অফিসে মানসিক চাপ কমাবেন যেভাবে

image_pdfimage_print

কর্মক্ষেত্রে বন্ধুসুলভ পরিবেশ সবাই আশা করে। কিন্তু কখনো কখনো কাজের পরিবেশে বিঘ্ন ঘটে। নিজের কোনো দায় ছাড়াও কর্মপরিবেশ বিষয়ে উঠে। এতে করে মনের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়।

শরীর ও মন এই দুই নিয়েই মানুষ। ব্রেইনের বিভিন্ন ধরনের সার্কিট, হরমোন, কেমিক্যালস, মেসেঞ্জার ও নিউরোনাল কার্যকলাপের বহিঃপ্রকাশকে মন বলা যায়। ২০২০ সালে আমেরিকায় অফিস কর্মীদের মাঝে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, বিষণ্নতা ও উদ্বেগজনিত কারণে তাদের কর্মক্ষমতা হারায় বছরে প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার। দেশটির অফিস কর্মীদের ১০ ভাগ কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। ইউরোপে ২৫ ভাগ অফিস কর্মী উদ্বেগ ও ডিপ্রেশনে ভুগেন। আমাদের দেশে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১৬.০১ ভাগ মানুষ মানসিক সমস্যায় ভুগছে।

২০১৪ সালে ২০-২৯ বছর বয়সি গার্মেন্টস কর্মীদের মধ্যে পরিচালিত এক সমীক্ষায় জানা যায়, পোশাকর্মীদের মধ্যে ৪৩ ভাগ তাদের উদ্বেগ ও বিষণ্নতার জন্য তাদের ওয়ার্কপ্লেসকে দায়ী করেছে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আহসান উদ্দিন আহমেদ।

চাপ বুঝবেন কীভাবে

কোনো অফিস কর্মীর আচরণ ও ব্যবহারে হঠাৎ কোনো পরিবর্তন এলে তা মানসিক কোনো রোগের কারণে হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে-

হঠাৎ কেউ চুপচাপ হয়ে গেলে বা কথা বলা কমিয়ে দিলে, অফিসে আসা ও যাওয়ার সময়সূচি মেনে না চললে, নিজের কাজ যথাসময়ে সম্পাদন করতে না পারলে, সহকর্মীদের সঙ্গে চেচামেচি বা উত্তেজিত আচরণ করলে, কোনো কাজে মনোযোগ দিতে না পারলে, হতাশা বা মৃত্যুর কথা সহকর্মীদের সঙ্গে শেয়ার করলে, পোশাক-পরিচ্ছেদ অগোছালো থাকলে-এগুলো কোনো ধরনের মানসিক সমস্যার জন্য হতে পারে। এ অবস্থায় অফিস ম্যানেজমেন্ট বা সহকর্মীরা এ কর্মীকে সহানুভূতি প্রকাশ করবে প্রয়োজনে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে বলবেন।

অফিসে মানসিক চাপ হওয়ার কারণ

* সহর্কমীদের কাছে যথাযথ বা সম্মানসূচক আচরণ না পেলে।

* অফিসে কাজের চাপ বেশি থাকলে।

* কাঙ্ক্ষিত মানে অর্থনৈতিক প্রণোদনা বা প্রমোশন না পেলে।

কিছু কিছু পেশার ধরন এমনিতেই মানসিক চাপের কারণ। যেমন-সার্জন, মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ, ট্রাফিক পুলিশিং, আর্মি, নাইট গার্ড ইত্যাদি। এ ব্যক্তিরা যদি স্ট্রেস বা মানসিক চাপের সঙ্গে সমন্বয় করতে না পারলে মেন্টাল অ্যাসেসমেন্ট প্রসিডিউর বা কাউন্সেলিং-এর শরণাপন্ন হতে হবে। নতুবা পেশা পরিবর্তন করতে হবে।

অফিসে মানসিক চাপ মোকাবিলা করবেন যেভাবে-

* এক সঙ্গে অনেক কাজ না নিয়ে অল্প অল্প করে কাজ শেষ করুন।

* অফিসে আসা ও যাওয়ার নির্দিষ্ট সময় মেনে চলুন।

* সহকর্মীদের সঙ্গে যথাযথ ও সম্মানজনক আচরণ করুন।

* অফিসের দায়িত্ব বা কাজ অফিসেই শেষ করুন।

* পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন।

* প্রতিদিন নিজেকে একান্তে সময় দিন।

* অফিসে মোবাইল ও যে কোনো ডিভাইসের ন্যূনতম ব্যবহার করুন।

* একটানা কাজ না করে একটু বিরতি দিয়ে কাজ করুন।

* তৈলাক্ত, ভাজা-পোড়া খাবার না খেয়ে তাজা শাকসবজি ও ফল নিয়মিত খান।

* প্রতিদিন শরীর চর্চার অভ্যাস আপনাকে সামগ্রিকভাবে সুস্থ রাখবে।

* যে কোনো ধরনের নেশা আপনার মানসিক চাপ বাড়াবে।

* অফিসের কাজ টিম-ওয়ার্ক করে করুন।

* আপনার সম্পাদিত কাজের বিবরণ আপনার ম্যানেজারকে সরাসরি প্রকাশ করুন। প্রয়োজনে কাজের বিবরণ লিখে রাখতে লগ বই ব্যবহার করুন।

সম্পর্কিত পোস্ট

bn_BDবাংলা