উত্তেজনা বাড়াতে চায় না ইরান-ইসরায়েল

image_pdfimage_print

ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় শহর ইস্পাহানের কাছে সামরিক ঘাঁটিতে ইসরায়েলি ড্রোন হামলার চেষ্টা মূলত প্রতিশোধের অংশ। কারণ, গত ১৩ এপ্রিল অন্তত ৩০০ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইরান। ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিশ্বনেতারা শঙ্কিত হলেও শুক্রবারের এই হামলার চেষ্টায় সামরিক স্থাপনার কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। অন্যদিকে, নতুন করে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি তেহরান। যদিও ইরানের কর্মকর্তারা বলে আসছিলেন, ইসরায়েল হামলা চালালে এক সেকেন্ডের মধ্যেই কঠিন জবাব দেওয়া হবে। দুই দেশের কর্মকর্তাদের ভাষ্যেই পরিষ্কার, নতুন করে উত্তেজনা বাড়াতে চায় না ইরান ও ইসরায়েল। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের

টেলিভিশনের সংবাদ ও উভয় দেশের কর্মকর্তারা শুক্রবারের ওই হামলাকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা হামলাকে উত্তেজনা বৃদ্ধি এড়াতে পরিকল্পিত একটি সীমিত জবাব হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ইসরায়েলের মর্নিং নিউজ শোতে বিশ্লেষকরা বলেছেন, এই হামলায় ইরানের সামরিক স্থাপনাগুলোতে উল্লেখ করার মতো কোনো ক্ষতি করতে পেরেছে বলে মনে হচ্ছে না।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়, ইসফাহানে সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা নিরাপদ রয়েছে। হামলার চেষ্টাকে ‘বড় কিছু নয়’ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে খবরে।

এদিকে ইরানের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত কিছু ব্যক্তিসহ দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা ইসরায়েলের এমন হামলার চেষ্টাকে উপহাস করে চলেছেন। শুক্রবার ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কোনো এক মেয়ে বিশাল আবাসিক ভবনে কাগজের তৈরি বিমান ছুড়ে মারছে। এ সময় এটিকে ইসরায়েলি হামলার সঙ্গে তুলনা করছে সে। কাগজের ওই বিমান যখন ভবনে আঘাত করে, তখন সে হাসছে।

ইরানের কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসফাহানের কাছে একটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে হামলা হয়েছে। কিন্তু ইস্পাহানের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল সিয়াভাশ মিহানদুস্ত রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেছেন, শুক্রবার সেখানে হওয়া বিস্ফোরণ ইসরায়েলি হামলার কারণে নয়। বরং তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘উড়ন্ত বস্তু’ গুলি করে ভূপাতিত করায় ওই শব্দ হয়েছে।

ইসরায়েল প্রতীকী এ হামলার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও দেশটির কিছু লোক আনন্দ-উল্লাস করেছেন। তাদের মধ্যে ডানপন্থি দলগুলোর নির্বাচিত নেতারাও ছিলেন। লিকুদ পার্টির এমপি ট্যালি গোটলিভ এক্সের পোস্টে লিখেছেন, ‘একটি সকাল, যেখানে আমাদের মাথা গর্বিত। ইসরায়েল শক্তিশালী দেশ।’ তবে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন নিজেই ইরানে কথিত ইসরায়েলি হামলাকে ‘দুর্বল’ বলে অভিহিত করে তাদের উচ্ছ্বাসে পানি ঢেলে দিয়েছেন।

দ্বন্দ্বের শুরু যেভাবে

নতুন করে হামলা-পাল্টা হামলা মূলত দুই দেশের পুরোনো বিরোধের কারণে। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরায়েলকে ‘ছোট শয়তান’ এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ইরান ডাকে ‘বড় শয়তান’ বলে। ইসরায়েলের অভিযোগ, ইরান ‘সন্ত্রাসী’ গোষ্ঠীকে অর্থায়নের পাশাপাশি ইহুদি বিরোধিতাকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে হামলা চালায়।
ইরান ও ইসরায়েলের সম্পর্ক ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল। তবে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে দেশটির ক্ষমতায় আসার পর সম্পর্ক খারাপ হয়। শুরুর দিকে ফিলিস্তিনকে ভাগ করে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের বিরোধিতা করেছিল ইরান। কিন্তু মিসরের পর তেহরান আবার স্বীকৃতিও দেয়। সেই সময় মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান মিত্র ছিল ইরান।

১৯৭৯ সালে পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে যায়। খোমেনি বিপ্লবের মাধ্যমে ইসরায়েল ও পাশ্চাত্য সমর্থিত রাজবংশ উৎখাত করে ইরানে ইসলামী প্রজাতন্ত্র গঠন করেন।

এই নতুন সরকারের পরিচয়ের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ইসরায়েলের সাম্রাজ্যবাদ প্রত্যাখ্যান করা। এরপর নতুন সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, ইসরায়েলের নাগরিকদের পাসপোর্টের বৈধতা বাতিল ও তেহরানে ইসরায়েলি দূতাবাস দখল করে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) কাছে হস্তান্তর করে। ওই সময় পিএলও ইসরায়েলি সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্বে ছিল।

সম্পর্কিত পোস্ট

bn_BDবাংলা