প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রামের অধীনে দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আইসিটি ইন এডুকেশন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির ব্যবহার, শিক্ষকদের ডিজিটাল নানা উপকরণ তৈরি, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম পরিচালনার জন্য দেওয়া হচ্ছে এ প্রশিক্ষণ।
প্রশিক্ষণের ব্যাপ্তি ১৪ দিন। বিভিন্ন জেলার প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোয় (পিটিআই) এ প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে আমাদের দক্ষ প্রশিক্ষকেরা প্রশিক্ষণার্থীদের কম্পিউটারের নানা ব্যবহার থেকে শুরু করে এমএস ওয়ার্ড, পাওয়ারপয়েন্ট ও টিপিসিকে, এক্সেল, ইন্টারনেট ও অনলাইন নেটওয়ার্কিং ও লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, কোডিং পর্যন্ত ধারণা দেন এবং হাতে–কলমে শেখান। এ প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামটি যদি শিক্ষকেরা সঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারেন, তবে একজন আধুনিক ও মানসম্মত শিক্ষক হয়ে ওঠার সুযোগ তিনি পাবেন।
১৪ দিনের প্রশিক্ষণ কোর্সটি সম্পন্ন করার পর একজন শিক্ষক পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের শিখন উপযোগী কনটেন্ট বা উপকরণ খুব সহজেই তৈরি করতে পারবেন। এ ছাড়া ব্লক কোড ব্যবহার করে অ্যানিমেশন ও গেম তৈরি করতে পারবেন, যা শিশুদের সামনে উপস্থাপন করা হলে শিশুদের শেখার চাহিদা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। ব্লক প্রোগ্রামিংগুলো প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে–কলমে শেখানো গেলে, তারা প্রোগ্রামিংকে আরেকটি ভাষা হিসেবেই শিখতে পারবে, যা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগে শিশুকে কয়েক ধাপ এগিয়ে রাখবে। প্রোগ্রামিং তখন তার কাছে কঠিন কিছু মনে হবে না, শিশু খেলতে খেলতে শিখবে। শিশুর মানসিক বিকাশ সাধনে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
সরকার যে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের এ প্রশিক্ষণ প্রদান করছে, সে উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব। কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গ্রামের স্কুলগুলোয় কিছু প্রতিবন্ধকতা পরিলক্ষিত হয়। সরকার ইতিমধ্যে প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রজেক্টর, ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগ সরবরাহ করেছে। কিন্তু দক্ষ শিক্ষকদের অভাবে বছরের পর বছর এসব মূল্যবান উপকরণগুলো অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। অনেক সময় তা নষ্টও হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া স্কুলগুলোয় মাল্টিমিডিয়ার উপকরণগুলো যথাযথ ব্যবহার করা হচ্ছে কি না বা শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তির ছোঁয়া পাচ্ছে কি না, প্রশিক্ষিত শিক্ষকেরা প্রশিক্ষণ শেষে তাঁর জ্ঞান শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন কি না, তা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনিটর করার প্রয়োজন অনুধাবন করি। মনিটরিং কার্যক্রম যথাযথ হলে এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সুফল পুরো জাতি পাবে, অন্যথায় সেটা কাগজে–কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে।