ফরিদপুরে আদম বেপারীর প্রতারনা ঢাকতে চাঁদাবাজীর অভিযোগ

image_pdfimage_print
ফরিদপুর প্রতিনিধি –
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা সদর ইউনিয়নের লোহারটেক গ্রামের সামসুদ্দিন লস্করের ছেলে আদম বেপারী হাবিব লস্কর (৪৫) নিজের প্রতারনা ঢাকতে ভুক্তভোগী পরিবারের স্বজনদের নামে ফরিদপুর কোর্টে চাঁদাবাজীর মামলার অভিযোগ দিয়ে ভীতি সৃষ্টি করে চলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই আদমের হয়রানী ও অর্থ আত্মসাতের প্রতিবাদে শনিবার দুপুরে উপজেলা পরিষদের সামনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো ও তাদের স্বজনরা মিলে আদম বেপারীর বিচারের দাবী তুলে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো জেলা প্রশাসক ফরিদপুর, পুলিশ সুপার ফরিদপুর, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, চরভদ্রাসন ফরিদপুর ও অফিসার ইনচার্জ, (ওসি) চরভদ্রাসন থানায় স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। এ মানববন্ধন কর্মসূচীর সভাপতিত্ব করেন চরভদ্রাসন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আজাদ খান। ওই আদম বেপারীর প্রতারনা ও জনহয়রানীর চিত্র তুলে ধরে মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, বিশিষ্ট সমাজ সেবক আনোয়ার আলী মোল্যা, পাঞ্জু শেখ, শেখ ফজল ও লিটন খান প্রমূখ। জানা যায়, ওই আদম বেপারী দীর্ঘকাল সৌদী আরবে চাকুরী করে প্রায় দেড় বছর আগে বাড়ীতে ফেরার সময় অনেকগুলো ভিসা কপি সাথে নিয়ে সে দেশে আসে। এসব ভিসা দেখিয়ে গ্রাম গঞ্জের সরল প্রান জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে ৪/৫ লাখ করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে অনেককে বিদেশে পাঠিয়ে মাত্র তিন মাসের আকামা করে পরিবারটি নিঃস্ব হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আবার কেউ মোটা অংকের টাকা দিয়ে মাসের পর মাস ওই আদমের পিছে ঘুরেও বিদেশে যেতে পারে নাই বা তাদের টাকা আদৌ ফেরত পায় নাই। এসব ভুক্তভোগী পরিবারের মধ্যে উপজেলার বালিয়া ডাঙ্গী গ্রামের শেখ ইমরান হোসেন (৩০) ও মনিকোঠা গ্রামের শেখ পাঞ্জু হোসেন (৩৬) এ দু’জনের পাওনা টাকা নিয়ে প্রায় তিন মাস আগে এক সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নিচ তলায় অনুষ্ঠিত সালিশ বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন এলাকার গন্যমান্য শাহজাহান মোল্যা। উক্ত সালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ৭ সেপ্টেম্বর ক্ষতিগ্রস্থ শেখ পাঞ্জু হোসেনকে সাড়ে তিন লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার শর্ত থাকলেও আদম বেপারী পাওনা টাকা ফেরত দেয় নাই। ফলে ওই সালিশ বৈঠকে উপস্থিত স্বাক্ষীগন ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের স্বজনরা মিলে গত ১২ সেপ্টেম্বর উপজেলা সদরের দক্ষিন দিকে মেইন রোডের সাথে নজরুল ইসলামের দোকানের সামনে আদম বেপারীকে পেয়ে তারা ক্ষতিগ্রস্থ পাঞ্জু শেখের টাকা ফেরত চায়। এ সময় আদম বেপারীর সাথে সালিশবর্গের বাক বিতন্ডার একপর্যায়ে কিল-ঘুষির ঘটনা ঘটে। এরই জের¡ ধরে ওই আদম বেপারীর ভাই হায়দার লস্কর বাদী হয়ে ফরিদপুর কোর্টে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের স্বজনদের নামে একটি চাঁদাবাজী মামলার অভযোগ করেছে বলে জানা গেছে। একই সাথে গণমাধ্যমের ফেসবুকে আদম বেপারী হাবিব লস্করের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করে তাকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে একটি অনলাইন টিভির স্বাক্ষাতকারও প্রচার করা হয়। তাই শনিবার ক্ষতিগ্রস্থ ১০টি পরিবার জড়ো হয়ে আদম বেপারীর বিরুদ্ধে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
এ ব্যপারে চরভদ্রাসন থানার অফিসার ইনচার্জ মিন্টু মন্ডল জানান, “ হাবিব লস্করের উপর হামলার ব্যাপারে অত্র থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করে নাই”। তবে শনিবার ওই আদম বেপারী হাবিব লস্কর বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। সালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বালিয়া ডাঙ্গী গ্রামের শেখ ইমরান হোসেন এর বিষয়ে আমার কাছ থেকে যে ৯০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। সেই ইমরান হোসেন আজও সৌদী আরব দেশে কাজ করে চলেছেন। আর যাকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটেছে সেই শেখ পাঞ্জু হোসেন আদম অফিসের ফোনটি সময়মত ধরে নাই এবং তাদের নির্দেশমত কাজ করে নাই ফলে সে প্রায় এক বছর ধরে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে”।
মানববন্ধন কর্মসূচীর সভাপতি ও চরভদ্রাসন ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আজাদ খান জানান, “ আমার জানামতে আদম বেপারী হাবিব লস্কর শতাধিক লোকের কাছ থেকে ভিসা কপি দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
তিনি বলেন, হাবিব লস্কর বিদেশের নাম করে অর্থ আত্মসাতের বিরুদ্ধে আমার অফিসে ১৫টি লিখিত অভিযোগ রয়েছে। মাত্র একটি অভিযোগ সুরাহা করতে পেরেছি বাকীগুলো হাবিব লস্কর আমার নোটিশ অমান্য করে অফিসে হাজিরা দিতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। এ মানববন্ধনে অংশগ্রহনকারী ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মধ্যে উপজেলার দবিররদ্দিন প্রামানিকের ডাঙ্গী গ্রামের ফজল শেখের ছেলে বাদল শেখের কাছ থেকে দুই দফায় নগদ ওই আদম বেপারী নগদ ৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা, মনিকোঠা গ্রামের শেখ পাঞ্জু হোসেনের কাছ থেকে নগ ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, বালিয়া ডাঙ্গী গ্রামের শেখ জৈনদ্দিনের ছেলে শেখ লিটনের কাছ থেকে নগদ সাড়ে ৪ লাখ টাকা, ফাজেলখার ডাঙ্গী গ্রামের মৃত আইয়ুব খানের ছেলে আরিফ খানের কাছ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা, হাজীডাঙ্গী গ্রামের শেখ আবদুর রাজ্জাকের ছেলে ইউসুপ রানার কাছ থেকে নগদ সাড়ে ৪ লাখ টাকা, টিলার চর গ্রামের মৃত সাহেদ বিশ্বাসের ছেলে মামুন বিশ্বাসের কাছ থেকে নগদ ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ওই গ্রামের শেখ পারভেজের কাছ থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা, চরবিষ্ণুপুর গ্রামের হালিম ফকিরের ছেলে মামুন ফকিরের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ও বালিয়া ডাঙ্গী গ্রামের কাজেম মন্ডলের ছেে জাবেদ মন্ডলের কাছ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ওই আদম বেপারী হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

bn_BDবাংলা