বাংলাদেশকে এখনো কেউ আইসিটি গন্তব্য হিসেবে মনে করে না

দেশের সফটওয়্যার ব্যবসা খাতের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৮ সালের ১৩ আগস্ট। সম্প্রতি ২৫ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন করেছে সংগঠনটি। দেশের সফটওয়্যার খাতের উন্নয়নে বেসিস কী ভূমিকা রাখছে, ভবিষ্যতে কী ভূমিকা রাখবে, সেসব নিয়ে কথা বলেছেন বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ। ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেসিস কার্যালয়ে এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পল্লব মোহাইমেন ও ইশতিয়াক মাহমুদ।

নব্বইয়ের দশকের শেষভাগে জেআরসি (জামিলুর রেজা চৌধুরী) কমিটির সুপারিশ থেকে ভারতের ন্যাসকমের আদলে বেসিসের প্রতিষ্ঠা। মূলত দেশের সফটওয়্যার রপ্তানি বাড়ানোর যে উদ্দেশ্য নিয়ে বেসিসের যাত্রা শুরু হয়েছিল, ২৫ বছর পর এসে তা সফল হয়েছে কি?

রাসেল টি আহমেদ: সফলতার মাপকাঠি অনেকগুলো। জেআরসি কমিটি মূলত গঠন করা হয়েছিল দেশ থেকে সফটওয়্যার রপ্তানি করতে করণীয় নির্ধারণের জন্য। সেই কমিটির বিভিন্ন সুপারিশের মধ্যে একটি ছিল সফটওয়্যার রপ্তানির জন্য তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) ও তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক (আইটিইএস) সেবাগুলোর জন্য আলাদা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা। সেই সুপারিশের আলোকে ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরু করে বেসিস। বেসিসের সদস্যরা বর্তমানে বছরে ১৮০ কোটি ডলারের সফটওয়্যার বিদেশে রপ্তানি করছে। সংগঠনটি বর্তমানে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শীর্ষ সংগঠন হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের সফটওয়্যার খাতের উন্নয়নে ২৫ বছর ধরে ভূমিকা রাখা বেসিস ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বেসিস প্রতিষ্ঠার পর বছরে ১০০ কোটি ডলারের সফটওয়্যার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রার কথা আমরা শুনেছি। কয়েক বছর ধরে এই লক্ষ্যমাত্রা ৫০০ কোটি ডলার বলা হচ্ছে। বাংলাদেশ আসলে কী পরিমাণ সফটওয়্যার রপ্তানি করে? বর্তমান পরিস্থিতিতে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার রপ্তানি করা কি আদৌ সম্ভব?

রাসেল টি আহমেদ: লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ছুটতে হলে কিছু কর্মপরিকল্পনা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে হয়তো আমাদের কিছু ঘাটতি ছিল। আমাদের সফটওয়্যার রপ্তানির প্রধান চারটি বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও জাপান। দেশগুলোর প্রযুক্তি খাতে এখন প্রায় এক কোটি দক্ষ কর্মীর চাহিদা রয়েছে। আমরা যদি ১০ লাখ কর্মীর কাজও দেশে বসে করে দিতে পারি, তবে বছরে দুই হাজার কোটি ডলার আয় করা সম্ভব। বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা কর্মপরিকল্পনা ও কৌশল নির্ধারণ করেছি। আমরা ৩/৩ একটা সূত্রের কথা বলছি। সফটওয়্যার খাত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকার—এ তিন খাতকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আর তিনটি কাজ করতে হবে। এক. গবেষণা। ধরুন ডটনেটে দক্ষ মানুষ প্রয়োজন জাপানের। আমাদের সেই দক্ষ জনবল আছে, কিন্তু জাপানে তাঁদের জাপানি ভাষা জানতে হবে, নিয়োগ পাওয়ার আগেই। কোথায় কেমন মানুষ পাঠাতে পারব বা কোন বাজার কীভাবে ধরতে পারব, সে জন্য নির্দিষ্টভাবে গবেষণা প্রয়োজন। দুই. দেশের ব্র্যান্ডিং। বাংলাদেশকে এখনো কেউ আইসিটি গন্তব্য (ডেস্টিনেশন) হিসেবে মনে করে না। তাহলে কাজ দেওয়ার জন্য আমাদের কথা কীভাবে ভাববে? এ জন্য প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের সক্ষমতা তুলে ধরে বিদেশে ‘বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং’ করতে হবে। ৩/৩ সূত্রের তিন নম্বরে রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা বাড়ানো। কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতকদের নিয়ে শুধু ভাবলে হবে না, গ্রাফিক ডিজাইনার, ইউআই (ইউজার ইন্টারফেস) ডিজাইনার এমন দক্ষ মানুষের চাহিদাও বাইরে রয়েছে।

সরকার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং হালের স্মার্ট বাংলাদেশ লক্ষ্য অর্জনে সফটওয়্যার ও আইটিইএস ব্যবসা খাত কতটা ভূমিকা রাখতে পারে?

রাসেল টি আহমেদ: ডিজিটাল বাংলাদেশ শুধু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ভিত্তিক। কিন্তু স্মার্ট বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সব খাতকে স্মার্ট হতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে সব খাতে। আর এ ক্ষেত্রে আইসিটি খাত হবে সবকিছুর নিউক্লিয়াস।

বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ সফটওয়্যার ও আইটিইএস বাজার কত বড়?

রাসেল টি আহমেদ: প্রায় ২০০ কোটি ডলারের অভ্যন্তরীণ বাজার আমাদের রয়েছে। ভবিষ্যতে এর পরিমাণ হতে পারে ৪০০ থেকে ৬০০ কোটি ডলার।

বেসিসের সদস্য কারা হতে পারে? সদস্যরা কীভাবে লাভবান হয়?

রাসেল টি আহমেদ: বর্তমানে ২ হাজার ৩০০–এর বেশি সহযোগী বা অ্যাসোসিয়েট, সাধারণ বা জেনারেল, অ্যাফিলিয়েট ও আন্তর্জাতিক সদস্য রয়েছে বেসিসের। সফটওয়্যার ও আইটিইএস নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো বেসিসের সদস্য হতে আবেদন করতে পারে। তবে এ জন্য ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে। বেসিস মূলত সরকারের সঙ্গে বাণিজ্য–সংশ্লিস্ট নীতিমালা নিয়ে কাজ করে। যার সুফল সদস্যরা ভোগ করে। বেসিসের সদস্য হলে সফটওয়্যার রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনা পাওয়া যায়। সফটওয়্যারভিত্তিক সরকারি টেন্ডারে অংশ নিতে বেসিসের সদস্য হওয়া বাধ্যতামূলক। এসবের পাশাপাশি সদস্যদের উন্নয়নে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বেসিস থেক। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণের সুযোগও পায় সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো।

তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জনশক্তি উন্নয়নে বেসিস কি কোনো ভূমিকা রাখে কিংবা বেসিসের ভূমিকা রাখার কোনো সুযোগ আসলে আছে কি?

রাসেল টি আহমেদ: তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য আমাদের বেসিস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিআইটিএম) নামের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। ১২ বছর ধরে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন পেশাদার ও স্বল্পমেয়াদি কোর্স পরিচালনা করছে কেন্দ্রটি। বিআইটিএম থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া কোনো শিক্ষার্থী বেকার নেই। ভবিষ্যতে বিআইটিএমকে আরও পরিসরে পরিচালনা করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রশিক্ষণের বিষয় হিসেবে বাজারে চলতি চাহিদা রয়েছে, এমন বিষয়কে বেছে নেওয়া হয়।

সম্পর্কিত পোস্ট

bn_BDবাংলা