সাবেকদের আড্ডায় অতীত ফিরল বর্তমানে

image_pdfimage_print

‘পুরানো সেই দিনের কথা, ভুলবি কিরে হায়…আয়রে সখা প্রাণের মাঝে আয়/ মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়’। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত গানের আবেদনে আজ শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ চত্বরে বিভাগের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সম্মিলন ঘটে। আড্ডায়, গল্পে তারা মেতে ওঠেন স্মৃতিচারণে, অতীত রোমন্থনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদ বিজ্ঞান অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (ডুবা) এ আয়োজন করে।

শীতের সকালে কুয়াশা কাটতে না কাটতে সকাল আটটা থেকে বিভাগ চত্বর মুখর হয়ে ওঠে প্রাক্তন গ্র্যাজুয়েটদের পদচারণায়। ১০টায় শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন সংসদ সদস্য ও বিভাগের সাবেক ছাত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, বিশেষ অতিথি ছিলেন হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান শিক্ষা ও গবেষণার গুণগতমান বৃদ্ধিতে বিভাগে মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণা পরিচালনার লক্ষ্যে একটি করে গবেষণা ফান্ড প্রতিষ্ঠার জন্য অ্যালামনাইদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় যেমন সমৃদ্ধ হবে তেমনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পাবে।

হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, আজ থেকে একশ বছর আগে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী মফস্বল থেকে আসত। পাট, ধান বিক্রি করে বাবারা খরচ জোগাতেন। আজকেও পরিসংখ্যান তেমন বদলায়নি। মফস্বল থেকে শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষে যখন ভর্তি হয়, তারা কিছুই জানে না। তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব।

তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমরা পাঁচ ভাই, চার বোন। যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হতো তাহলে আমার বাবা কিন্তু আমাদের পড়াতে পারতেন না। আমার বাবার সেই সক্ষমতা ছিল না। তাহলে আমারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া হতো না। অনেকে এখান থেকে অনার্স, মাস্টার্স পাস করে বিদেশে যাচ্ছে, প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। আমি বিভাগের চেয়ারম্যান-শিক্ষকদের আহ্বান করব, তাদের একটি ডাটাবেজ থাকবে, তাদের সঙ্গে যেন যোগাযোগ রাখা হয়। শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিং করতে হবে। তাদের বুঝাতে হবে সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি দিয়েছে, সেই দায়িত্ববোধ থেকে সাবেকরা যদি পাশে এসে দাঁড়ায় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হবে।

এ সময় তিনি বিভাগের চেয়ারম্যানকে সাবেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা এবং বিভাগের কাজে তাদের যুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে ১০ লাখ টাকা প্রদান করেন।

মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, উন্নত বিশ্বে সাবেকদের অবদানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আমাদেরও এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গবেষণা ও উদ্ভাবনে ভূমিকা রাখতে হবে।

বিভাগ থেকে ১৯৯৫ সালে পাস করেছিলেন গোলাম ফারুক। বর্তমানে তিনি দিনাজপুর জেলার শিক্ষা অফিসার পদে রয়েছেন। অনুভূতি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে অনেক স্মৃতি। বন্ধুবান্ধবসহ একবার সুন্দরবন গিয়েছিলাম। এখনও মনে আছে। এখন সবাই ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় আছি। তাদের সবার সঙ্গে দেখা হলো, আড্ডা দিলাম। এ জন্যই এতদূর থেকে এলাম।

অনুষ্ঠানে বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এ জেড এম নওশের আলী খান ও অধ্যাপক সৈয়দ হাদীউজ্জামান, ঢাকা আইডিয়াল কলেজের সাবেক অধ্যাপক এম এ বারী, দুর্নীতি দমক কমিশনের সচিব মো. মাহবুব হোসেনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

এ ছাড়া বিভাগের ২০১৯ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করায় শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসীকে ড. মো. আতহার উদ্দিন স্বর্ণপদক এবং বিভাগের ৪৩ জন শিক্ষার্থীকে এককালীন বৃত্তি প্রদান করা হয়।

উদ্ভিদবিজ্ঞান অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আতহার উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা এবং সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আসফাক আহমদ।

এ ছাড়া শনিবার মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এবং আরবী বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভা ও পুনর্মিলনী পৃথক পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত হয়।

সম্পর্কিত পোস্ট

bn_BDবাংলা