মোঃ মাহবুবুল ইসলাম ভূঁঞা, (জেলা প্রতিনিধি,সময় সংবাদ, লক্ষ্মীপুর) :
লক্ষ্মীপুর জেলার সংবাদপত্র বিকাশের ইতিবৃত্ত ও সাংবাদিকতা নিয়ে লিখতে গিয়ে প্রথমেই হোঁচট খেলাম। প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্তের অভাবে অনেক সময় ব্যয় করেও স্পষ্ট তেমন কোন ধারণা পাওয়া যায়নি। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এবং জেলা তথ্য অফিসেও এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্ত সংরক্ষিত না থাকায় অসুবিধায় পড়তে হয়েছে। তথাপিও ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেঁটে এবং সংশ্লিষ্ট গুণীজনদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করেই এ বিষয়ে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি। সেই সাথে যারা প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করেছেন শুরুতেই তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
লক্ষ্মীপুর জেলার সংবাদপত্রের ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে জানা যায় এ জেলা থেকে সর্বপ্রথম পত্রিকা প্রকাশিত হয় ১৯২৮ সালে। মরহুম আবদুল হামিক উকিল ও আহম্মদ সরওয়াদ্দীর যৌথ প্রচেষ্টায় “মুক্তির বাণী” নামক একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হতো লক্ষ্মী নারায়ণ প্রেস থেকে। যা পরবর্তীতে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের কৃষক প্রজাপার্টির মুখপত্র হিসেবে ২/৩ বছর প্রকাশের পরই বন্ধ হয়ে যায়। তারপর দীর্ঘকাল এ জেলা থেকে আর তেমন কোন পত্রিকা প্রকাশের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে পাকিস্তান আমলে এ লক্ষ্মীপুরের তৎকালীন মডেল হাই স্কুল মাঠে ফুটবল খেলার আসর বসত। যে আসরে কলকাতাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খেলোয়াড়রা এখানে খেলতে আসতেন। ফুটবল খেলার এ মৌসুমগুলোতে বিশিষ্ট নাট্যকার রামেন্দু মজুমদার এর সম্পাদনায় তৎকালীন গৌরাঙ্গ প্রেস থেকে “খেলার পাতা” নামক একটি পত্রিকা প্রকাশিত হতো। ১৯৬৯ সালের দিকে “চেতনা” নামের একটি সাময়িকী প্রকাশিত হলেও পরে তা আর প্রকাশিত হয়নি।
মূলতঃ স্বাধীনতার পরেই এ জেলায় সংবাদপত্র শিল্প কিছুটা বিকাশ লাভ করে। মরহুম অধ্যাপক আবদুল হাই এর সম্পাদনায় ১৯৭২ সালের ২৩ জানুয়ারী রহমানিয়া প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় “নতুন দেশ” নামক একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। একই নামে যশোহর থেকে আরো একটি পত্রিকা প্রকাশিত হওয়ায় এ পত্রিকাটি পরবর্তী কালে “নতুন সমাজ” নাম ধারণ করে। তৎকালীন সময়ে নিয়মিত প্রকাশিত এ পত্রিকাটির মুদ্রাকর ও বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন লক্ষ্মীপুর জেলার সর্বজনস্বীকৃত শ্রদ্ধাভাজন সাংবাদিক মরহুম গোলাম রহমান। পরবর্তী কালে অধ্যাপক আবদুল হাই শারিরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় তার বড়ছেলে অধ্যাপক সেলিম রেজা এ পত্রিকাটির হাল ধরেন। দীর্ঘ ৩৪ বছর এ পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হওয়ার পর গত কয়েক বছর থেকে এ সাপ্তাহিকীটি আর প্রকাশিত হচ্ছেনা। এখানে উল্লেখ্য যে, তৎকালীন সময়ে লক্ষ্মীপুর থানা পরবর্তীতে মহকুমা ও জেলা হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়ার পেছনে এ প্রত্রিকাটির ভূমিকা ছিল উল্লেখ করার মত।
১৯৭৩ সালে রহমানিয়া প্রেস থেকে এম এ মঈদ এর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় “সাপ্তাহিক বাংলাদেশ বার্তা”। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে তৎকালীন সরকার বিশেষ ক্ষমতা আইনে দেশের ৪টি সংবাদপত্র রেখে বাকী সকল পত্রিকার ডিকারেশন (সরকারী অনুমোদন) বাতিল করায় এ পত্রিকাটিও বন্ধ হয়ে যায়। তখন এ পত্রিকার সম্পাদক এম এ মঈদ তৎকালীন কৃষি সচিব মাহবুবুল আলম চাষীর সহায়তায় সমবায়ীদের মুখপত্র হিসাবে “সাপ্তাহিক সমবায় বার্তা” নামে একটি পত্রিকার সরকারী অনুমোদন হাসিল করেন। দেশের ৫ম সংবাদপত্র হিসাবে “সাপ্তাহিক সমবায় বার্তা” পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। এ পত্রিকাটিরও মুদ্রাকর ও বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন সাংবাদিক গোলাম রহমান। ২০০৬ সালে এম এ মঈদ এর মৃত্যুর পর এ পত্রিকাটিও আর প্রকাশিত হতে দেখা যায়নি।
১৯৭৩ সালে “গণমুখ” নামের আরো একটি পত্রিকার আত্মপ্রকাশ ঘটে কিছুদিন চলার পর পরবর্তীতে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৮২ সালে আল-আমিন প্রেস থেকে আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় “সাপ্তাহিক এলান” নামক আরো একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। পরবর্তীতে আবদুল মান্নান ভূঁইয়া নিজেই ফাতেমা প্রিন্টিং প্রেস নামক একটি প্রেস স্থাপনের পর থেকে তার মালিকানাধীন প্রেস থেকেই ‘সাপ্তাহিক এলান’ নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। এরই মাঝে বিভিন্ন চড়াই উৎরাই পার করে ‘সাপ্তাহিক এলান’ পত্রিকাটি ৩৩ বছরে পা দিলে পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশক আবদুল মান্নান ভূঁইয়া বার্ধ্যক্যজনিত কারণে লক্ষ্মীপুরের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও জেলা তাঁতীলীগ সভাপতি জাকির হোসেন ভূঁইয়া আজাদ এর উপর পত্রিকাটির সম্পাদনার দায়িত্বভার অর্পণ করে নিজে অবসর নেন। ২০১৫ সালের ১৫ জুন থেকে জাকির হোসেন ভূঁইয়া আজাদের সম্পাদনায় “সাপ্তাহিক এলান” পত্রিকাটি এখনো অনিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।
১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয় ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘প্রচ্ছদ’। যা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
১৯৮৭ সালে মনোরম প্রেস থেকে হোসাইন আহমদ হেলাল সম্পাদনায় আত্মপ্রকাশ ঘটে সাপ্তাহিক “নতুন পথ” পত্রিকার। নানা চড়াই উৎরাই পার হয়ে বেশ কয়েক বছর চলার পর বেশ কয়েকবারই এ পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদে পরিবর্তন ঘটে। বর্তমানে এ পত্রিকাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে চলমান পত্রিকার তালিকায় নাম না থাকলেও বি এম সাগরের সম্পাদনায় পত্রিকাটি মাঝে মাঝে প্রকাশিত হতে দেখা যায়।
১৯৮৯ সাল থেকে এম হেলাল এর সম্পাদনায় ‘মাসিক লক্ষ্মীপুর বার্তা’ প্রকাশিত হলেও এটি বর্তমানে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।
১৯৯১ সালে সাংবাদিক গোলাম রহমান এর সম্পাদনায় তারই মালিকানাধীন রহমানিয়া প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় “সাপ্তাহিক দামামা”। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে তারই সম্পাদনায় বাণী প্রিন্টিং প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় আরো একটি দৈনিক পত্রিকা “দৈনিক মধুমালতি”। ২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারী সাংবাদিক গোলাম রহমানের মৃত্যুর পর পত্রিকা দুটোর প্রকাশনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তারই জেষ্ঠ্যপুত্র সাংবাদিক আনোয়ারের রহমান বাবুল। তাঁর সম্পাদনায় কিছু দিন পত্রিকা দুটি প্রকাশের পর লক্ষ্মীপুর প্রেসকাব নির্বাচন সংক্রান্ত জটিলতাকে কেন্দ্র বিরোধের জেরে দৈনিক মধুমালতি পত্রিকাটি বাণী প্রিন্টিং প্রেস থেকে প্রকাশিত হচ্ছেনা মর্মে জেলা প্রশাসক বরাবরে দরখাস্তের প্রেক্ষিতে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেয় জেলা প্রশাসন। একই ভাবে সাপ্তাহিক দামামা পত্রিকাটিও বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৯১ সালে জেলার রামগঞ্জ উপজেলা থেকে প্রকাশিত হতো ‘রামগঞ্জ বার্তা’, যা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
১৯৯৩ সালে গাজী মোঃ গিয়াস উদ্দিন সম্পাদিত ‘মাসিক বাংলা আওয়াজ’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এখনও এ পত্রিকাটি পাঠকদের মন জয় করে প্রকাশিত হচ্ছে।
১৯৯৫ সালে বেশ কয়েকটি দৈনিক ও সাপ্তাহিক প্রত্রিকার আত্মপ্রকাশ ঘটে লক্ষ্মীপুর জেলা থেকে। এ সময় বাণী প্রিন্টিং প্রেসের স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ কামাল হোসেন এর সহযোগিতায় তারই প্রেস থেকে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক অধ্যাপক মাইন উদ্দিন পাঠান এর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক “আনন্দ আকাশ”। পত্রিকাটি সে সময়ে পাঠক প্রিয়তা পেলেও সাড়ে ৩ বছর চলার পর নানা কারণে এ পত্রিকাটিও বন্ধ হয়ে যায়।
ওই বছরই চৌমুহনীর মিতালি প্রেস থেকে আহম্মদ সিপার উদ্দিন এর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় “দৈনিক আল চিশত”। সাইফিয়া দরবার শরীফের মুখপত্র হিসাবে প্রকাশিত এ পত্রিকাটির প্রকাশক মাওলানা সাইফুল ইসলাম ছিদ্দিকী। ২০০৩ সালের ১লা জানুয়ারী থেকে আবু জাকের রাবেত এর সহযোগিতায় এ পত্রিকাটি অনিয়মিত ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।
ওই বছরই নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাশপুর এলাকার বিশিষ্ট সাংবাদিক কাজী মোঃ রফিক উল্যাহ এর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় “দৈনিক লক্ষ্মীপুর কন্ঠ”। ২০০৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে এ পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদনার দায়িত্ব নেন সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম। কিছুদিন পূর্বে পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশক কাজী মোঃ রফিক উল্যাহ মৃত্যুবরণ করলেও রফিকুল ইসলামের সম্পাদনায় এখনো পত্রিকাটি প্রকাশিত হচ্ছে।
১৯৯৯ সালে রামগঞ্জ উপজেলা থেকে ফরিদ আহাম্মদ বাঙ্গালীর সম্পাদনা ও প্রকাশনায় ‘মাসিক অগ্রজ’ প্রকাশিত হয়। এ পত্রিকাটি জেলাব্যাপী যথেষ্ট পাঠক প্রিয়তা অর্জন করে। বর্তমানে এটি ঢাকা থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।
২০০৫ সালে সাংবাদিক হোসাইন আহমদ হেলাল এর সম্পাদনায় ও নির্বাহী সম্পাদক শওকত মাহমুদের পরিচালনায় নোয়াখালীর চৌমুহনীর ইউনিক প্রেস এন্ড প্যাকেজেস থেকে প্রকাশিত হয় “দৈনিক নতুন চাঁদ”। শুরুতেই লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক প্রতিবেদন, আর তৃণমূলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংবাদ পরিবেশনের কারণে ব্যাপক পাঠক প্রিয়তা পায় পত্রিকাটি। একাধারে বেশ কয়েক বছর পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হওয়ার পর নানাবিধ কারণে বর্তমানে এ পত্রিকাটিও নিয়মিত প্রকাশিত হতে দেখা যায় না।
২০০৫ সালের ৩১ জুলাই ফাতেমা অফসেট প্রিন্টিং প্রেস থেকে এ এফ এম মতিউর রহমান এর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় “দৈনিক ভোরের মালঞ্চ’’। বেশ কয়েক বছর এ পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হলেও বর্তমানে অনিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।
জেলা জাতীয়পার্টির বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম ২০০৮ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত একটি মাসিক ও দুইটি দৈনিকসহ ৩ তিনটি পত্রিকার মালিক হন। মূলত এ সময় থেকেই শুরু হয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পত্রিকার মালিক হওয়ার প্রতিযোগিতা। জহিরুল ইসলাম ২০০৮ সালে ‘মাসিক উপকূল সংবাদ’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক হন। পরবর্তীতে ওই পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব দেন সাংবাদিক সাঈদ হোসেন নিক্সনকে। বর্তমানে এটি দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি এস এম বাবুল বাবর এর সম্পাদনায় প্রকাশিত হচ্ছে। জহির ২০০৯ সালে ‘দৈনিক উপকূল কন্ঠ’ নামক আরেকটি পত্রিকার অনুমোদন নেন। শুরুতে এ পত্রিকাটির সম্পাদনার ভারও সাঈদ হোসেন নিক্সনের উপর পড়লেও বর্তমানে (১/৫/২০১৫ সাল থেকে) এ পত্রিকাটি বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির লক্ষ্মীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মাহবুবুল করিম টিপুর সম্পাদনায় অনিয়মিত ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। ২০০৯ সালে মোঃ সহিদুল ইসলাম এর সম্পাদনায় ‘দৈনিক রব’ নামের আরো একটি দৈনিক পত্রিকার আত্মপ্রকাশ ঘটে।
এরই মধ্যে ২০১১ সালে জহিরুল ইসলাম দৈনিক উপকূল প্রতিদিন নামক আরো একটি পত্রিকার অনুমোদন নেন যা বর্তমানে তারই সম্পাদনায় প্রকাশিত হচ্ছে।
২০১০ সালে তৎকালিন জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আলহাজ্ব এম আলাউদ্দিন ‘দৈনিক লক্ষ্মীপুর নিউজ’ নামের একটি পত্রিকার অনুমোদন নিয়ে তারই সম্পাদনায় নিয়মিত প্রকাশ করতে থাকেন। বর্তমানে এ পত্রিকাটি অনিয়মিত ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।
ওই বছরই জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল খায়ের ভূঁইয়াও ‘দৈনিক লক্ষ্মীপুর প্রতিদিন’ নামক একটি পত্রিকার অনুমোদন হাসিল করলেও অদ্যাবধি আলোর মুখ দেখেনি পত্রিকাটি।
২০১১, ২০১২ এবং ২০১৩ সালের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ছিলেন মিডিয়া বান্ধব। তাঁর সময়ের মধ্যে তিনি প্রায় ০৯ টি দৈনিক পত্রিকার অনুমোদন দেন। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব আবু তাহের এর মেঝ ছেলে বর্তমান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগ সভাপতি একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুর ‘দৈনিক ভিশন লক্ষ্মীপুর’, বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এর ‘দৈনিক লক্ষ্মীপুর আলো’, জেলা জাতীয়পাটি (মঞ্জু) সভাপতি মোঃ আবদুল্লাহ এর ‘দৈনিক মানবকল্যাণ’, জাতীয়পাটির (এ) বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম এর ‘দৈনিক উপকূল প্রতিদিন’, তৎকালীন বিআরটিএ এর খন্ডকালীন অফিস সহকারী সাইফুল ইসলাম জুয়েল এর স্ত্রী সেলিনা আক্তার লুবনা এর নামে ‘দৈনিক কালের প্রত্যাশা’, সাংবাদিক মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ এর ‘দৈনিক মেঘনার পাড়’, মাহমুদুল হক এর ‘দৈনিক কালের প্রবাহ’, একেএম মিজানুর রহমান মুকুল এর ‘দৈনিক বাংলার মুকুল’, মোঃ সফিউল আজম চৌধুরী জুয়েল এর ‘দৈনিক মা-মাটি-মানুষ’ অন্যতম।
২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল থেকে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা মো: কামালুর রহিম সমর এর স্ত্রী খাদিজা বেগমের সম্পাদনা ও প্রকশনায় প্রকাশিত হচ্ছে ‘দৈনিক মুক্ত বাঙ্গালী’।
ওই বছরের ২৬ এপ্রিল আফজাল হোসেন সবুজ এর সম্পাদনা ও প্রকশনায় প্রকাশিত হয় জেলার আরেকটি ‘দৈনিক সবুজ জমিন’।
ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর মোঃ কামাল উদ্দিন হাওলাদারের সম্পাদনা ও প্রকাশনায় প্রকাশিত হয় ‘দৈনিক রূপসী লক্ষ্মীপুর’।
২০১৭ সালে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এডভোকেট মোঃ হাফিজুর রহমান এর সম্পাদনা ও প্রকাশনায় প্রকাশিত হয় ‘দৈনিক আলোকিত লক্ষ্মীপুর’।
একই বছর জেলা তাঁতীলীগ সভাপতি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোঃ জাকির হোসেন ভূঁইয়া আজাদ এর সম্পাদনা ও প্রকাশনায় প্রকাশিত হচ্ছে ‘দৈনিক লক্ষ্মীপুর সমাচার’।
এ ছাড়াও লক্ষ্মীপুর থেকে আরো কিছু নিয়মিত-অনিয়মিত সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা বের হতে দেখা যায়। এগুলো হলো- চৌধুরী মহিউদ্দিন মঞ্জুর সম্পাদিত ‘রামগতি দর্পণ’, আমির হোসেন সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘মুক্ত বিকাশ’, আ হ ম মোশতাকুর রহমান সম্পাদিত ‘সাপ্তাহিক লক্ষ্মীপুর দিগন্ত’, একেএম মিজানুর রহমান মুকুল সম্পাদিত ‘সাপ্তাহিক রামগঞ্জ দর্পন’, আবদুল্লাহ আল মামুন মোহাঃ ইউসুফ সম্পাদিত ‘সাপ্তাহিক গ্রামীন কন্ঠ’ ও মোঃ রাসেল পাটোয়ারী সম্পাদিত ‘মাসিক সাম্প্রতিক স্বদেশ’ অন্যতম।
তাছাড়াও জেলার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিকাশে ও চর্চায় গাজী মোঃ গিয়াস উদ্দিন এর ‘বিচিত্রিতা’, সেলিম উদ্দিন নিজামীর ‘লক্ষ্মীপুর সমাচার’, আলাউদ্দিন ভূঁইয়া ফারুক এর ‘কবিতা বার্তা’ এর সাহিত্য প্রকাশনা অনন্য ভূমিকা পালন করেছিল। যা বর্তমানে বন্ধ আছে।
বর্তমানে প্রায় ৩০ টিরও অধিক দৈনিক, সাপ্তাহিত ও মাসিক পত্রিকা এ লক্ষ্মীপুর জেলা থেকে অনিয়মিত ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।
এ ছাড়াও লক্ষ্মীপুর থেকে যে কয়েকটি অনলাইন পত্রিকা প্রচারিত হয় তার মধ্যে ২০১২ সালে ২৬ মার্চ প্রচারিত হয় সানাউল্লাহ সানু সম্পাদিত lakshmipur24.com, ২০১২ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রচারিত হয় নজরুল ইসলাম জয় সম্পাদিত sheershasangbad.com, ২০১৫ সালের ০৫ অক্টোবরে প্রচারিত হয় মোঃ সহিদুল ইসলাম সম্পাদিত rnb24, ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রচারিত হয় মোঃ আলী হোসেন সম্পাদিত akashbartabd.com অন্যতম।
সাংবাদিকতার বিকাশ ও লালনে পরস্পরের সহযোগিতা ও সহমর্মিতা অপরিহার্য। আর এ সহযোগিতার সেতুবন্ধন তৈরীতে একটি জেলার প্রেসকাবের গুরুত্ব অপরিসীম। সেই গুরুত্ব অনুধাবন করে তৎকালীন সময়ের কয়েকজন প্রথিতযশা সাংবাদিকের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে লক্ষ্মীপুর প্রেসকাব। আর এ প্রচেষ্টার অংশীজনরা হলেন, মরহুম গোলাম রহমান, এম এ মালেক, মরহুম এম এ মঈদ, ডাঃ মফিজুল হক, আবদুর রেজ্জাক চৌধুরী, মনির বিদ্যুৎ, গাজী গিয়াস উদ্দিন, সৈয়দ বেলায়েত হোসেন বেলাল প্রমুখ। তাঁদের আন্তুরিক প্রচেষ্টা, ত্যাগ তিতিক্ষা ও আর্থিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে এ প্রেসকাব। প্রেসকাবের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন প্রবীন সাংবাদিক মরহুম আলহাজ্ব গোলাম রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আরেক প্রবীন সাংবাদিক এম এ মালেক।
পরবর্তীতে আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, মরহুম গোলাম রহমান, মরহুম জাকির হোসেন, মরহুম এম এ মঈদ, অধ্যাপক মাইন উদ্দিন পাঠান, মোঃ কামাল হোসেন, হোসাইন আহাম্মদ হেলাল, নাসির উদ্দিন মাহমুদ, আ হ ম মোশতাকুর রহমান, মোঃ কাউছার প্রমুখ সাংবাদিকগণ পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সময়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
ইতোমধ্যে নেতৃত্বের কোন্দল, মামলা- হামলাসহ নানাবিধ কারণে সাংবাদিকদের মাঝে অনৈক্যের ফলে এ ঐতিহ্যবাহী লক্ষ্মীপুর প্রেসকাব এর সুনাম ও সুখ্যতি যথেষ্ট পরিমাণে নষ্ট হয়েছে। তথাপিও সাংবাদিকরা পুনরায় তাদের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারে এ প্রেসকাবকে সুন্দর ও সুচারুরূপে পরিচালনার লক্ষ্যে ১৭ আগষ্ট ২০১৭ খ্রিঃ ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি এড্হক কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটি অল্প সময়ের মধ্যে পুরাতন ও নতুন সদস্য যাচাই- বাছাই সাপেক্ষে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টিতে সহায়তা করবেন। সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা। বর্তমান এডহক কমিটিতে যারা আছেন তারা হলেন- এম এ মালেক- ব্যুরো প্রধান- দৈনিক ভোরের পাতা, হোসাইন আহাম্মদ হেলাল- সম্পাদক- দৈনিক নতুন চাঁদ/ দৈনিক ইনকিলাব, মোঃ কামাল হোসেন- দেশ টিভি/ দৈনিক ভোরের কাগজ, গাজী মোঃ গিয়াস উদ্দিন- সম্পাদক- মাসিক বাংলা আওয়াজ, মোঃ কাউছার- এটিএন বাংলা ও নিউজ, মোঃ আবুল কালাম আজাদ- সম্পাদক- দৈনিক মেঘনারপাড়/ দৈনিক যুগান্তর/এনটিভি, এম জে আলম- দৈনিক প্রথমআলো, মোঃ মাহ্বুবুল ইসলাম ভূঁঞা- সময় টেলিভিশন, মহিউদ্দিন ভূঁইয়া মুরাদ- জনকন্ঠ/ চ্যানেল আই, তৌহিদুর রহমান রেজা- ডিবিসি নিউজ ও মোঃ জহির উদ্দিন- দৈনিক আমাদের সময়/ বিটিভি।
বর্তমানে জেলায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার উল্লেখ্যযোগ্য সাংবাদিকরা হলেন, এম এ মালেক- ব্যুরো প্রধান- দৈনিক ভোরের পাতা, হোসাইন আহাম্মদ হেলাল- সম্পাদক, দৈনিক নতুন চাঁদ/ ইনকিলাব, মো: কামাল হোসেন- দৈনিক ভোরের কাগজ/ দেশ টিভি, গাজী মোঃ গিয়াস উদ্দিন- সম্পাদক- মাসিক বাংলা আওয়াজ, আ.হ.ম. মোশতাকুর রহমান- দৈনিক নয়াদিগন্ত, সেলিম উদ্দিন নিজামী- দৈনিক সংগ্রাম, মোঃ আবুল কালাম আজাদ- সম্পাদক- দৈনিক মেঘনারপাড়/দৈনিক যুগান্তর/ এনটিভি, মো: কাউছার- এটিএন বাংলা ও নিউজ, এমজে আলম- দৈনিক প্রথমআলো, মোঃ মাহবুবুল ইসলাম ভূঁঞা- সময় টিভি, মহিউদ্দিন মুরাদ- দৈনিক জনকন্ঠ/ চ্যানেল আই, হোসেন আহাম্মদ শাহজাহান- বাংলাভিশন, মো: জহির উদ্দিন- দৈনিক আমাদের সময়/বিটিভি, ফেরদৌস বেগম নয়ন-একুশে টিভি, সাইফুল ইসলাম স্বপন- যায় যায় দিন/ চ্যানেল ২৪/ বিডি নিউজ২৪.কম/ বাংলা ট্রিবিউন, ইসমাইল হোসেন জবু- দৈনিক খবর/ দৈনিক মানবকল্যাণ, মোঃ আবদুল মালেক- দৈনিক ইত্তেফাক, মো: সহিদুল ইসলাম- সম্পাদক- দৈনিক রব ও rnb24.com/ দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ/ এসএ টিভি, মোঃ তৌহিদুর রহমান রেজা- ডিবিসি নিউজ, মাজহারুল আনোয়ার টিপু- বৈশাখী টিভি, সাইদুল ইসলাম পাবেল- বাংলাদেশ প্রতিদিন/ নিউজ ২৪, মাসুদুর রহমান খান ভুট্টু- দৈনিক সংবাদ, মো: আলী হোসেন- দৈনিক ভিশন লক্ষ্মীপুর/ বাংলাদেশ সময়/ মাইটিভি, কাজল কায়েস- দৈনিক কালের কন্ঠ/ চ্যানেল নাইন, আতোয়ার রহমান মনির- সমকাল, শাকের মো: রাসেল- মাছরাঙা টিভি/ শীর্ষ নিউজ, এস এম বাবুল বাবর- দৈনিক ইনকিলাব, এবিএম নিজাম উদ্দিন- গাজী টিভি, মোঃ আব্বাস হোসেন- দৈনিক মানবজমিন/ ইন্ডিপেনডেন্ট, নজরুল ইসলাম জয়- দৈনিক নবরাজ/ সম্পাদক- শীর্ষ সংবাদ, সোহেল মাহমুদ মিলন- বিজয় টিভি/ দৈনিক ভিশন লক্ষ্মীপুর, পলাশ সাহা- আরটিভি/ দৈনিক ভিশন লক্ষ্মীপুর, মোঃ মামুনুর রশিদ- মোহনা টিভি, মোঃ সাজ্জাদুর রহমান- বাংলা নিউজ ২৪.কম অন্যতম।
স্থানীয়ভাবে ও জাতীয় পর্যায়ে সাংবাদিকতা পেশায় অনন্য ভূমিকা পালনকারী যারা আজ আমাদের মাঝে নেই তারা হলেন- বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সম্পাদক সানাউল্লা নূরী (মৃত্যু- ২০০১ খ্রি.), সাংবাদিক গোলাম রহমান (মৃত্যু- ২০১১ খ্রি.), সাংবাদিক এম এ মঈদ (মৃত্যু- ২০০৬ খ্রি.), সাংবাদিক জাকির হোসেন (মৃত্যু- ২০০৭ খ্রি.), সাংবাদিক আলহাজ্ব মনোয়ারের রহমান খোকন (মৃত্যু- ২০১২ খ্রি.), সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম খাঁন (মৃত্যু- ২০১৪ খ্রি.), সাংবাদিক আহসান উল্লাহ মজুমদার (মৃত্যু- খ্রি.) প্রমুখ।