ঢাকার ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায় করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। ৪০টি প্রতিষ্ঠান ২৩ কোটি ৫৫ লাখ ৮ হাজার ৮৮০ টাকা অতিরিক্ত ফি আদায় করেছে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে। প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় সাড়ে ৬ হাজার পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ১০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ প্রায় ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ফি আদায় করেছে বলে মাউশি অধিদফতরের ১১টি মনিটরিং টিমের প্রতিবেদনে প্রমাণ হয়েছে। গত ২ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও সমপর্যায়ের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এর আগে এই পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গত ২০ নভেম্বর মাউশি অধিদফতর ১১টি অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য একটি করে কমিটি গঠন করে। প্রতিটি কমিটিতে তিন জন করে সদস্য রাখা হয়। এসব কমিটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে ৪১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে প্রতিবেদন দেয়। এর মধ্যে বাড্ডা আলাতুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় এ সম্পর্কে তথ্য দেয়নি। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরকারি হাইস্কুলও রয়েছে। তবে বেশির ভাগই প্রাইভেট, এমপিওভুক্ত ও ট্রাস্ট পরিচালিত।
মাউশি’র মনিটরিং প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফরম পূরণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত টাকা নিয়েছে বলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, তারা টাকা ফেরত দিয়েছে। আবার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দাবি, তারা রেজ্যুলেশন করে টাকা আদায় করেছেন।
স্কুল ও কলেজের পরীক্ষা সংক্রান্ত সব বিষয়ের দায়িত্ব পালন করে শিক্ষাবোর্ড। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কৌশল নির্ধারণ, নীতি ও সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে। রাজধানীর অভিযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে।
এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর প্রীতিশ কুমার সরকার সংবাদকে বলেন, ‘এটা মূলত মাউশি’র এখতিয়ার। তারাই ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজন হলে আমরাও ব্যবস্থা নিতে পারি।’
মাউশি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানীর ইসলামবাগ আশরাফ আলী উচ্চ বিদ্যালয় ৭৭ জন ছাত্রের কাছ থেকে জনপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা করে অতিরিক্ত আদায় করেছে ৯২ হাজার ৪০০।
ইসলামবাগ আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ৬১ জন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে অতিরিক্ত আদায় করেছে ৩০ হাজার ৫০০ টাকা; রায়হান স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৭০ জন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে জনপ্রতি তিন হাজার ৫০০ টাকা করে অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে দুই লাখ ৪৫ হাজার টাকা, মুকুলিয়া শিক্ষালয়ের ৬৯ জন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে জনপ্রতি ৩ হাজার ১৫০ টাকা করে অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৫০ টাকা।
এছাড়া ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুল, জামিলা খাতুন লালবাগ উচ্চ বিদ্যালয়, নতুন পল্টন লাইন স্কুল, শহীদ মানিক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, শহীদ শেখ রাসেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, গজমহল ট্যানারি উচ্চ বিদ্যালয়, সালেহা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ওয়াজউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, আশরাফাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, হাজী আবদুল আওয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, বাড্ডা উচ্চ বিদ্যালয়, ছোলমাইদ উচ্চ বিদ্যালয়, মডেল একাডেমি মিরপুর-১, পল্লবী মাজেদুল ইসলাম মডেল স্কুল, ধামাল কোর্ট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা উচ্চ বিদ্যালয়, আলহাজ আব্বাস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, মিরপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়, ড. মুহাম্মদ সহীদুল্লাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, এসওএস হারমান মেইনার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইব্রাহিমপুর সালাউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, দক্ষিণ কাফরুল মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্ট গ্রেগরি উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্ট ফ্রান্সিস জেবিয়ার্স গার্লস হাইস্কুল, ঢাকা সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুল, দক্ষিণ মুহছেন্দি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আনন্দময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, হাম্মাদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, রমনা রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়, বংশাল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মিল্লাত উচ্চ বিদ্যালয়, পোগোজ স্কুল, গ্রাজুয়েটস উচ্চ বিদ্যালয়, কেএল জুবিলি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আহমেদ বাওয়ানী স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষাবোর্ড নির্ধারিত ফি’র চেয়ে বেশি ঢাকা আদায় করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে মাউশি অধিদফতর।