সুন্দরবনে বাঘ গুনতে বসছে ক্যামেরা

image_pdfimage_print

বাঘ গুনতে সুন্দরবনে বসছে ক্যামেরা। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনে চারটি রেঞ্জের ৬৬৫ পয়েন্টে বসানো হচ্ছে দুটি করে ক্যামেরা। কোনো বাঘ, হরিণ, শূকর বা অন্য কোনো প্রাণী ক্যামেরার সামনে দিয়ে গেলে সেই ছবি ও ১০ সেকেন্ডের ভিডিও ধারণ হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। বাঘশুমারির সব তথ্য প্রকাশ করা হবে আগামী বছরের জুনে।

সুন্দরবনের কালাবগি এলাকায় রোববার ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘগণনার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার কার্যক্রমের উদ্বোধন করতে গিয়ে বলেন, বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বাঘ সংরক্ষণ জরুরি। বাঘের সংখ্যা এবং বর্তমান অবস্থা জানার জন্য শুমারি হচ্ছে।

উদ্বোধনের পর সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের হলদিবুনিয়া এলাকা থেকে ক্যামেরা স্থাপন শুরু হয়। প্রথম ধাপে আগামী এপ্রিল পর্যন্ত সাতক্ষীরা ও শরণখোলা রেঞ্জে শুমারি করা হবে। এরপর নভেম্বর থেকে চার মাস শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে করা হবে শুমারি। মোট ৬৬৫টি গ্রিড বা পয়েন্টে ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। বনের গাছের সঙ্গে মাটি থেকে ৫০ সেন্টিমিটার ওপরে ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। প্রতিটি পয়েন্টে দুটি করে ক্যামেরা থাকবে ৪০ দিন। ১৫ দিন পরপর ক্যামেরার ব্যাটারি ও মেমোরি কার্ড পরিবর্তন করা হবে।

বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা আবু নাসের মো. মোহসিন হোসেন জানান, গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে কালাবগি ফরেন ফাউন্ডেশনের আওতাধীন খালগুলোর দুই পাশে জরিপ করে বাঘের গতিবিধি ও পায়ের ছাপ লক্ষ্য করার কাজ চলছে। এই খাল সার্ভের মাধ্যমে বাঘের পাগমার্ক বা পায়ের ছাপ দেখা হবে গোটা সুন্দরবনে। ক্যামেরা ট্র্যাপিং ও খাল সার্ভের কাজ সম্পন্ন হলে সব তথ্য-উপাত্ত ঢাকায় বন বিভাগের রিসোর্স ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইউনিটে পাঠানো হবে। সেখানে পর্যালোচনার পর ২০২৪ সালের জুনে বাঘশুমারির ফল ঘোষণা করা হবে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাঘের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ ও বাঘ সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ২৩ মার্চ ‘সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধু বাঘশুমারি খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত। শুমারির জন্য সম্প্রতি দুই কিস্তিতে এক কোটি ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে বন বিভাগ।

প্রকল্প পরিচালক জানান, সুন্দরবনের অভয়ারণ্য ও অভয়ারণ্য এলাকার বাইরে শুমারি করা হবে। বনের কম লবণাক্ত, মধ্যম লবণাক্ত ও বেশি লবণাক্ত সব এলাকাই জরিপের আওতায় আসবে।

শুমারি দলে থাকা বাঘ গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ আজিজ বলেন, ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের জন্য বাঘের সংখ্যা জানা খুবই জরুরি। জরিপে যদি দেখা যায় বাঘের সংখ্যা বেড়েছে, তাহলে বোঝা যাবে ব্যবস্থাপনা ভালো আছে। যদি দেখা যায় বাঘের সংখ্যা কমেছে, তাহলে বুঝতে হবে ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি আছে। তখন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তার ধারণা, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা এবার বাড়বে।

ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে সুন্দরবনে বাঘশুমারি হচ্ছে তৃতীয়বারের মতো। এর আগে ২০১৫ ও ২০১৮ সালে একই পদ্ধতিতে বাঘগণনা করা হয়েছিল। ২০১৫ সালের আগে পায়ের ছাপ দেখে শুমারি করা হতো। ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘ ছিল ১১৪টি। ২০১৫ সালে ছিল ১০৬টি।

সম্পর্কিত পোস্ট

bn_BDবাংলা