হয় না। তাই বাইরে থেকে প্রোটিন গ্রহণ করতে হয়। ডিমে এই অ্যামাইনো অ্যাসিড মেলে।
নখ মজবুত করে
অনেকেই নখ ভেঙ্গে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন। নখ মজবুত করে সালফার। ডিম হলো সালফারের উৎস। নখকে সুন্দর ও সাদা রাখতেও সাহায্য করে এটি।
অ্যানিমিয়া রোধ করে
নারী ও শিশুরা অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতায় বেশি ভোগে। শরীরে পর্যাপ্ত আয়রন থাকলে অ্যানিমিয়া হয় না। ডিমে রয়েছে আয়রন। তাই নিয়মিত ডিম খেলে রক্তাল্পতার সমস্যার সমাধান হয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ডিম দুর্দান্ত কার্যকরী। ঘন ঘন সর্দি-কাশি বা জ্বরে ভুগলে রোজ ডিম খান। এতে থাকা জিংক দেহের ইমিউনিটি সিস্টেমকে অনেকটাই শক্তিশালী করে।
হাড় ও দাঁতে মজবুত করে
হাড় মজবুত করে ফসফরাস। এই উপাদানটি আবার দাঁতও মজবুত করতে সাহায্য করে। ডিমে ফসফরাস রয়েছে। তাই হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে ডিম খান প্রতিদিন।
এছাড়ায় ডিম ওজন কমাতে সাহায্য সাহায্য করে। রক্তের লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধিতেও উপকারি ভূমিকা রাখে। তাই রোজ একটি করে ডিম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।