ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের মালিগ্রাম কলাতলা গ্রামে জমি সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বিরোধের জের ধরে বশির হাওলাদার (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে রাতের আধারে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে জখম করে।
পরে মৃত ভেবে হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় হামলাকারিরা। মঙ্গলবার(৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ২ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বুধবার ভোর সাড়ে ৪ টার দিকে মৃত ভেবে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। আহত বশির হাওলাদারের স্ত্রী রাশেদা বেগম বলেন, রাতে আমার স্বামী প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। রাত থেকেই আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে তার কোন সন্ধান পাই না।
বুধবার সকাল ৮ টার দিকে এ হাসপাতাল থেকে এক নারী আমাকে মোবাইলে কল দিয়ে বলেন, আপনার স্বামী পাঁচ তলায় ভর্তি, তার অবস্থা ভাল না, আপনারা দ্রুত আসেন। তখন আমি আমার স্বামীর সাথে কথা বললে সে বলে, তাকে মেরে হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে গেছে। আহত বশির হাওলাদার বলেন, রাতে আমি ঘর থেকে বের হলে আমাকে রেজাউল মাতব্বরের ছেলে শাহিন মাতুব্বর ও সাদ্দাম সহ ৭ জন আমার মুখ চেপে পাশের মাঠে নিয়ে যায়।
এরপর শাহিন আমাকে রড, ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপায়। আমি তখন তাদের কাছে জীবন ভিক্ষা চাইলেও তারা শুনে নাই। এ সময় ওরা ফোন করে আব্দুল মজিদ ব্যাপারীর ছেলে শাহাবুদ্দিনকে ডেকে আনে। শাহিন এসময় বলে ও মরে গেছে এখন কি করবি। চল পালাই। তখন শাহাবুদ্দিন বলে না ওরে হাসপাতালে দিয়ে আসি। এরপর আমার আর জ্ঞান ছিল না।
বুধবার সকালে জ্ঞান ফিরলে আমি পাশের বেডের একজনকে আমার স্ত্রীর নাম্বার দিয়ে আমার অবস্থা জানাতে বলি। আহত বশির হাওলাদারের ছেলে রাশেদ হাওলাদার বলেন, আমার ভগ্নীপতি আনু মাতব্বরের সাথে প্রতিবেশী ছবেদ আলী ও রেজাউল মাতব্বরের জমির সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বিরোধ চলে আসছে।
রেজাউল মাতব্বর ও ছবেল আলী তাদের ওয়ারিশের কিছু মাঠের জমি বিক্রি করে যা আমার ভগ্নীপতির জমির লাগোয়া। রেজাউল ও ছবেল আলীকে তাদের বিক্রিত জমি বুঝিয়ে দেওয়া সময় আমার ভগ্নীপতি জমির সীমানা মেপে নির্ধারণ করে দিতে বলে। কারণ তারা তাদের অতিরিক্ত জমি যা ভগ্নীপতির তা তারা জোর করে দখল করতে চাচ্ছিল।
গত রবিবার এই নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে দু পক্ষের সংঘর্ষ হয়। সে ঘটনায় দু পক্ষেরই বেশ কয়েকজন আহত হন।
এর জের ধরে মঙ্গলবার দিনগত রাতে রেজাউল মাতব্বরের ছেলে শাহিন, সাদ্দাম, শাহাবুদ্দিন ও ছবেদ আলী মিলে আমার বাবাকে রাতের আধারে তুলে নিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। রাশেদ আরও জানান, অনেক আগে থেকেই গ্রামের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার করার জন্য সব সময় সাধারণ গ্রামবাসীকে হুমকি ধামকিতে রাখে। শক্তির বড়াই করে গ্রামের অনেক মানুষকে তারা নির্যাতন করেন। আমার বাবার অবস্থা ভালো না। আল্লাহ জানে কি হয়।
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত ইর্ন্টার্নি চিকিৎসক কামাল হোসেন জানান, আমরা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় পাই। তার হাতে ও পায়ের হাড় ভাঙ্গা। তার চিকিৎসা চলছে। তবে তার অবস্থা আশংকা জনক বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়ারুল ইসলাম বলেন, আহত বশিরের পরিবারকে থানায় আসতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।