বক্তৃতা দেওয়ার জন্য কাতার বিশ্বকাপে আমন্ত্রণ জানানো হয় ইসলাম ধর্ম বিষয়ক বক্তা জাকির নায়েককে। ওই কারণে ভারতীয়দের বিশ্বকাপ বয়কট করার আবেদন জানান বিজেপি মুখপাত্র স্যাভিও রডরিগেজ। তার মতে, জাকিরের মতো ব্যক্তিকে এহেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে বক্তব্য রাখার সুযোগ করে দেওয়ার অর্থ উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইকে রুখে দেওয়া।
ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় রয়েছে জাকির নায়েক। বিশ্বকাপ চলাকালীন নানা শহরে ঘুরে ভাষণ দেবেন তিনি। কাতারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেই বিবৃতি দিয়েছেন স্যাভিও। তিনি বলেছেন, “বিশ্বকাপ একটি আন্তর্জাতিক মঞ্চ।
সারা দুনিয়ার মানুষ এই টুর্নামেন্টের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্ল্যাটফর্মে জাকির নায়েককে বক্তৃতার সুযোগ দেওয়ার অর্থ তার ঘৃণা ছড়ানোর আদর্শকে সমর্থন করা।”
এখানেই না থেমে বিজেপি মুখপাত্র বলেছেন, ভারত সরকার ও দেশটির ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সকলে যেন এই মেগা টুর্নামেন্ট বয়কট করেন। বিশ্বকাপ দেখতে যারা কাতারে যাচ্ছেন, তারাও যেন খেলা না দেখেন। কারণ এই মঞ্চে জাকির নায়েকের মতো ব্যক্তিকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়। স্যাভিওর মতে, প্রত্যক্ষভাবে কোনো উগ্রবাদী কাজে যুক্ত না থাকলেও সংঘাত ছড়াতে জাকিরের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ভারত দীর্ঘ দিন ধরেই জাকিরকে খুঁজছে। ৫৭ বছরের জাকির ২০১৭ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় রয়েছে। ২০২০ সাল থেকে ভারতে তার ভাষণ দেওয়া নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়েছিল। তারও আগে ২০১৫ সালেই তার পাসপোর্ট বাতিল করে দেওয়া হয়।
২০১৬ সালে অবশ্য জাকিরকে দেখা যায় নিজেকে প্রবাসী ভারতীয় বলে দাবি করতে। কিন্তু তার জন্য ফুটবলের গ্রেটেস্ট শো অন আর্থকে বয়কট করে দেওয়া উচিত কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
সামাজিক মাধ্যমের বরাতে আল-আরাবিয়া জানায়, জাকির নায়েকের লেকচার প্রতিদিন চলবে। জাকির নায়েক এখন কাতারে আছেন বলে খবরে জানা গেছে। বিশ্বকাপ দেখতে আসা লাখো মানুষের মাঝে তার ভক্ত-অনুরাগীদের বড় একটি অংশ উপস্থিত থাকবেন বলে প্রত্যাশা রয়েছে। এ সময় তারা চাইলে ড. জাকির নায়েকের লেকচারও শুনতে পাবেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছে জাকির নায়েকের ভক্ত অনুরাগী। তরুণ প্রজন্ম ও প্রায় সব বয়সীদের মাঝে তিনি জনপ্রিয়। তিনি একজন ভারতীয় ইসলামি চিন্তাবিদ, ধর্মপ্রচারক, বক্তা ও লেখক যিনি ইসলাম ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে কাজ করেন। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। যেটি পিস টিভি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে থাকে। যার মাধ্যমে তার লেকচার প্রায় ১০কোটি দর্শকের নিকট পৌঁছে যায়। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন ধর্ম ও বস্তুগত বিষয়ের সঙ্গে ইসলামের তুলনামূলক ব্যাখ্যা ও আলোচনার মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান ড. জাকির নায়েক। বিজ্ঞান ও ইতিহাসের উদ্ধৃতি দিয়ে তার আলোচনাও শ্রোতাদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়। ড. জাকির নায়েকের অন্যতম জনপ্রিয় থিম হলো পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থ ও বিজ্ঞানের আলোকে কোরআনকে যাচাই করা।
উল্লেখ্য, বিশ্বকাপ উপলক্ষে নতুনভাবে সেজেছে কাতার। আরব ও ইসলামী স্থাপত্যশৈলীকে ধারণ করে প্রস্তুত করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ৮টি স্টেডিয়াম। রাজধানী দোহাসহ বিভিন্ন স্থানে সাঁটানো হয়েছে মহানবী (স.)-এর হাদিস সম্বলিত ম্যুরাল। সামাজিক শিষ্টাচার নিয়ে মহানবী (স.)-এর প্রজ্ঞাপূর্ণ বাণীগুলো লেখা হয়েছে আরবি ও ইংরেজি ভাষায়। অর্থপূর্ণ হাদিসগুলো চলার পথে দর্শক ও পাঠকদের মনে তৈরি করবে ভিন্নরকম অনুভূতি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব ছবি ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে।