ইসলামে রাতে জলদি ঘুমানোর তাগাদা কেন?

image_pdfimage_print

সুস্থতার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে ইসলাম। স্বাস্থ্য ও সুস্থতা নষ্ট হয়—এমন কাজ শরিয়তে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। যেমন নেশা জাতীয় দ্রব্য হারাম ঘোষণা আবার পরিমিত ও সময়ানুগ খাবারগ্রহণের প্রতি উৎসাহিতকরণ ইত্যাদি সবকিছুর পেছনে যে উদ্দেশ্য কাজ করে সেটি হলো বান্দার সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতা। একইভাবে জলদি ঘুমানো এবং ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠা সুস্থতা ও নানাবিধ বরকত লাভের উপায়। রাতে জলদি ঘুমাতে যাওয়া আর সকালে জলদি ঘুম থেকে উঠা সুস্বাস্থ্য, সম্পদ আর জ্ঞানের পূর্বশর্ত। এ কথা সর্বজনস্বীকৃত। বিষয়টি কোরআন ও হাদিসে আরও চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ঘুমের উপযোগী সময় রাত। এজন্য মহান আল্লাহ রাতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং শীতল করে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং তিনিই তোমাদের জন্য রাতকে করেছেন আবরণস্বরূপ, বিশ্রামের জন্য তোমাদের দিয়েছেন ঘুম।’ (সুরা ফুরকান: ৪৭)

রাসুলুল্লাহ (স.) এশার নামাজ এক-তৃতীয়াংশ রাত পরিমাণ দেরি করে পড়া পছন্দ করতেন, আর এশার আগে ঘুমানো এবং এশার পর না ঘুমিয়ে গল্পগুজব করা অপছন্দ করতেন। (সহিহ বুখারি: ৫৯৯) রাতে দেরি করে ঘুমানো নানা রোগ-ব্যাধির কারণ। যুক্তরাজ্যের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. পিরেঞ্জ লেভি বলেন, রাত জাগার বদ-অভ্যাস যারা গড়ে তুলেছে, তাদের ৯০ শতাংশই মানসিক রোগের শিকার। ৩০ শতাংশে থাকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। এছাড়া স্নায়বিক সমস্যা থেকে শুরু করে অন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।

অথচ স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়ার এখতিয়ার ইসলাম কাউকে দেয়নি। ওয়াহাব (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘নিশ্চয় তোমার ওপর তোমার শরীরের হক আছে।’ (বুখারি: ৫৭০৩; তিরমিজি: ২৩৫০) । তাছাড়া আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য আর ইবাদতের জন্য প্রয়োজন শারীরিক শক্তি ও সুস্থতা। একজন সুস্থ মানুষই পারে সঠিকভাবে ইবাদত করতে। এজন্য শারীরিক সুস্থতা হচ্ছে আল্লাহর নেয়ামত। নবী করিম (স.) বলেন, ‘মানুষকে সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতার চেয়ে শ্রেষ্ঠ নেয়ামত আর কিছু প্রদান করা হয়নি।’ (নাসায়ি: ১০৭২ )

সুতরাং শরীরের হক নষ্ট না করার স্বার্থে এবং সুস্থতা ধরে রাখার জন্য রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া উচিত। মুমিন বান্দার জন্য জলদি ঘুমানোর সবচেয়ে বড় উপকার হলো- ভোরে আল্লাহর ইবাদত ও জিকির করার সুযোগ। তাহাজ্জুদ, ফজরের নামাজ জামাতে পড়তে অসুবিধা হয় না রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে গেলে। হাদিস থেকে জানা যায়, দিনের প্রথমাংশকে আল্লাহ তাআলা বরকতপূর্ণ করেছেন। এই বরকত লুফে নেওয়া যায় রাতে দ্রুত ঘুমালে। ফজরের নামাজের পর সকালের ঘুম জীবন-জীবিকার বরকত নষ্ট করে দেয়। দিনের শুরুটা ঘুমে কেটে যাওয়ার ফলে দিন সংকীর্ণ হয়ে যায়। কাজের সময় ও পরিধি কমে যায়। ব্রেইনের স্বাভাবিক গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়। পক্ষান্তরে ফজরের নামাজ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত এবং ইশরাক নামাজ আদায়ের মাধ্যমে দিনের কার্যক্রম শুরু করলে মহান আল্লাহ সারা দিনের জন্য বান্দার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ফলে দিনটি হয়ে ওঠে বরকতময়।

নবীজি (স.) আল্লাহর কাছে রকে বরকতময় করার জন্য দোয়া করেছেন। সাখর আল-গামিদী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতকে ভোরের বরকত দান করুন।’ তিনি কোনো ক্ষুদ্র বা বিশাল বাহিনীকে কোথাও প্রেরণ করলে দিনের প্রথমভাগেই প্রেরণ করতেন। বর্ণনাকারী সাখর (রা.) একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তাঁর পণ্যদ্রব্য দিনের প্রথমভাগে পাঠানোর ফলে অনেক সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন। (আবু দাউদ: ২৬০৮)

ভোরবেলাকে খুবই গুরুত্ব দিতেন পূর্ববর্তীরা। যারা ভোরের বরকত নিয়ে আলসেমি করত তাদের ব্যাপারা তাঁরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলতেন। উরওয়া (রহ.) বলেন, ‘আমি যখন কারো সম্পর্কে শুনি, সে ভোরবেলা ঘুমায় তখন তার প্রতি আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।’ (মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা: ৫/২২২)
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) তাঁর এক সন্তানকে ভোরবেলা ঘুমাতে দেখে বলেছিলেন, ‘ওঠো, তুমি কি এমন সময়ে ঘুমিয়ে আছ, যখন রিজিক বণ্টন করা হচ্ছে?’ (জাদুল মাআদ: ৪/২৪১) । অতএব প্রমাণ হলো- সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতা, বরকতলাভ, ভোরের ইবাদত সবকিছুর অন্যতম শর্ত রাতে জলদি ঘুমানো। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রাতে জলদি ঘুমানোর তাওফিক দান করুন। কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পর্কিত পোস্ট

bn_BDবাংলা